মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও ইরান গত বছরের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় মারাত্মক সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। শুক্রবার অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটি।
মিজান নামের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইটে অভিযুক্ত মজিদ কাজেমি, সালেহ মিরহাশেমি ও সাঈদ ইয়াঝুবির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা ঘোষণা করেছে, তবে কীভাবে কার্যকর করেছে তা জানায়নি।
কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে গত নভেম্বরে তারা ইস্ফাহানে এক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আধাসামরিক বাসিজ গ্রুপের দুই সদস্যকে হত্যা করেছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, ওই তিনজনকে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে তাদেরকে টেলিভিশনে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরে ২২ বছর বয়সী নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ‘কঠোর ইসলামিক ড্রেস কোড’ লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ আটক করেছিল।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের অভিযোগে আরেক ইরানী বন্দীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরানে শাসনকারী ধর্মতন্ত্রকে উৎখাত করার দাবিতে দ্রুত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিক্ষোভ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে,যদিও এখনও বিক্ষিপ্তভাবে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালু রয়েছে।
এরমধ্যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারীর বাধ্যতামূলক ইসলামিক হেডস্কার্ফ (হিজাব) পরতে অস্বীকার করার দাবি অন্যতম।
বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে ইরান মোট সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে যে তারা (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা সাতজন) বাদেও আরও কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গোপন রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আদালতে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
শুক্রবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া তিনজনের বিষয়ে ইরানের নিউইয়র্কভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক হাদি ঘাইমি বলেন, ‘প্রসিকিউশন জোরপূর্বক 'স্বীকারোক্তি'র ওপর নির্ভর করে তাদের শাস্তির রায় ঘোষণা করে, যেগুলো ছিল অস্পষ্ট। যাতে বোঝা যায় এটি ছিল একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।’
সংস্থাটি বলেছে যে কাজেমি তার একজন আত্মীয়কে ফোন করে বলেছিল যে কর্তৃপক্ষ তার পায়ে চাবুক দিয়ে ও একটি স্টান বন্দুক ব্যবহার করে নির্যাতন করেছে এবং তাকে যৌন নিপীড়নের হুমকি দিয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও মামলাগুলোর সমালোচনা করেছে।
ইরানের জন্য নিযুক্ত মার্কিন দূত রবার্ট ম্যালি তিনজনের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা করে এটিকে ‘সমস্ত ইরানিদের মানবাধিকার ও মৌলিক মর্যাদার প্রতি অবমাননা’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন: ইরানে অস্কারজয়ী সিনেমার অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার
তিনি বলেন, বোঝা যাচ্ছে যে সরকার ‘বিক্ষোভ থেকে কিছুই শিখেনি।’
ম্যালি বৃহস্পতিবার টুইট করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জনগণের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমরা ইরানি শাসকদের বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরতে এবং মোকাবিলা করতে আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করছি।’
কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যসহ ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১৯ হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; যদিও অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ইরান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফাঁসি কার্যকরকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। ২০২২ সালে কমপক্ষে ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, আগের বছরে সেই সংখ্যাটি ছিল ৩৩৩ জন।
দেশটিতে মাদকদ্রব্য আইন লঙ্ঘন,‘আল্লাহর সঙ্গে বিরোধীতা’ এবং ‘পৃথিবীতে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেওয়ার’ অস্পষ্ট কিছু অভিযোগসহ নানা অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বৃদ্ধির সমালোচনা করেছে জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীরা।
আরও পড়ুন: ইরান ইস্যুতে জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান বাংলাদেশের সারা হোসেন