কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে চলা অচলাবস্থার ঘটনায় জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরানো ও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোপুরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে আক্রমণ, হুমকি বা চাপ না দিয়ে ঘটনাবলীতে পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকে অবশ্যই জনগণের তথ্য অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আটক, জোরপূর্বক গুম, হত্যা বা অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের সংখ্যা পূর্ণ স্বচ্ছতা ও যথার্থতার পাশাপাশি প্রমাণের সঙ্গে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
আরও পড়ুন: মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তে বাংলাদেশকে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা
সতর্ক করে তারা বলেন, বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি প্রত্যাহারে আদালতের সাম্প্রতিক রায় সঠিক পথ নির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তা যথেষ্ট হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সরকারকে দায় নিতে হবে এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে তদন্তের একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা হলেন- মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংহতিবিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া বেইলিয়েট; গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রচারবিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ জর্জ ক্যাটরুগালোস; বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিঞ্জ; বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত মার্গারেট স্যাটার্থওয়েট; মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান; উন্নয়নের অধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক সূর্যদেব; শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদক ফরিদা শহীদ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার অধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক জিনা রোমেরো; মানবাধিকার রক্ষীদের পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর; চেয়ার প্রতিবেদক আউয়া বাল্ডে; ভাইস চেয়ার গ্যাব্রিয়েলা সিট্রোনি; গ্রাসিনা বারানভস্কা এবং জোরপূর্বক বা অনিচ্ছাকৃত অন্তর্ধান সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ আনা লরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ।
আরও পড়ুন: চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করেছে ভারত
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েবভিত্তিক মোবাইল ফোন যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সংবাদ পরিবেশন ও তথ্যে প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
এই সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগও বিঘ্নিত হয়েছে। কার্যত বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এরপর ২৩ জুলাই কিছু কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।