রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে দেশে রাজকীয় দল বা কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ’২২ ডিসেম্বর : রক্তাক্ত মতিহার ও রিজভী আহমেদ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আপনারা কোন পথে যেতে চান? আমরা শুনছি যে, একটি রাজকীয় দল করার নাকি চেষ্টা করা হচ্ছে, কিংস পার্টি যেটাকে বলা হয়। ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনরা যে চেষ্টা করেছেন, শেখ হাসিনা গোয়েন্দাদের দিয়ে যে কাজ করেছেন, এখনও তো আমরা সেটি শুনছি।’
‘আমরা শুনছি যে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে বলছে- অমুক অমুক লোকের সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করুন। এটা তো করতে পারে না। এটা হলে তো মানুষের যে এত আত্মদান, সেটা করত না।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি যদি আবার ফিরে আসে যে, কারা কারা নির্বাচিত হবেন, কারা কোন রাজনৈতিক দল করবেন- রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি এটি নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আর কি সার্থকতা থাকল?’
‘শেখ হাসিনাও একই কাজ করেছেন। উনি তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে বিরোধী দলের লোকজনকে ধমক দিতেন; চেষ্টা করাতেন বিএনপি থেকে তাদের যেন সরিয়ে দেওয়া যায়, তারা যেন আরেকটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে, তারা যেন বিএনপিকে ভাঙে। এই কাজটাই তো ১৬/১৭ বছর শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে করিয়েছেন। এখন আবার আমরা শুনছি, গোয়েন্দা সংস্থার লোকরা নাকি একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য, কাউকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। এই ঘটনা কিন্তু এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
আরও পড়ুন: উপদেষ্টারা আমাদের প্রতিপক্ষ হওয়ার যোগ্যও নন: নজরুল ইসলাম খান
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ। যে মানুষ যে রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে, তাকে তারা ভোট দেবে। যে মানুষ যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, তারা সেভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করবে। এখানে কোনো নির্দেশনা, কোনো হুমকি, রাষ্ট্রের কোনো খবরদারি থাকবে না- এটিই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ, এটিই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।’
‘সেটি না করে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিনের মতো, এরশাদের মতো এবং শেখ হাসিনার মতো একই কালচার, একই সংস্কৃতির যদি পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে তো মানুষ মনে করবে আরেকটি ফ্যাসিবাদ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। এটি হতে দেওয়া যায় না।’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে রিজভীর উদ্বেগ
সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ সময় এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘চারদিকে বিভিন্ন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত, আমরা ভয়ার্ত। এ ভয় ব্যক্তিগত নয়, ভয় রাষ্ট্র নিয়ে। আমরা এর আগেও দেখেছি, কোনো সচিব বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ এলেই সচিবালয়ের নথি গায়েব হয়ে যায়, সেখানে আগুন ধরে যায়।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কিছু নথিপত্র চাওয়াতেই সচিবালয়ে আগুন লেগেছে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে, জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের’ এ আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সংগঠনটির সভাপতি অ্যাডভোকেট বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের সঞ্চালনায় হাবিবুর রহমান হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, সৈয়দ শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, রমেশ দত্ত বক্তব্য দেন।