গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে সুইজারল্যান্ডে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক ধনকুবের ও তার পরিবারের তিন সদস্যকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সুইজারল্যান্ডের লেকসাইড ভিলায় বসবাসকারী এই পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- তারা গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে বাইরে যেতে নিষেধ করাসহ দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করাতেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযুক্ত চারজনকে সাড়ে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে ৭৯ বছর বয়সি ধনকুবের প্রকাশ হিন্দুজা, তার স্ত্রী কমল, ছেলে অজয় এবং পুত্রবধূ নম্রতার বিরুদ্ধে মানব পাচারের আরও গুরুতর অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত। অভিযোগ খারিজ করার কারণ হলো শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়ার আগেই তাদের জানানো হয়েছিল, তাদের কী কী সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে এবং কী কাজ করতে হবে।
ভারতীয় এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই ছিল নিরক্ষর। যাদের সুইস ফ্রাঙ্কে নয়, ভারতীয় রুপিতে বেতন দেওয়া হতো। দেশের ব্যাংকে তাদের বেতন জমা দেওয়া হতো। ফলে তারা সেটির সুবিধা ভোগ করতে পারত না।
তারা আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
কমল হিন্দুজার আইনজীবী রবার্ট অ্যাসায়েল বলেন, আদালত পাচারের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ায় তিনি ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন।
পরিবারটি কেন আদালতে ছিল না তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মক্কেলদের স্বাস্থ্য খুব খারাপ, তারা বয়স্ক মানুষ। তিনি বলেন, হিন্দুজার ৭৫ বছর বয়সী স্ত্রী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন এবং পরিবার তার সঙ্গে রয়েছেন।
পঞ্চম আসামি পরিবারটির ব্যবসায়িক ম্যানেজার নাজিব জিয়াজিকে দায়িত্ব পালন থেকে ১৮ মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে আদালতে এটি প্রমাণিত হয় পরিবারটি বাদীদের সঙ্গে একটি অঘোষিত সমঝোতা করেছেন। আইনি ফি এবং সম্ভাব্য জরিমানার জন্য অর্থ প্রদানের জন্য যাতে ব্যবহার করা যায় সেজন্য সুইস কর্তৃপক্ষ হীরা, রুবি, একটি প্ল্যাটিনাম নেকলেস এবং অন্যান্য গহনা এবং সম্পদ জব্দ করেছে।
আরও পড়ুন: ভারতে কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৫
তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি, মিডিয়া, বিদ্যুৎ, রিয়েল এস্টেট এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি শিল্প গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেন প্রকাশ হিন্দুজা। ফোর্বস ম্যাগাজিন হিন্দুজা পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছে।
১৯৮০-এর দশকে পরিবারটি সুইজারল্যান্ডে বসবাস শুরু করে এবং হিন্দুজাকে ২০০৭ সালে একই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০০০ সালে সুইস নাগরিকত্ব পাওয়া হিন্দুজার বিরুদ্ধে সুইস কর্তৃপক্ষের আনা পৃথক কর মামলা বিচারাধীন।
এই মামলায় আদালত বলেছে, শ্রমিকদের শোষণ এবং অননুমোদিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সামান্য পরিমাণ স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়া এবং সুইজারল্যান্ডে এই জাতীয় কাজের জন্য দশমাংশেরও কম বেতন দেওয়ার জন্য এই চারজন দোষী সাব্যস্ত হন।
সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, কমল হিন্দুজার তৈরি করা 'ভয়ংকর পরিস্থিতির'বর্ণনা দিয়েছেন শ্রমিকরা। তারা খুব কম বা কোনো প্রকার ছুটি ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অভ্যর্থণার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করেছিলেন তারা। তারা কখনো বেসমেন্টে আবার কখনো মেঝেতে তোশক বিছিয়ে ঘুমাতেন।