বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ইতালির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার ফলে সৃষ্ট ভূমিধস জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি চরম আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট একটি বন্যা, বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় প্রায়ই যা ঘটছে।
এমিলিয়া-রোমাগনার উপকূলীয় অঞ্চলে দুবার বন্যা আঘাত হেনেছে। প্রথমে দুই সপ্তাহ আগে ভারী বৃষ্টির কারণে রাতারাতি নদীর তীর উপচে পড়েছিল, তারপরে এই সপ্তাহের প্লাবনে ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং বিলিয়ন পরিমাণ ক্ষতি হয়।
প্রবল আঘাত হানা এমিলিয়া-রোমাগনা অঞ্চল বিশেষভাবে নাজুক। অ্যাপেনাইন পর্বত ও অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের অর্ধেক হয়েছে।
ইতালির ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের জলবায়ু বিজ্ঞানী আন্তোনেলো পাসিনি বলেছেন, একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা হলো ‘প্রতিবছর সামগ্রিকভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে তবে বর্ষাকালের স্থায়ীত্ব কমছে। ফলে যে কয়দিন বৃষ্টি হয়, তখন মুষলধারে বর্ষণ হয়।’
শীতের মাসগুলোতে গড় থেকে কম তুষারপাতের কারণে ইতালির উত্তরাঞ্চল দুই বছর খরাযর মুখে পড়ছে।
আল্পস, ডলোমাইটস ও অ্যাপেনিনিস থেকে গলে যাওয়া তুষার গলা পানিতে সাধারণত বসন্ত ও গ্রীষ্মের মধ্যবর্তী সমেয়ে ইতালির হ্রদগুলো পূর্ণ থাকে। যা দিয়ে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া হয় এবং পো ও অন্যান্য প্রধান নদী ও উপনদীগুলোকে প্রবাহমান রাখে।
পাসিনি বলেন, পাহাড়ে স্বাভাবিক তুষারপাত না হওয়ায় সমতল ভূমি শুকিয়ে গেছে এবং নদীর তলদেশ, হ্রদ ও জলাধারগুলো কমে গেছে। বৃষ্টি হলেও নদী-উপনদীগুলো আগের রূপে ফিরছে না, কারণ মাটি ‘শুষ্ক’ হয়ে আছে এবং বৃষ্টি কেবল মাটির ওপর দিয়ে গড়িয়ে সমুদ্রে চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘চরম বৃষ্টিপাত খরা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারছে না, কারণ উত্তর ইতালিতে বৃষ্টির চেয়ে আল্পসে সঞ্চিত তুষার খরা কমাতে বেশি কার্যকর। এবং গত দুই বছরে খুব কম তুষারপাত হয়েছে।’
দেশটির নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রী নেলো মুসুমেসি বলেছেন, ভূমধ্যসাগরে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোকে নতুন বাস্তবতা হিসেবে ইতালিয়দের মানিয়ে নিতে হবে এবং দেশব্যাপী বন্যা সুরক্ষাব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
মুসুমেসি নেপলসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ইসচিয়ায় শেষ একটি প্রচণ্ড ঝড় ও ভূমিধসের উল্লেখ করেছেন, যাতে ১২ জন নিহত হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ‘কিছুই ঘটছে না বলে আমরা ভান করতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু পরিবর্তন করতে হবে, পানিনির্ভর অবকাঠামোতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে, প্রকৌশল পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে।’
তিনি বলেন, দুই ডজন নদীর তীর উপচে সৃষ্ট বন্যার কারণে পুরো শহরগুলো কাদাপানিতে তলিয়ে গেছে, এ অবস্থা প্রতিরোধের জন্য এই পরিবর্তনগুলো জরুরি।
আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে ইতালি আসার পথে নিহত ৭ অভিবাসীর পরিচয় শনাক্ত
মুসুমেসি বলেন, এগিয়ে যাওয়ার মূল বিষয় হলো প্রতিরোধ, তবে ব্যয়সাপেক্ষে বলতে হবে এটা সহজসাধ্য কোনো কাজ নয়।
তিনি স্কাই টিজি২৪ কে বলেছেন, ‘আমরা প্রতিরোধপ্রবণ জাতি নই। আমরা প্রতিরোধ করার চেয়ে পুনর্নির্মাণ করতে চাই।’
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী গ্যাবে ভেচ্চি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘অনেক জায়গায় ঘটনাগুলোকে বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি কিছু বলে মনে হচ্ছে।
২০২১সালে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক প্যানেল সম্পর্কিত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল বলেছিল যে এটি ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য’ যে মানুষের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আরও ঘন ঘন এবং তীব্র আবহাওয়ার সংঙ্কট তৈরি করেছে।
প্যানেলটি তাপমাত্রা বৃ্দ্ধিকে এর সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ বলে অভিহিত করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ‘১৯৫০- এর দশকের তুলনায় অনেক বেশি রেকর্ড বৃষ্টিপাত বর্তমানে সাধারণ হয়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন: ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলারডুবিতে ফরিদপুরের ৪ যুবক নিখোঁজ