উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম নদ-নদী বেষ্টিত হওয়ার কারণে প্রতি বছর বন্যা আর নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হতে হয় অসংখ্য মানুষকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কুড়িগ্রাম এক সময় মঙ্গাকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
বর্তমানে মঙ্গার তকমা মুছলেও শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা না থাকায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি জীবিকার ক্ষেত্রে। এবার স্রোতস্বিনী ধরলা নদীকে কেন্দ্র করে বদলাতে চাচ্ছে নিজেদের ভাগ্যের চাকা।
২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন এ জেলায় তিনি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবেন। সেই কথা রাখতেই গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় ভুটানের রাজা ও রানীর কাছে প্রস্তাব রাখেন কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার। ধরলা নদীর পাড় ঘেঁষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে যাচ্ছে বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। যা জেলার দারিদ্র্য,মঙ্গা আর বেকারত্ব ঘুচাতে বিশেষ সহায়ক হবে।
এ জেলায় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা না থাকায় প্রতি বছর নদী ভাঙন আর বন্যায় সহায় সম্বল,ভিটে-মাটি হারিয়ে চরের অধিকাংশ লোকজন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। কেউ রিকশা চালান,কেউ পোশাক কারখানায় কেউবা রাজমিস্ত্রির দিনমজুর হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপন হলে এ জেলায় দারিদ্র্যের হার কমবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল। সেই সঙ্গে জেলার বাসিন্দারা এতে যুক্ত হয়ে নিজেদের অভাব মোচন করে জেলার উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন বলেও আশার আলো দেখছেন অনেকেই।
কুড়িগ্রাম ধরলা নদীর পূর্ব প্রান্তের সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে সরকারি জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার বৃহৎ এলাকা চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন। এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে সেহেতু ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত গতিতে বাড়বে। তবে এখানে দীর্ঘদিন ধরে যেসব কৃষক চাষাবাদ করছেন তাদের ন্যায্য অধিকার ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে জমি অধিগ্রহণ করলে ভালো হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর জায়গাটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে ভুটানে প্রবেশের দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। ফলে এই পথে সহজে যাতায়াত করা যাবে। ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হলে জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বাস্তবায়নে আরও ৮৬ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও জেলার চিলমারী নৌ-বন্দরের কার্যক্রম এর সঙ্গে যুক্ত করে এই বিশেষ অঞ্চলটিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ’কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের কানেক্টিভিটি বেশ ভালো। কুড়িগ্রামের দুটি স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগের সুবিধা রয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে, আগের চেয়ে এ জেলার অধিকাংশ মানুষ ভাল জীবনযাপন করতে পারবে। সরকার সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন ভুটানের রাজা