দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজধানীতে নির্বাচন পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। তবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করব। আমরা আশাবাদী যে, নির্বাচন দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য হবে।’
শনিবার (৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য 'মিট প্রেস দ্য: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪' এর আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠী ভোটের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চালাচ্ছে। ফলে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, 'এবার সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। একটি বড় রাজনৈতিক দল আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনবিরোধী জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছে।’
তবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিরোধী দলের প্রতিরোধের মধ্যেও জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সংকট দেখা দিতে পারে, কারণ একটি গোষ্ঠী নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, বর্জন করছে এবং প্রকাশ্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা এই বাস্তবতা অস্বীকার করি না।’
আরও পড়ুন: শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি, আগের রাতে ভোট হবে না: সিইসি
তবে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিরোধিতা ও প্রতিরোধ থাকা সত্ত্বেও জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণে আমরা এই নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হব।’
হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, 'আপনারা ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে জনমত গঠনের জন্য নির্বাচনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাতে পারেন, কিন্তু ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়ে শারীরিকভাবে নির্বাচন প্রতিহত করলে তা অপরাধ হবে।’
তিনি আরও বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচন প্রতিহত করতে অগ্নিসংযোগ ও শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে তাহলে কমিশনকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
বিএনপিসহ ১৫ দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হবে বলে অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এটিকে সঠিক নির্বাচন মনে করছেন না- এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানো ইসির কাজ নয়। ইসির কাজ শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা। তিনি বলেন, ‘এই বিতর্ক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে থাকবে এবং রাজনীতিবিদরাই একদিন এর সমাধান করতে পারেন।’
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে: সিইসি
হাবিবুল আউয়াল এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট রাখার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্ভাব্য ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতির হার অনুমান করা এখনই কঠিন।
তবে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি যদি এক শতাংশেরও কম হয় তবে এটি আইনগতভাবে সঠিক হবে, যদিও কেউ কেউ এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
সিইসি বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসতে উৎসাহিত করা ইসির একটি ছোট খাটো দায়িত্ব। প্রার্থীদের প্ররোচনার কারণে ভোটাররা সর্বদা যেতে আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি একটি ছোট খাটো দায়িত্ব।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হতো। এটা একটা সত্যি।’
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন প্রদর্শন করা হয়।
চার নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্র সচিব ও ইসি সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভোট দিতে কোনো চাপ নেই, তবে 'একটি দলের' লিফলেটে না দিতে বলা হয়েছে: সিইসিকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব