দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়ে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেছেন, ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে অবশ্যই রাজনীতি করবেন। তারা (সরকার) বিভিন্ন সময়ে (খালেদার রাজনীতি করার সুযোগ নিয়ে) বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। তারা বিষয়টি নিয়ে একটি ধোঁয়ার পর্দা তৈরি করছে।’
বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে টুকু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার হুমকি দিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে। এখন তার আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। আপনারা (সাংবাদিকরা) বলুন আমরা কোনটা মেনে নেব।
আরও পড়ুন: জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে সংবিধান সংশোধন করতে হবে: ফখরুল
খালেদা জিয়াকে নিয়ে মন্ত্রীরা কী বলছেন তাতে তারা আগ্রহী নন বলেও জানান এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি তুচ্ছ বিষয়। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করেছেন, রাজনীতির ময়দান থেকে নেতা হয়েছেন, তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন... অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে বেগম খালেদা জিয়া অবশ্যই রাজনীতি করবেন।’
তিনি আরও বলেন, খালেদার রাজনীতি করার অধিকার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করায় সরকার কী বোঝাতে চায় তা মানুষ বুঝতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মন্তব্য নিয়ে কম চিন্তিত।’
এর আগে রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন রাজনীতিতে অংশ নিতে পারেন, কিন্তু দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
তিনি রাজনীতি করলে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি রাজনীতি করবেন কি করবেন না, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়’।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আ. লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে: মির্জা আব্বাস
তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার স্বাস্থ্য খারাপের কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাজা স্থগিত করেছেন।
ক্যাম্পাসে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিতে হবে
বৈঠকে টুকু জানান, ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষা খাতে ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্যের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়ছে এবং প্রতিটি ক্যাম্পাসে আমাদের মেয়েদের টার্গেট ও নিপীড়িত করা হচ্ছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
তাদের একযোগে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীতে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান বিএনপি নেতা। ‘আমরা শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা এবং যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা নিয়েও আলোচনা করেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যৌথ ঘোষণা দিতে পারব।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক প্রমুখ।
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারকে না সরালে বিপদে পড়বে বাংলাদেশের জনগণ: ফখরুল