গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই ‘শেষের দিকে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পাশাপাশি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মোকাবিলায় ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে সৈন্য জড়ো করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার (২৩ জুন) দীর্ঘ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন নেতানিয়াহু। হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যখন উত্তেজনা বেড়েই চলেছে, ঠিক এমন সময়ে এ মন্তব্য করলেন তিনি। একইসঙ্গে গাজায় এখন লড়াই বন্ধ করলেও এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় এখন যুদ্ধ বন্ধ করার মানেই এই নয় যে, সেখানে আর যুদ্ধ হবে না। তবে রাফায় অভিযান শেষের দিকে, আর হিজবুল্লাহকে জবাব দিতে লেবানন সীমান্তে আরও সৈন্য প্রয়োজন। তাছাড়া গাজায়ও এখন খুব বেশি সৈন্যের প্রয়োজন নেই।
নেতানিয়াহু সরকারপন্থী টেলিভিশন চ্যানেল ১৪-কে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু সেনা উত্তরে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রতিরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব সবার আগে। তাছাড়া সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলিদের নিজেদের জমিতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করাও জরুরি।’
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৯
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা করার সময় থেকেই হামলা শুরু করেছে হিজবুল্লাহ। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে গুলি বিনিময় চলছে। তবে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সঙ্গে লড়াই সম্প্রতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা একটি পূর্ণ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ হামাসের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হলে ইরানও তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে তারাও ইসরালের ব্যাপক ক্ষতিসাধরন করতে পারে। সর্বোপরি, এটি একটি বড় পর্যায়ের আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা কমাতে গত সপ্তাহে লেবানন ও ইসরায়েল সফর করেন হোয়াইট হাউসের দূত আমোস হোখস্টাইন। তবে তারপরও লড়াই অব্যহত রয়েছে।
এ বিষয়ে সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আশা করেছিলাম, এই সংকট মোকাবিলায় একটি কূটনৈতিক সমাধান পাওয়া যাবে। তবে এখন বিষয়টি অন্য উপায়ে মীমাংসা করতে হবে।’
‘একইসঙ্গে একাধিক পক্ষের সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে এবং আমরা এর জন্য প্রস্তুত।’
হিজবুল্লাহর সঙ্গে কাগজ-কলমে চুক্তির ওপর ‘নির্ভর করবেন না’ বলেও স্পষ্ট করেছেন তিনি। বলেছেন, লড়াই বন্ধ করতে হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে অনেক দূরে সরে যেতে হবে, যাতে বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলিরা তাদের ঘরে ফিরতে পারে।
হিজবুল্লাহর হামলা শুরুর পর দেশটির উত্তরের সীমান্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। লড়াই অব্যাহত থাকায় এখনও তারা ঘরে ফিরতে পারেনি।
আরও পড়ুন: পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ, হামাস কমান্ডার নিহত
এদিকে, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেই কেবল ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করা হবে।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলকে যুদ্ধ শুরুর ব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, আমাদের কাছে নতুন এমন অস্ত্র ও গোয়েন্দা সক্ষমতা রয়েছে, যা ইসরায়েলের গভীরে আরও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করার সক্ষমতা রাখে।
জবাবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারাও হিজবুল্লাহকে তাদের পূর্ণ সক্ষমতা দেখায়নি। যুদ্ধ শুরু হলে লেবাননও আরেকটি গাজায় পরিণত হবে।