অনলাইনে সন্তানদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে যুগান্তকারী এক আইন উত্থাপন করেছেন দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড। প্রস্তাবিত আইনে ১৬ বছরের কম বয়সি শিশু-কিশোরদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে রোল্যান্ড বলেন, এই আইন পাস হলে ছোট ছোট বাচ্চাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা ও ব্যবহার আটকাতে ব্যর্থ হলে টিকটক, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, এক্স ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ৫ কোটি (অস্ট্রেলিয়ান) ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।
এ সময় তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠা যে অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক বৈশিষ্ট নয়, এ বিষয়ে এই বিলের মাধ্যমে একটি নতুন আদর্শিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা হবে।’
‘যাচাই না করা বিপুল পরিমাণ কনটেন্টের সংস্পর্শ থেকে শিশু-কিশোরদের বিরত রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই কিছু করা উচিত। আর এ বিষয়টি দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।’
তবে বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন এক্সের মালিক ইলন মাস্ক। তিনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণে এটি (সরকারের) একটি গোপন কৌশল বলে মনে হচ্ছে।’
অবশ্য পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর বিলটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমর্থন পেয়েছে। এটি আইনে পরিণত হলে সামাজিক মাধ্যমে বয়সের সীমাবদ্ধতা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে কাজ করার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলো এক বছর সময় পাবে।
রোল্যান্ড বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার অনেক তরুণের জন্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ক্ষতিকর হতে পারে। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ানদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই অনলাইনে মাদকের ব্যবহার, আত্মহত্যা কিংবা সহিংস কনটেন্ট দেখে থাকে। অনিরাপদ খাদ্যাভ্যাসের বিজ্ঞাপন দেখেছে তাদের এক-চতুর্থাংশ।’
‘সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ৯৫ শতাংশ সেবাদাতা অনলাইন নিরাপত্তাকে অভিভাবকত্বের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে হওয়া ক্ষতির মোকাবিলায় তারা আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তরুণদের শাস্তি দেওয়া বা (অনলাইনে কর্মকাণ্ড থেকে) বিচ্ছিন্ন করে ফেলা নয়, বরং তাদের সুরক্ষার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বাবা-মায়েদের উদ্দেশে বলতে চাই, সন্তানের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য আমরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’