রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ছয়টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করে মস্কো বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক হাজার দিনের মধ্যে কিয়েভের প্রথম এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার এটি।
ব্রায়ানস্কে এটিএসিএমএস নামে পরিচিত সেনাবাহিনীর কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার।
রাশিয়ার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ভারী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার পর নিজেদের পরমাণু নীতি সংশোধন করেছে মস্কো। আর এদিনই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালানোর অভিযোগ করল তারা।
এর ফলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ বা এসব দেশ সমর্থিত যেকোনো দেশের ওপর মস্কোর সম্ভাব্য পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার দ্বার উন্মুক্ত হলো।
এই দাবি সত্যি হলে তা ইউক্রেনসহ বিশ্বজুড়ে সংঘাতের একটি উদ্বেগজনক নতুন দিক উন্মোচন করবে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের পর রাশিয়ার পরমাণু নীতি সংশোধন
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এই যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে এবং কীভাবে এর অবসান সম্ভব, তা নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা ছড়াল।
হোয়াইট হাইসে প্রবেশের পর যত শিগগির সম্ভব, যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি, ইউক্রেনকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, তারও সমালোচনা করেছেন তিনি।
বিপুল সম্পদের কারণে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এই যুদ্ধ রাশিয়া বা ইউক্রেন কারও পক্ষেই আর বেশি দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
একদিকে সীমান্তের অন্তত ১ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে তীব্র চাপের মধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকরা রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে।
সোমবার মধ্যরাতে ব্রায়ানস্কে রাশিয়ার একটি অস্ত্র গুদামে হামলা চালানোর দাবি করে ইউক্রেন। অবশ্য কী ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ‘প্রস্তুত’ পুতিন
রুশ বার্তা সংস্থাগুলোতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, (রাশিয়ার) সামরিক বাহিনী পাঁচটি এটিএসিএমএস ভূপাতিত এবং আরও একটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে নিচে পড়ায় আগুন লেগে যায়, তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে কোনো পক্ষের দাবিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
এর আগে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি আবাসিক এলাকায় রুশ হামলায় এক শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। তার আগে, সোমবার রাতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে শাহেদ ড্রোনের হামলায় দুই শিশুসহ ১১ জন আহত হয়েছে বলে জানায় কিয়েভ।
রোববার ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় সুমির একটি আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে ১১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ধারাবাহিক বিমান হামলা প্রমাণ করে, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহী নন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতিটি নতুন হামলা পুতিনের আসল উদ্দেশ্যকেই নিশ্চিত করে। তিনি চান যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। শান্তির কথা তার কাছে আকর্ষণীয় নয়। বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই রাশিয়াকে ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করতে হবে।’