পবিত্র কোরআন শরীফকে অবমাননা করায় পাকিস্তানের একজন খ্রিস্টানের বাড়ি ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা। এসময় গির্জায় অগ্নিসংযোগসহ আরও বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার দেশটির পুলিশ ও স্থানীয়রা এই তথ্য জানিয়েছেন।
সহিংসতার মাত্রা সরকারকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে বাধ্য করেছে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশের ফয়সালাবাদ জেলার জরানওয়ালায় এই ঘটনা ঘটে। ওই এলাকায় বসবাসকারী কিছু মুসলমান দাবি করেন, তারা রাজা আমির নামের স্থানীয় একজন খ্রিস্টান এবং তার বন্ধুকে কোরআনের একটি পাতা ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দিতে এবং কোরআনের অন্যান্য পৃষ্ঠায় অপমানজনক মন্তব্য লিখতে দেখেছেন।
পুলিশ প্রধান রিজওয়ান খান বলেন, এতে স্থানীয় মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। জনতা জড়ো হয়ে একাধিক গির্জা এবং বেশ কয়েকটি খ্রিস্টান বাড়িতে আক্রমণ করে আসবাবপত্র এবং অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রী পুড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
পুলিশ শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে ফাঁকা গুলি চালায় এবং মুসলিম আলেম ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সহায়তায় হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করার আগে লাঠিচার্জ করে। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, তারা সমস্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করার প্রয়াসে অভিযান শুরু করেছে। কয়েক ডজন দাঙ্গাবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা বিলাল মেহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আমিরকেও খুঁজছেন, যিনি জনতার হাত থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে গেছেন। তিনি কোরআনকে অবমাননা করেছেন কিনা তা তদন্ত করতে তাকে আটক করা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিও এবং ছবিগুলো দেখায় যে বিক্ষুব্ধ জনতা একটি গির্জার উপর হামলা চালাচ্ছে। ইটগুলোর টুকরো ছুঁড়েছে এবং এটি পুড়িয়ে দিচ্ছে৷ অন্য একটি ভিডিওতে আরও দুটি গির্জায় হামলা করতে দেখা যায়। এতে আক্রমণকারীরা আসবাবপত্র বের করে এবং আগুন লাগানোর সময় তাদের জানালা ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন: আনোয়ার-উল-হক কাকার পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত
ভিডিওতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ভাঙচুর থামাতে হস্তক্ষেপ না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
আরেকটি ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে গির্জার ছাদে উঠতে দেখা যাচ্ছে এবং রাস্তার নিচে থাকা জনতা উল্লাস করছে। আর সে হাতুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করে স্টিলের ক্রসটি (খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রতীক) সরিয়ে ফেলছে।
খালিদ মুখতার নামে একজন স্থানীয় ধর্মযাজক বলেন, ওই এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ খ্রিস্টান নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গেছে। ‘এমনকি আমার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
মুখতার বলেন, জরানওয়ালায় ১৭টি গির্জা রয়েছে এবং তিনি ধারণা করেন, হয়তো তাদের বেশিরভাগই আক্রমণের শিকার হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এই সংখ্যা নিশ্চিত করেনি।
কোরআন অবমাননার অভিযোগকে একটি ‘মিথ্যা অভিযোগ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন করাচির ন্যাশনাল ক্যাথলিক ইনস্টিটিউট অব থিওলজি গির্জার ইতিহাসের শিক্ষক ফাদার গুলশান বরকত। তিনি বলেছেন, এই ঘটনার জন্য স্থানীয় মসজিদগুলোও দায়ী কারণ মিনারে স্থাপন করা লাউডস্পিকারগুলোর মাধ্যমে সকালে মুসলমানদের জড়ো হতে আহ্বান জানিয়েছিল। ফলে ‘গীর্জা এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলো আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুসলিম ভাইদের আবেগ খুব দ্রুত জ্বলে ওঠে, এমনকি শোনার মধ্যেও।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শপথ
লাউডস্পিকার সম্পর্কে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য জরানওয়ালা মসজিদের কোনো আলেমের কাছে পৌঁছানো যায়নি।
পুলিশ প্রধান বলেন, পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল খ্রিস্টানদের সকলের জীবন বাঁচানো।’
পরে সন্ধ্যায় পুলিশকে সাহায্য করতে আসে সেনারা। ক্ষুব্ধ মুসলমানদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে কুরআন অপবিত্রকারীকে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।
খ্রিস্টানদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে লাহোর শহর থেকে মুসলিম আলেমদের একটি প্রতিনিধি দলও যায় জরানওয়ালায়।
আরও পড়ুন: 'শান্তি ও স্থিতাবস্থা' বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি চীন-ভারতের