বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে ‘হঠাৎ’ ভর্তি হওয়া দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন এখন ঝুঁকিতে।
তিনি বলেন, 'ভোরে তিনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা বারবার বলে আসছি, তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছেন।’
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বিদেশে তার চিকিৎসার বিষয়টিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘তার জীবন এখন বিপন্ন। আমরা মনে করি, তারা (খালেদা জিয়া) ইচ্ছাকৃতভাবে এটা (চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না) করছে।’
এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সোমবার (৮ জুলাই) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি একটি জাতীয় দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, খালেদা জিয়ার রোগগুলো ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। ফলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঘন ঘন হাসপাতালে আসতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে বিএনপির অভিনন্দন
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, তাদের অসুস্থ দলীয় প্রধানকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ট্রিটমেন্ট সেন্টারে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা (সরকার) রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে (শর্ত ছাড়া) মুক্তি দিচ্ছে না।
এদিকে সোমবার ভোরে খালেদা জিয়াকে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন,‘ম্যাডাম অসুস্থবোধ করায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভোর সোয়া ৪টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি এখন চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে একটি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান জাহিদ।
এর আগে গত ২২ জুন রাতে বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তার হৃদযন্ত্রে সফলভাবে পেসমেকার বসানো হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বিএনপি নৈতিক সমর্থন করে: ফখরুল
এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গত ২ জুলাই থেকে তিনি গুলশানে নিজ বাসভবন 'ফিরোজা'য় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, ফুসফুস, হার্ট এবং চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বারবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকে তার চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি জমে যাওয়া ও লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
আরও পড়ুন: আবারও হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া