বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের পরাজয় দেখেছে কারণ দলটি এখন বিএনপি ও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠি-বন্দুক নিয়ে হামলা করছে।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের সমাবেশের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল (বুধবার) বিএনপিকে হাঁটু ভাঙার দল বলেছেন, ‘আমাদের হাঁটু ভেঙেছে কি না তা আপনারা ভালো করেই বুঝতে পারছেন। আমরা আমাদের হাতে লাঠিও নিইনি, তবে আপনাদের পিঠ ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে।’
বিএনপি নেতা আরও বলেন, সরকার শুধু লাঠি নয়, ধারালো অস্ত্র ও তলোয়ারও ব্যবহার করছে এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর নির্ভর করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সরকার জনগণের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করছে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই একটি ‘সন্ত্রাসী’ দল এবং সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এর জন্ম হয়েছে, ‘তারা ছাত্রলীগের হাতে বন্দুক, পিস্তল, লাঠি সরবরাহ করেছে। যাদেরকে তারা তাদের সোনার ছেলে বলে, তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ শুধু ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর হামলাই করেনি, কোন্দল ও কলহের মাধ্যমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, গণতন্ত্র ও ভোট ও জনগণের অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে দমন করতে সরকার বিরোধী দলের পাঁচ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ‘তারা (সরকার) সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। তারা মানুষকে গুলি করে হত্যা করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’
তিনি দাবি করেন, বিএনপির বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলায় ২৫ হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তিন হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
যুবদল কর্মী শহিদুল ইসলাম শাওনকে গুলি করে নয়, ইটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার যে কথা বলেছেন তার সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়া ডেথ সার্টিফিকেটে স্পষ্ট লেখা আছে, আঘাতের জন্য নয় তিনি বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে আরামে আছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থান করে হাস্যকর ও মিথ্যা মন্তব্য করছেন বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে মিথ্যাচার করছেন। ভয়েস অব আমেরিকা ওয়াশিংটনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয় এবং মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং তারা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ তার এমন বক্তব্য শুনে হাসছে।
বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র নেই, জনগণের নিরাপত্তা নেই এবং জনগণের ভোটাধিকার নেই বলে প্রতিদিনই সংবাদপত্র খুন, সংঘর্ষ, সহিংসতা, অনাচার ও ধর্ষণের খবরে ভরে যায়। ‘এটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।’
তরুণ ও ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমে অতীতে পরিবর্তন এসেছে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান। ‘এবারও পরিবর্তন আসবে ছাত্রদের ত্যাগ ও তুমুল আন্দোলনের মাধ্যমে। আমাদের একমাত্র কর্তব্য এখন সকল ছাত্র-যুবক এবং সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শক্তিশালী আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। এটিই হবে সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের উপযুক্ত জবাব। ইনশাআল্লাহ জনগণ বিজয়ী হবে।’
বেপরোয়া মন্তব্য না করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান বিএনপি নেতা।