বহুল আলোচিত 'দ্রুত বিচার আইন' ধাপে ধাপে কার্যকর না করে এটিকে স্থায়ী আইন করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে উপস্থিত না হওয়ায় তার পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন।
২০০২ সালে প্রথম দুই বছরের জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়। পরে সাত ধাপে আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে এর মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হবে।
আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।
বিলে আইনটিকে স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোনো সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়নি। তাই আইনের বিদ্যমান সব ধারা এখনকার মতোই থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ধ্বংস, ডাকাতি, দস্যুতা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি, টেন্ডার ক্রয় এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত বিচারের স্বার্থে ২০০২ সালে দ্রুত বিচার আইন প্রণয়ন করা হয়।
আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল ২ বছর। পরে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে, এর মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ৭ বার বাড়ানো হয় এবং সর্বশেষ ১০ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে এটি ১৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ২২ বছর করা হয় যা ৯ এপ্রিল, ২০২৪ এ শেষ হবে।
লিখিত বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অধিকতর উন্নতির জন্য মেয়াদ শেষে বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি না করে এই আইনকে একটি স্থায়ী আইন করা প্রয়োজন।
এই আইনে অভিযোগ গঠন করলে জরিমানাসহ সশ্রম দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। প্রতিটি জেলায় একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
যেসব অপরাধ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় পড়ে সেগুলো ১২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। এটি করতে ব্যর্থ হলে, এর মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়ানো যেতে পারে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বিলটি উত্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি যখন আইনটি পাস করে তখন আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল এর সমালোচনা করেছিল।
তিনি বলেন, আইনের নাম দ্রুত বিচার আইন হলেও আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুব কম মামলাই নিষ্পত্তি হচ্ছে।
চুন্নু আরও বলেছিলেন যে গ্রেপ্তারের সময়ই আইনটি বিবেচনা করা হয়। এই আইন নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সাধারণ মানুষ বা প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার সুযোগ রয়েছে।
চুন্নু বলেন, 'আজকে আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায়, কাল যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে তাহলে এই আইনের মাধ্যমে আপনারাও হয়রানির শিকার হবেন।’
আইনটি স্থায়ী না করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে এক বা দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
‘আপনাদেরও (আওয়ামী লীগ) কষ্ট হবে, জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা যখন করা হয় তখন তারা প্রতিবাদ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ২০০২ সালে যখন এই আইনটি করা হয়, তখন আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলগুলোকে নিপীড়ন করার উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির। কিন্তু সংসদ সদস্যরা যদি দেখেন গত ১৫ বছরে এই আইন কীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, তাহলে তার (চুন্নু) বক্তব্য সঠিক নয়।’
আইনমন্ত্রী বলেছেন, দ্বিতীয়ত, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই আইন প্রয়োজন। এই আইন থাকায় গত ১৫ বছরে খুব বেশি অশান্তি হয়নি।
‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই আইন শুধু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। অনেক ধরনের সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা রোধ করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। তাই এই আইনকে চিরস্থায়ী করা উচিত।’
পরে বিলটি পরীক্ষা করে দুই দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।