সিলেটে বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পাঁচ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। হিসাব মতে, প্রতি পরিবার ১০ হাজার টাকা করে পাবে।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বন্যাত্তোদের পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.মজিবুর রহমান অনুদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাসহ ১৩টি উপজেলা, পাঁচ পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়িত আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৪ জুলাই থেকে বরাদ্দের টাকা বিতরণ শুরু করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে
তিনি বলেন, উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ হাজার ব্যক্তি যাদের ঘর-বাড়ি বিধস্ত বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সকল দরিদ্র মানুষের তালিকা আমরা পেয়েছি। আমিসহ উপজেলা কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে টাকা তুলে দেব।
জেলা প্রশাসন জানান, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত সিলেট জেলায় প্রায় তিন কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে প্রাপ্ত টাকা প্রায় পৌনে তিন কোটি, বাকি টাকা বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত। তবে এই টাকাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এখনও বন্যা পরিস্থিতি থাকায় বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য আরও ৭০ লাখ টাকা চেয়েছেন তারা। এর মধ্যে নগদ বিতরণের জন্য প্রয়োজন ৫০ লাখ টাকা। এই টাকা বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের তথ্যানুসারে, গত ১৪ জুন শুরু হয়ে এ পর্যন্ত চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সিলেট সিটি করেপোরেশনসহ জেলার ১৩ উপজেলার ১০৫ ইউনিয়ন ও পাঁচ পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার চার লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবারের প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। প্রায় ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হওয়া ছাড়াও বন্যায় ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখনও নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
মো. মজিবুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত এক কোটি ৯২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ৬৫ লাখ টাকাও বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, এখনও বন্যা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় ত্রাণ কার্য অব্যাহত রাখতে নগদ বিতরণের জন্য ৫০ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার ১১২ প্যাকেট (ছোট) দুধ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমেছে, বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বন্যায় বেসরকারিভাবে (বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে) নগদ ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৩ টাকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ৫১ হাজার ৮২৫ প্যাকেট খাবার পেয়ে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে ২২ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৩ টন চাল, ১০ হাজার পিস স্যালাইন, ১০০ পিস গ্যাস লাইট, ৬০০ প্যাকেট শিশুখাদ্য, ১২শ পিস মোমবাতি ও ১০টি নৌযান পাওয়া গেছে জেলা প্রশাসন। যা সবই বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।