ভারতের একটি আদালত বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদণ্ড স্থগিত করেছেন।
সোমবার রাহুল পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের একটি আদালতে আপিল করেন এবং এসময় আপিল প্রক্রিয়ার সময়কালের জন্য তাকে জামিন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উপাধি নিয়ে ‘বিদ্রুপ’ করার অভিযোগে দেওয়া কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাহুল। যার ফলে তাকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধী ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির কট্টর সমালোচক এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
২০১৯ সালের নির্বাচনী বক্তৃতায় ‘মোদি’ উপাধি নিয়ে উপহাস করার জন্য একটি আদালত তাকে মানহানির অভিযোগে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং এরপর তার সংসদ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে এই কারাদণ্ড ও লোকসভার সদস্যপদ প্রত্যাহারের তীব্র নিন্দা করেছেন মোদি বিরোধীরা।
তারা এটিকে ক্ষমতাসীন সরকারের করা গণতন্ত্রের ওপর সর্বশেষ হামলা এবং ভিন্নমতকে দমন করার পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করেছেন।
গত মাসে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে আপিল করার জন্য তাকে ৩০ দিনের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছিল। আগামী ১৩ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবারের শুনানির পর এক টুইটে রাহুল লিখেছেন, ‘এই সংগ্রামে, সত্যই আমার অস্ত্র এবং সত্যই আমার সমর্থন।’
তিনি আদালতের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থক এবং কংগ্রেস দলের সদস্যদের দিকে হাত নাড়েন।
নামে ‘মোদি’ উপাধি আছে এমন একজন ব্যক্তি রাহুলের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে এক জনসভায় দেওয়া বক্তৃতায় মানহানির অভিযোগে মামলা করেন।
সেই বক্তৃতায় রাহুল কৌতুক করে বলেছিলেন, ‘সব চোরের নামে কেন মোদি উপাধি থাকে?’
রাহুল তার বক্তৃতায় তিনজন মোদির কথা উল্লেখ করেন- একজন হলেন পলাতক ভারতীয় হীরা টাইকুন, দ্বিতীয়জন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে নিষিদ্ধ ক্রিকেট নির্বাহী এবং তৃতীয়জন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
যে আবেদনকারী মামলাটি করেছেন তিনি গুজরাটে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য।
কিন্তু রাহুলের উল্লেখিত অন্য দুই মোদি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।
রাহুলকে ২৩শে মার্চ দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং পরের দিন সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
বিরোধী আইনপ্রণেতারা রাহুলের সমর্থনে সমাবেশ করেন এবং তার বহিষ্কারকে ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের জন্য একটি নতুন আঘাত বলে অভিহিত করেন।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সংসদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। যদি উচ্চ আদালত রাহুলের কারাদণ্ড স্থগিত বা বাতিল না করেন, তবে তাকে জেলে যেতে হবে এবং সম্ভবত ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, গান্ধীর আইনী দলের একজন আইনজীবী বাবু মাঙ্গুকিয়া বলেছেন যে আদালত তার দণ্ড স্থগিত না করা পর্যন্ত তিনি সংসদ থেকে অযোগ্য থাকবেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাহুলের মামলাটি অস্বাভাবিক, বিশেষত এ ধরনের মানহানির অভিযোগ বিরল।
সিনিয়র আইনজীবী গোপাল শঙ্কর নারায়ণ বলেছেন, ‘মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং এরজন্য কারাদণ্ড দিতে এর আগে আমরা আর কখনোই দেখি নি। একটি নিরীহ মন্তব্যের জন্য তাকে সর্বোচ্চ সাজা (দুই বছরের) দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি সুযোগ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ সভ্য দেশে মানহানি অপরাধ নয়। বড়জোর আপনি সুনাম ক্ষুন্নের জন্য মামলা করতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। কিন্তু এটি দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনো অপরাধ নয়।’
প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ।
মোদির সমালোচকরা বলছেন যে তিনি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের গণতন্ত্র বাধার মুখে পড়েছে। তারা মোদি সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা অনুসরণ করার অভিযোগ তোলে।
যদিও সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, তার নীতিগুলো জাত-পাত নির্বিশেষে সকল ভারতীয়দের জন্য নেওয়া হয়।
রাহুলের পরিবারে তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ছাড়া বাকি দুজন তার দাদি ইন্দিরা গান্ধী ও বাবা রাজীব গান্ধী; তারা দুজনই হত্যার শিকার হয়েছেন।
যদিও রাহুলকে মোদি সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়, তবে তার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল গত দুটি সাধারণ নির্বাচনে খুব বাজেভাবে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য রাহুল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ সক্রিয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
তিনি মোদি ও তার দল বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ভারতের গণতান্ত্রিক পরিচয়পত্রকে কলঙ্কিত করার অভিযোগ করেছেন।