হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এই আদেশ দেন।
১১ মার্চ হাইকোর্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের বিচার দেয়া আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয়। রায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১ শিশুর সাজা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই শিশুদের মধ্যে মুক্তি না পাওয়া শিশু অন্য কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতেও বলা হয়।
হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।। সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি।
এ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত হওয়ার কারণে ১২ বছরের নিচে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে।
তিনি বলেন, এখন আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করব। রায়ের কপি পাওয়ার পর এ আবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর একটি পত্রিকায় ‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ওইদিনই হাইকোর্টের নজরে আনেন ব্যারিস্টার আবদুল হালিম।
এরপর হাইকোর্ট মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ডিত দুই শিশু সংশোধন কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের নিচের শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া বাকিদের ছয় মাসের জামিন দেয়। তারা সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে জামিননামা দেয়ার পর মুক্তি পাবে। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের দণ্ড প্রদান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। এরপর বিভিন্ন সময়ে ওই সব শিশুকে মুক্তি দেয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা একই সঙ্গে প্রসিকিউটর ও বিচারকের ভূমিকায় থাকেন। নথি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ৩২ মিনিটে ২৩ শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। এত অল্প সময়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে এভাবে জবানবন্দি গ্রহণ একেবারেই সম্ভব নয়। তাই মোবাইল কোর্ট আইনের সংশোধন এবং এ ধরনের কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেয়াটা জরুরি। পাশাপাশি শিশুদের মোবাইল কোর্ট কর্তৃক যে কোনো দণ্ড দানের প্রচেষ্টা এখন থেকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
ব্যারিস্টার আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫২ ধারায় বলা আছে শিশুরা যদি এ আইনে অপরাধ করে, তাহলে এর বিচার হবে শিশু আইনে। তাই র্যাবের তিন ম্যাজিস্ট্রেটের সাজা দেয়ার কার্যক্রম অমানবিকই নয়, সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। কোনো শিশুকেই মোবাইল কোর্ট কোনো ধরনের দণ্ড দিতে পারবেন না। ১২১ শিশু অন্য কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে তাদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।