বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জনগণের উত্তাল ঢেউ তৈরি হলে বিদেশি কোনো দেশ তাদের রক্ষা করতে আসবে না।
শনিবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে মগবাজার অভিমুখে মিছিল বের করার আগে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কোনো শর্ত ছাড়াই বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পথ সুগম করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এই বিএনপি নেতা হুঁশিয়ারি দেন, ‘আমরা জানি এই সরকার বিদেশের উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণের সেই উত্তাল ঢেউ তৈরি হলে বিদেশি কোনো দেশ এগিয়ে আসবে না।’
তিনি বলেন, সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও সংসদ এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ‘তাই এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা। এই সরকারের পতনের মাধ্যমে নবদিগন্তের সূচনা হবে।’
তাদের দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ব্যাহত না করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
দলের দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা।
ফখরুল বলেন, তাদের দলীয় প্রধান খুবই অসুস্থ এবং তিনি এখন জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে (কোনো শর্ত ছাড়াই) মুক্তি দিতে হবে। আমরা প্রায় সব দলই এক দফা দাবিতে একমত হয়েছি, যার মধ্যে রয়েছে খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি।’
ফখরুল বলেন, সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দেওয়ায় খালেদা এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বন্দিদশায় তার (খালেদার) খারাপ কিছু ঘটলে তার সব দায়ভার হাসিনা সরকারকেই বহন করতে হবে।’
দেশ ও জনগণের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিভিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জনপ্রিয় নেতাকে এভাবে বন্দি রাখা সম্পূর্ণ মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
ফখরুল বলেন, চিকিৎসকরা বারবার বলছেন তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেকোনো উন্নত কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য, কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। ‘তারা এটি করছে না কারণ তারা জানে, যদি তিনি বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে আসেন; তবে তাদের সিংহাসন নড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার জনগণকে ধোঁকা দিয়ে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার বলছে যে তারা গণতন্ত্রের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং তারা এখন গণতান্ত্রিক চর্চা করতে দিচ্ছে। একইসঙ্গে তারা বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারও অব্যাহত রেখেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, খালেদার মুক্তির দাবিতে লিফলেট বিতরণের সময় শুক্রবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছয় নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, যদি তাদের জনসম্মুখে না আনা হয় এবং ছয় ঘণ্টার মধ্যে মুক্ত করা না হয় তবে সরকার এর (তাদের নিখোঁজ) দায়ভার বহন করবে।’
ফখরুল অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে এবং মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় ফাঁসছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা এখন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তাদের বাড়িতে থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করতে তারা সরকারের প্রতি বার্তা দিতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাড়িঘরে অভিযান বন্ধ করতে। অন্যথায়, মানুষ এখন জেগে উঠতে শুরু করেছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। তাকে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানো উচিত এবং উন্নত চিকিৎসা দেওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত দৃঢ় মনোবল নিয়ে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।
পরে ফখরুল দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নয়াপল্টন থেকে মিছিল শুরু করেন, যা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পর মগবাজারে গিয়ে শেষ হয়। এতে নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন।
বিএনপির অন্য সব নগর ও জেলা ইউনিটও একই কর্মসূচি পালন করেছে।
অসুস্থ হয়ে পড়ায় ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এরপর থেকে তিনি হাসপাতালের একটি কেবিনে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
তার পরিবারের করা একটি আবেদনের ভিত্তিতে বয়স ও মানবিক দিক বিবেচনায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সনকে একটি নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।