%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
ঈদে পর্যটন খাতে মন্দা কাটিয়ে উঠার আশা কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের
পৃথিবীর দীর্ঘতম (১২০ কিলোমিটার) প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে চলতি পর্যটন মৌসুমের বড় অংশ কেটেছে পর্যটক খরায়। জাতীয় নির্বাচন, মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ মৌসুমে পর্যটন খাত ছিল বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি। পর্যটকশূন্যতার এই মন্দা কাটতে শুরু করে জানুয়ারির শেষের দিক থেকে। কক্সবাজারমুখী হতে শুরু করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ছেদ পড়ে। অধিকাংশ পর্যটক পছন্দের সেন্টমার্টিনে যেতে না পেরে অতৃপ্ত মনে কক্সবাজার ছাড়েন। নাফ নদীর সীমান্তে নিরাপত্তা বিবেচনায় ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এবার পর্যটকরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সুযোগ পাননি। তারপরও গত দেড় মাসেই কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে ভরপুর পর্যটক ছিল। হইহুল্লোড়-উচ্ছ্বাসের সেই সমুদ্রসৈকতে রমজান মাস জুড়ে এখন চলছে সুনসান নীরবতা।
এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে পড়ছে পয়লা বৈশাখ। এ সময়ে ৮ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্যে পর্যটকনির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও সংস্কারমূলক কাজ চালানো হচ্ছে। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় মেরামত করানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঈদের পরে মাসখানেক পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে বলে আশা করেন পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ফলে পর্যটক বরণে ব্যবসায়ীদের নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শতাধিক মৃত জেলিফিশ
ঈদকে ঘিরে কক্সবাজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে নতুন করে সাজানো হয়েছে নানান স্পট। ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটকের আগমন হবে এমন প্রত্যাশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্যসেবা ও অভিযোগকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বিচ কর্মী বেলাল হোসেন বলেন, হাতে গোনা পর্যটক নামছেন সৈকতে। যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। এতে তথ্যসেবা কেন্দ্রে খুব একটা চাপ নেই।
সৈকতে তারকা মানের হোটেল কক্স টুডে’র জেনারেল ম্যানেজার (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ বলেন, ‘আমাদের হোটেলে কক্ষ আছে ১৭০টি। হোটেলটির পর্যটক নেই বললেই চলে। যারা আসছেন, তাদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে হোটেলের সংস্কারকাজও চলছে।’
ঈদ ও বাংলা নববর্ষে পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি।
একই অবস্থা শহরের অভিজাত হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন রিসোর্ট, সি গাল, লং বিচ, সি প্যালেস, হোটেল কল্লোল, রয়েল রিসোর্টসহ মাঝারি হোটেল ও রিসোর্টগুলোর।
শহরের দরিয়া ট্যুর অপারেটরের পরিচালক মো. মোরশেদ জানান, কক্সবাজারে ট্রেন চলাচলের কারণে হাজারখানেক নিয়মিত পর্যটক আসছেন। ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটি উপলক্ষে এখন থেকেই হোটেল বুকিং দিচ্ছেন পর্যটকরা। এ সময় ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের বরণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন।
কক্সবাজার হোটেল, রিসোর্ট গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, এখন হোটেল-রেস্তোরাঁর সংস্কারকাজ চলছে। এর মধ্যে কর্মচারীদের একটি বড় অংশকে ঈদের অগ্রিম বেতন-বোনাস দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রোজা শেষে ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের টানা ৭ থেকে ৮ দিনের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে। তখন পর্যটকনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও চাঙাভাব দেখা দেবে। এ জন্য পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
আবুল কাসেম সিকদার জানান, পর্যটক টানতে রোজার মাসে হোটেল-রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের কক্ষ ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঈদ পর্যন্ত এ ছাড় চলবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সম্প্রতি নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া টানা ছুটি, বিশেষ দিনে বাড়তি টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়।’
জেলা জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, ‘পর্যটকদের সেবা ও ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। পর্যটকরা যাতে কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য পর্যটন এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে।’
আরও পড়ুন: বেড়াতে এসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শিশুর মৃত্যু
বাকৃবি: একজনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই ৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বর্তমানে অধ্যয়ন করছেন ৬ হাজার ১৯৯ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতি বছর স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হচ্ছেন ১ হাজার ১১৬ জন শিক্ষার্থী। তবে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকলেও বাকৃবির হেল্থ কেয়ার সেন্টারে আলাদা কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইউনিট বা স্থায়ী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা হতাশা, মানসিক অবসাদ, বিষণ্ণতা থেকে সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষক ৫৮৭ জন। বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকদের কাউন্সেলিং করার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও তা নিয়মিত হয় না বলে জানা যায়।
ফলে পড়াশোনা ও পরীক্ষার মানসিক চাপ, সামান্য ঘটনায় অসহিষ্ণু আচরণ, রাগ-ক্ষোভের জেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, ছোট খাটো বিষয় থেকে ঝগড়া, মারামারি, অসদাচারণের মতো একাধিক ঘটনা ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন: দেশে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে গবাদিপশুর নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি বাকৃবি অধ্যাপকের
ঈদের কেনাকাটা ও ভ্রমণে কার্ড পেমেন্টে মোটা অঙ্কের ছাড় দিচ্ছে ব্যাংকগুলো
ঈদের কেনাকাটা, ভ্রমণ, ইফতার ও সেহরিতে খাওয়ার আনন্দ বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্যাশলেস পেমেন্ট। ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের ছাড় ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) কারণে ক্রেডিট কার্ড হোল্ডাররা এ সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার করছেন।
বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে এবারের ঈদ উপলক্ষে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, ক্যাশব্যাক ও বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফার দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
ঈদের পোশাক, জুতা, গয়নাসহ বিভিন্ন পণ্য কেনায় ছাড় দিচ্ছে কিছু ব্যাংক। এ ছাড়া পুরো রমজান মাস জুড়ে ইফতারের মূল্যে ছাড় দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এছাড়াও রয়েছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফারসহ নানা 'ঈদ উপহার'।
সংশ্লিষ্টদের মতে, উৎসব ঘিরে পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর প্রবণতা বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই চলছে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, এ ধরনের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমছে; বদলে যাচ্ছে চিত্র। এখন বাংলাদেশেও উৎসবের সময় পণ্যের দামে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের জন্য ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিল খোলা থাকবে ব্যাংক
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন ইউএনবিকে বলেন, 'ডিসকাউন্টের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারা নগদ এড়াতে অনেক সুবিধা দেয়, যা নগদ অর্থ বহন করার ঝুঁকিকে নিরুৎসাহিত করে এবং কার্ডে ক্রয়কে উৎসাহ দেয়।’
তিনি আরও জানান, ব্যাংকগুলো তাদের কার্ড হোল্ডারদের জন্য বিশেষ অফারের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, প্রায় ৩০০ লাইফস্টাইল স্টোর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত অফার দিচ্ছে এবং ৫০টিরও বেশি গয়না প্রতিষ্ঠান তাদের কার্ডহোল্ডারদের জন্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
এছাড়া অনলাইনে কেনাকাটায় কার্ড পেমেন্টে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি ১৩০টিরও বেশি রেস্টুরেন্টে ইফতার ও ডিনারে 'বাই ওয়ান গেট ওয়ান' অফার বা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে।
এরই সঙ্গে ঈদে বাড়ি ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণে বিমান ভাড়ার ওপর বিভিন্ন অফার ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ৩১ মার্চ থেকে নতুন নোট বিনিময় শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
স্ট্যানচার্টের হেড অব কনজ্যুমার ব্যাংকিং সাব্বির আহমেদ জানান, ক্যাশলেস কেনাটাকায় উৎসাহিত করতে স্ট্যানচার্ট বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে। গ্রাহকদের ঈদ আরও আনন্দময় করতে ৭ ধরনের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে এ সুবিধা দে্ওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, গ্রাহকরা আমাদের কার্ড অফারের সুবিধা ও সুযোগ-সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে ক্যাশলেস কেনাকাটা করবেন।’
ভিসার বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সৌম্য বসু ইউএনবিকে বলেন, ‘নন-ক্যাশ ফর্ম পেমেন্টের বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা সত্যিকারের ক্যাশলেস বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে আমরা দেখছি, অনলাইন ও অফলাইনে কেনাকাটা ও অন্যান্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত নিরাপত্তা ও গতিসহ ডিজিটাল পেমেন্টের বিভিন্ন সুবিধা পেতে কার্ড ব্যবহার করছেন ভিসা কার্ডধারীরা।’
সৌম্য আরও বলেন, 'আমরা আশা করি ঈদের আগের দিনগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের এই ধারা আরও বেগবান হবে। ভিসা নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা, ব্যবহার সহজীকরণ ও সক্ষমতার মাধ্যমে আমাদের কার্ডহোল্ডারদের আরও সক্রিয় করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
ইউসিবির 'ইউপে'র স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্রোডাক্ট বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মৌলুদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘ইউপের ব্যবহারকারীরা যাতে পবিত্র রমজান মাসে কোনো অতিরিক্ত চাপ ছাড়াই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে এবং নির্বিঘ্নে ঈদ উৎসব উপভোগ করতে পারে সেজন্য দেশজুড়ে ইউপের হাজার হাজার মার্চেন্ট পয়েন্ট রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের গ্রাহকদের জীবনযাত্রার আরও সুবিধার্থে আমরা সম্প্রতি চালু করেছি ইউসিবি-ইউপে কো-ব্র্যান্ডেড প্রিপেইড কার্ড। এটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও ব্যবহার করতে পারবেন।’
ঈদ উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ করতে রমজানে ব্যবহারকারীদের জন্য ইউপে আকর্ষণীয় অফারও নিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।
ঈদ উপলক্ষে ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এনবিআরসি ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ বেশকিছু ব্যাংক কেনাকাটা ও ভ্রমণে এমএফএস- বিকাশ ও নগদ পেমেন্টে মূল্যছাড় দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঈদের কেনাকাটায় জনপ্রিয় ১০টি বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড
বাংলাদেশের সড়কে মোটরসাইকেলের কারণে নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে
যানজটের মধ্যেও কম সময়ে যাতায়াত এবং তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় মোটরসাইকেল বেশ জনপ্রিয় বাহনে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। তবে সড়কে নিরাপত্তার সংকট তৈরি করেছে এই বাহন।
যদিও ২০২২ সালের তুলনায় গত বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার কমেছে। তবে, এখনও দুর্ঘটনায় প্রধান ভূমিকা পালন করছে দুই চাকার এই বাহন। মৃত্যুর পাশাপাশি অঙ্গহানি, জীবনমানে পরিবর্তনসহ সামগ্রিকভাবে মোটরসাইকেল সম্পর্কিত দুর্ঘটনা ভয়াবহ পরিস্থিত তৈরি করে চলেছে।
সচেতন নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর) উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বছরে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৩-৪০ শতাংশই ঘটেছে মোটরসাইকেলের কারণে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই পরিসংখ্যান ঊর্ধ্বমুখী।
এনসিপিএসআরআরের পরিসংখ্যান বলছে, গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৮ থেকে ১০ জন মারা যান। যেসব ঘটনার অনেকটাই গণমাধ্যমে আসে না।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরে ৪৬৭ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৯৬: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
সমস্যাটির মূলে রয়েছে সড়কে অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের উপস্থিতি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের অভাবকে এর অন্যতম কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনসিপিএসআরআরের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর লাইসেন্স না থাকা, বেপরোয়া চলাচল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ।
এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিআরটিএ’র পদক্ষেপ জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ক্রমবর্ধমান এই সমস্যা মোকাবিলায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালক এবং অনিবন্ধিত মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের প্রস্তাব করেন আশীষ কুমার।
টানা ৩ মাস সব জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথাও বলেন তিনি। এই পদক্ষেপকে তিনি সড়কে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের (আরএসএফ) বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৭৪ জন নারী ও ১ হাজার ১২৮টি শিশুসহ ৬ হাজার ৫২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী।
আরএসএফ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। যেখানে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায় ২০২২ সালে। তবে, ২০২৩ সালে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কারণ, আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও প্রাণহানির ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে।
এসব সত্ত্বেও আরএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। যার উল্লেখযোগ্য অংশই চালাচ্ছে কিশোর ও তরুণরা। যা ট্রাফিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর থেকে প্রমাণ হয়, কঠোর নজরদারি ও আইনের প্রয়োগে অভাব রয়েছে। মূলত এসব কারণেই দুঃখজনক পরিণতিগুলো ঘটছে।
ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসের মতো বড় যানবাহনগুলোর সঙ্গে মোটরসাইকেলের ঘন ঘন সংঘর্ষের বিষয় তুলে ধরেন সাইদুর রহমান।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা কিছুটা বাড়লেও ২০২৩ সালে প্রাণহানি কমেছে ১৫ শতাংশ
তিনি বলেন, এই যানবাহনগুলোর চালকদের অনেকাংশের প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকে না। তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রমও করতে হয়। এ কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। এরপরও মোটরসাইকেল জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমার ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন সাইদুর রহমান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) আবু রায়হান মো. সালেহও একই অভিমত জানান। তিনি দুর্ঘটনা কমাতে ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগের বিষয় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বেপরোয়া গতিতে ও লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল চালানো রোধে পুলিশ তৎপর। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে অতি উৎসাহী হয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে চালকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মোটরসাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকতে মা-বাবার দায়িত্বের প্রতি জোর দেন। মা-বাবা ও অভিভাবকদের সতর্কতা বাড়লে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে এই নিরাপত্তা সংকটে অংশীজনরা সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এই পরিসংখ্যান ও চিত্রগুলো সামনের দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয় এবং তারা কিছু পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এতে সড়ক হবে সবার জন্য নিরাপদ।
আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল চলাচলে নজরদারি বাড়ান: কাদের
ডব্লিউটিওর প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক কাঠামো সমন্বয়ের উদ্যোগ এনবিআরের
বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী একটি পদক্ষেপে বাংলাদেশের শুল্ক কাঠামোর একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ৬০ টি শুল্ক সীমা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে বর্তমান আমদানি-রপ্তানি শুল্ক এবং সংশ্লিষ্ট মাশুল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) চুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত নির্ধারিত হারকে ছাড়িয়ে গেছে।
প্রাথমিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে- ছয়টি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাণিজ্য প্রক্রিয়াকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির ইঙ্গিত দেয়।
একটি সরকারি নথিতে বিশদ এই উদ্যোগটি ২০২৬ সালের মধ্যে ডব্লিউটিও-সম্মত নির্ধারিত শুল্কের মধ্যে আনতে ধীরে ধীরে এই হারগুলো সামঞ্জস্য করার পরিকল্পনা নির্ধারণ করে। নির্ধারিত ট্যারিফগুলো ডাব্লুটিওতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (এমএফএন) শুল্ক হারের প্রতিনিধিত্ব করে,এটি এমন একটি সর্বোচ্চ সীমা যা প্রয়োগ করা শুল্ক অতিক্রম করতে পারে না। এই নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিশ্চিত করে যে বাণিজ্য নীতিগুলো অনুমানযোগ্য এবং স্থিতিশীল থাকে, যা ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়।
দেশগুরো সাধারণত ডাব্লুটিওতে যোগদানের সময় বা পরবর্তী বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে বেধে দেওয়া শুল্ক নিয়ে আলোচনা করে, নীতির নমনীয়তা বজায় রাখতে এই হারগুলো তাদের প্রয়োগ করা শুল্কের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করে। তবে, যথাযথ সমন্বয় ছাড়াই এই নির্ধারিত হারগুলো অতিক্রম করা আন্তর্জাতিক বিরোধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা মেনে চলার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
আরও পড়ুন: ৭ মাসে ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় এনবিআরের, প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের বেশি
বাংলাদেশের পুনর্বিন্যাস প্রচেষ্টা ডব্লিউটিও সদস্যদের মধ্যে একটি বিস্তৃত প্রবণতা প্রতিফলিত করে, যেখানে উন্নত, উন্নয়নশীল এবং রূপান্তরিত অর্থনীতিগুলো নির্ধারিত শুল্ক হারের সঙ্গে আমদানির অনুপাতকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে, যা বিশ্ব বাজারের স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে।
উপরন্তু, সরকার ন্যূনতম আমদানি মূল্যের প্রয়োজনীয়তা দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে এটি ৫৫টি আইটেম থেকে সরিয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে অবশিষ্ট ১৩০টি পণ্য থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য আমদানি প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং আরও প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিবেশকে উৎসাহিত করা।
নথিতে শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, যাতে স্থানীয় শিল্পগুলো প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত না হয় এবং রাজস্ব সংগ্রহ শক্তিশালী থাকে তা নিশ্চিত করে।
এনবিআরের কৌশলের মধ্যে রয়েছে দেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার সময় দেশীয় খাতের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি সতর্ক ভারসাম্যমূলক আইন করা।
কাস্টমস শুল্কের এই ক্রমবর্ধমান সমন্বয় এবং ন্যূনতম আমদানি মূল্য বিলুপ্তি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় আরও নিরবচ্ছিন্নভাবে সংহত করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে উন্নীত করে।
আরও পড়ুন: নিবন্ধিত কোম্পানির ৯২ শতাংশই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি: এনবিআর
ঢাকার ইন্টারনেট-স্যাটেলাইট টিভির ঝুলন্ত ক্যাবল মাটির নিচে নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও দুর্দশাগ্রস্ত ঝুলন্ত ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভির সংযোগ ক্যাবল মাটির নিচে দিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। যদিও বিদ্যুৎ ইউটিলিটিগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এমনকি ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট টিভি ক্যাবলের অপারেটরদের বিদ্যুৎ ইউটিলিটি বিভাগগুলোর চলমান ভূগর্ভস্থ ক্যাবলিং প্রকল্পে যুক্ত করানোও সম্ভব হয়নি।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) তথ্য মতে, তাদের সব ঝুলন্ত সঞ্চালন লাইন মাটির নিচ দিয়ে নিতে ধানমন্ডি এলাকায় প্রথম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক বেশি দাম, ক্রেতা নেই কেরাণীগঞ্জের পাইকারি কাপড় বাজারে
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবি বলেন, ‘ডিপিডিসির পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও কোনো ইন্টারনেট বা টিভি কেবল অপারেটর প্রকল্পে যোগ দিতে রাজি হয়নি। এমনকি এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের বিনামূল্যে অফারও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এমন হতাশাজনক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের আগের কমিটি পুনর্গঠন করে এবং সমাধানের জন্য একটি সভাও আহ্বান করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে বৈঠক হয়নি।
পুনর্গঠিত কমিটির সদস্য সচিব ও পাওয়ার সেলের পরিচালক মো. সেলিম উল্লাহ খান জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয়।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র ঝুলন্ত ক্যাবলের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) দায়ী করেছে।
কয়েক দফা বৈঠকের পর বিদ্যুৎ বিভাগের বিগত কমিটি তাদের সহযোগিতা ছাড়া সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধা বোধ করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (এসসিএল) ও ফাইবারঅ্যাটহোম (এফএএইচ) নগরীতে এনটিটিএন হিসেবে কাজ করছে এবং তারা নগরীতে তাদের প্রধান ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ভূগর্ভস্থ কেবল স্থাপন করেছে এবং প্রায় ১ হাজার ৭৩৪টি বৈধ এবং প্রায় ৫ হাজার অবৈধ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান স্থানীয় হিসেবে বাসাবাড়ি ও অফিসে ঝুলন্ত ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নিয়ম অনুযায়ী, মূল নেটওয়ার্ক থেকে বাসাবাড়ি ও অফিসে ইন্টারনেট সেবা নিতে আইএসপিগুলো এসসিএল ও এফএএইচ থেকে সংযোগ নেওয়ার কথা। সম্প্রতি এনটিটিএনের আরেক প্রতিষ্ঠান বাহন লিমিটেডও এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলছে, কিন্তু এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, আইএসপিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এনটিটিএন’র স্থাপিত লেবেল ডিস্ট্রিবিউশন প্রটোকল (এলডিপি) বা অ্যাকসেস পয়েন্ট (এপি) থেকে সংযোগ নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: স্টেকহোল্ডারদের সাড়া না পাওয়ায় সৌর সেচ কর্মসূচিতে ব্যর্থ সরকারের গ্রিড ইন্টিগ্রেশন নির্দেশিকা
অন্যদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইপিএস প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, কোনো ইন্টারনেট সংযোগে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ও তাৎক্ষণিক সমাধান না পাওয়ায় তারা এলডিপি বা এপি থেকে সংযোগ নিতে চায় না।
এছাড়া এনটিটিএনগুলো তাদের এলডিপি ও এপি থেকে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ আদায় করছে বলে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে নির্বিচারে সঞ্চালন ক্যাবল ঝুলিয়ে বাসাবাড়ি ও অফিসে সংযোগ দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমতাবস্থায় কেবল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনই (বিটিআরসি) হস্তক্ষেপ করে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারে।
অবশেষে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে সমন্বয় করে সব ওভারহেড ক্যাবল ভূগর্ভস্থ করার জন্য ১১ দফা সুপারিশ করে কমিটি।
কমিটি দেখেছে, এলোমেলোভাবে ঝুলে থাকা ইন্টারনেট, নিরাপত্তা ও স্যাটেলাইট টিভির তার শুধু বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার জন্যই বড় হুমকি নয়, রাজধানীর সৌন্দর্যবর্ধনে সরকারের পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
বাহন লিমিটেডের কর্মকর্তা রাশেদ আমিন বিদ্যুৎ বলেন, তারা কারিগরি কারণে ডিপিডিসির আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং প্রকল্পে যোগ দিচ্ছেন না, কারণ এটি আইএসপিএনের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেবে না।
তিনি বলেন,‘তবে আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব ক্যাবল মাটির নিচে নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজ চাষে বদলেছে ফরিদপুরের এক দম্পতির জীবন
স্টেকহোল্ডারদের সাড়া না পাওয়ায় সৌর সেচ কর্মসূচিতে ব্যর্থ সরকারের গ্রিড ইন্টিগ্রেশন নির্দেশিকা
সৌর সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় ব্যর্থ হয়েছে সরকারের নির্দেশিকা। তাই সরকার এখন এ খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের কথা ভাবছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে 'সৌর সেচ পাম্পের জন্য গ্রিড ইন্টিগ্রেশন গাইডলাইন' শীর্ষক একটি নীতিমালা প্রকাশ করে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।
এই নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোলার পাম্প অপারেটরদের উৎপাদিত নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করতে সহায়তা করা। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় বিতরণ সংস্থাগুলোর পাম্প অপারেটরদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধার তিন উপজেলায় সোলার পাম্পে সেচ ব্যবস্থা: খুশি কৃষকরা
স্রেডার কর্মকর্তারা জানান, অফিস ও শিল্প ভবনের ছাদে স্থাপিত সৌর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য থেকে সৌরচালিত সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার ধারণাটি এসেছে।
মৌসুম ব্যতীত অন্য সময়ে সরকার সোলার ইরিগেশন প্ল্যান্ট অপারেটরদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। পাম্প অপারেটররা স্থানীয় বিতরণ গ্রিড লাইন ব্যবহার করে তাদের উৎপাদিত নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করতে পারবে।
কিন্তু ডিজেলচালিত পাম্প প্রতিস্থাপনের বদলে সৌর চালিত পাম্প স্থাপনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি এই নির্দেশিকা।
স্রেডার এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেলচালিত পাম্পের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার পাম্প সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্প, কৃষকের মনে স্বস্তি
কিন্তু স্টেকহোল্ডাররা এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
কুষ্টিয়া ও দিনাজপুর জেলায় সৌর সেচ প্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দীপাল সি বড়ুয়া জানান, এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় তিন হাজার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) এই সাবেক সভাপতি বলেন, ডিজেলচালিত পাম্পের বদলে সৌর পাম্প প্রতিস্থাপনের ফলে সেচ খরচ ৪০-৫০ শতাংশ কমে যায়।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ফসলের মৌসুমে কৃষকদের এখন একটি জমির জন্য দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়, যেখানে ডিজেলচালিত পাম্পে সেচের জন্য চার হাজার টাকা দিতে হতো।’
পাবনায় প্রায় ৩০টি সেচ পাম্প স্থাপনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, একজন কৃষক বা বিতরণ কোম্পানির জন্য নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ (অলস বিদ্যুৎ) কেনার জন্য এ ধরনের প্রকল্প উপযুক্ত নয়।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়া কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে সরকার: নসরুল হামিদ
তিনি বলেন, সৌর সেচ উদ্যোগ তৈরির জন্য অবশ্যই একটি ব্যবসায়িক মডেল থাকতে হবে, যেখানে এটি পাম্প অপারেটর ও কৃষক উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে।
একই মত ব্যক্ত করে স্রেডার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এখন সৌর সেচ প্রকল্পটি সফল করতে ব্যবসায়িক মডেল তৈরির জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের কথা ভাবছে।
সম্প্রতি স্রেডা সৌর সেচ পাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশের ডিজেলচালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় আনতে লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি স্রেডার কর্মকর্তাদের বলেন, সেচকাজে সৌরচালিত পাম্পের সংখ্যা বাড়াতে পরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
কৃষকদের সেচের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: ১০ বছর মেয়াদি সোলার রোডম্যাপ প্রণয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে আইএসএ
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ঈদের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
জলবায়ু তহবিল গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কপ-২৮ এ ঘোষিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, সোলার সেচ পাম্পের উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ডিজেল পাম্পের ব্যবহার কমালে কার্বন নিঃসরণও কমবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ডিজেল পাম্পে বছরে ১০২৩.৩৪ লিটার ডিজেল খরচ হয়। সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয় যা বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চান প্রধানমন্ত্রী
পেঁয়াজ বীজ চাষে বদলেছে ফরিদপুরের এক দম্পতির জীবন
ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় লাভলী আক্তার ও ইমতিয়াজ মোল্লা দম্পতি পেঁয়াজ বীজ চাষে সাফল্যের বাতিঘর হয়ে উঠেছেন। যা স্থানীয়ভাবে ‘কালো সোনা’ হিসাবে খ্যাত।
ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার লাভলী আক্তার ও ইমতাজ মোল্লা দম্পতি গত একযুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করছেন। মাত্র দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করে ৪০ বিঘায় প্রসারিত করেছেন এই দম্পতি। যার ফলে যথেষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে তাদের নিজস্ব জমিতে বহুতল ভবনে যেমন বেড়েছে জৌলুস, তেমনি জীবনযাপনে এসেছে ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তন।
দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে নিয়ে এখন তাদের ব্যয়বহুল সংসার। যা এই ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বদৌলতে তাদের কাছে ধরা দিয়েছে। প্রতিবছর তারা উপার্জনের টাকায় নিজেদের স্থাবর সম্পত্তিও বাড়াতে পারছেন। নতুন করে কিনছে জায়গা-জমি।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্ডে ব্যয়করকে যৌক্তিক করতে চায় সরকার
লাভলী আক্তার বলেন, বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকেরা পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। তিনিও পুরোদস্তর স্বামীকে সহায়তায় নেমে পড়েন। এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয় তাদের। এরপর আর থেমে থাকেননি তাদের সমৃদ্ধির যাত্রা।
তিনি আরও বলেন, আমি এই বীজের টাকা দিয়ে ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে বাড়িতে বিল্ডিং দিয়েছি। প্রতিবছরই নতুন জমি কিনছি। এক সময় যা ছিল অকল্পনীয়, এখন তাই বাস্তব আমাদের কাছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার তারা বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ পেঁয়াজ বীজ পাবেন বলে আশা করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে এই বীজের আবাদ করতে এক লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। সেই হিসাবে সবমিলিয়ে তাদের এবার প্রায় কোটি টাকার মতো লাভ থাকবে বলে তারা আশা করছেন।
আরও পড়ুন: অস্বাভাবিক বেশি দাম, ক্রেতা নেই কেরাণীগঞ্জের পাইকারি কাপড় বাজারে
অস্বাভাবিক বেশি দাম, ক্রেতা নেই কেরাণীগঞ্জের পাইকারি কাপড় বাজারে
ক্রেতা খরায় ভুগছে কেরাণীগঞ্জের কাপড়ের পাইকারি মার্কেট। সাধারণত শবে-বরাতের আগে থেকেই ঈদ বাজারের ব্যস্ততা শুরু হয় বিক্রেতাদের। কিন্তু এ বছর বেচাকেনা জমেনি এখনো। ব্যবসায়ীদের দাবি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারেও। কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় কমেছে খুচরা ক্রেতা। যারা আসছেন তারাও কিনছেন প্রয়োজনের তুলনায় কম কাপড়।
এদিকে পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেঞ্জি, শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, থ্রি পিস, বোরকা ও থান কাপড় মান ভেদে পাইকারি বিক্রিতে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটি শার্ট ও প্যান্টে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সাধারণ গেঞ্জিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং চায়না গেঞ্জিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এদিকে প্রতিটি শাড়িতে গজপ্রতি দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিটি শাড়িতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে দাম বেড়েছে। আবার পাঞ্জাবি ও পায়জামাতে পিস প্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে দাম বেড়েছে।
থান কাপড় ও থ্রি পিসে গজ প্রতি দাম বেড়েছে ১২-১৫ টাকা করে। বোরকায় প্রতি পিসে দাম বেড়েছে ১৫০-৩০০ টাকা।
আরও পড়ুন: রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় শহরাঞ্চলে 'সঙ্কুচিত মধ্যবিত্ত'
রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় শহরাঞ্চলে 'সঙ্কুচিত মধ্যবিত্ত'
রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লাগামহীন হওয়ায় খুবই কঠিন সময় পার করছে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। রমজানে তাদের মাসিক ব্যয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
এমন অনেকেই আছেন যাদের বাসা সুপারশপগুলোর আশেপাশে, অথচ তারা এখন স্থানীয় কাঁচাবাজার থেকে বাজার করছেন। আর মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি কারোর রউপর ভরসা না করে নিজেই বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করছেন, যাতে কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।
তাদের একজন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিজীবী কাজী শরিফুল হক ইউএনবিকে বলেন, রমজানে ইফতার ও সেহরির সময় যে খাবার খাওয়া হয়, তাতে অন্য সময়ের থেকে মাসে খাবার খরচ বেশি হয়। এসময় সাধারণত ফল, গরুর মাংস ও খাসির মাংসের মতো কিছু জিনিসের ব্যবহার কমে যায়।
ইউএনবি শরিফুলের সঙ্গে রাজধানীর প্রধান কাঁচাবাজার কাওরানবাজারে কথা হয় ইউএনবির। যেখানে তিনি গিয়েছিলেন পুরো সপ্তাহের বাজার করতে। একটি কেনাকাটার তালিকায় রয়েছে ফলমূল, শাকসবজি, মাছ ও মুরগি।
তিনি বলেন, তার অভিজ্ঞতায় বেশিরভাগ পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মুরগির মাংস ১৫ থেকে ২০ টাকা, ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খেজুর পাওয়া যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, আপেল, মাল্টাসহ কিছু ফল প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে।
আরও পড়ুন: রমজানে ইফতার পার্টি না করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান: প্রধানমন্ত্রী
শরিফুল জানান, চাল ও ভোজ্যতেলের দাম আপাতত স্থিতিশীল। তবে সংসার খরচ শুধু বাজারের খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধ (স্বাস্থ্য), পানির বিল, গ্যাসের বিল, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়াসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন বিল ও দ্রব্যমূল্য শহরের মধ্যবিত্তকে চেপে ধরছে, বিশেষত শরিফুলের মতো প্রান্তিক অবস্থানের মানুষকে। সর্বশেষ দুই বছর আগে তার কর্মস্থলে বেতন বাড়ানো হয়েছিল এবং এই দুই বছরে দেশে মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে। এমনকি তিনি যে সংস্থায় কাজ করেছিলেন সেই সংস্থাটিও এই দুই বছরে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এ কারণে তিনি আর্থিক চাপে হতাশ হয়ে পড়েন।
তবুও ২-৩ বছর আগে একই লোকদের সঙ্গে কাটানো ভালো সময় শরিফুলকে এখনো আশাবাদী করে তোলে।
২০২১ সালে ঢাকার ফার্মগেটে চার সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের পাশাপাশি গ্রামে বসবাসরত বাবা-মায়ের খরচও দিয়েছেন তিনি। তারপরও প্রতি মাসে সামান্য কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছেন শরিফুল। ‘আর এখন আমাকে আমার আগের সঞ্চয় দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হচ্ছে’- ক্ষোভের সঙ্গে বলেন শরিফুল।
ইদানিং রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে শরিফুলের মতো অবস্থা অধিকাংশ ক্রেতাদের।
২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে 'স্কুইজড মিডল' শব্দটি চয়ন করেছিলেন।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ২০১১ সালে এটিকে তাদের 'ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার' হিসেবে বিবেচনা করে। এটির সংজ্ঞায় বলা হয়, "এটি এমন একটি শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত সমাজ, যাদের আয় নিম্ন বা মধ্যম স্তরের। এরা মুদ্রাস্ফীতি, মজুরি হিমায়িত ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় খরচ কমাতে বাধ্য হয়।”
শরিফুল ও তার আশেপাশের সবার অবস্থা এরকম।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ইউএনবিকে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ও এলোমেলোভাবে বিনিময় হারের ওঠানামা (আমদানি পণ্যের দামকে প্রভাবিত করে) শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছে, কারণ শহুরে মানুষ সরবরাহ চেইনের উপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে একটি পরিবারের ভোগ করা পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় নিজের জমিতে, যা শহরে হয় না। মধ্যবিত্তদের বেশিরভাগই এমনকি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নগর জীবনকে আরও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
কাওরানবাজারের শরিফুলসহ অন্যদের একই রকম অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাহমিদা বলেন, শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম নয়- স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যয় ও নানা ধরনের (ইউটিলিটি) বিলও বেড়েছে।
ফাহমিদা বলেন, ‘কোভিডের প্রাদুর্ভাব (২০২০-২০২২) কমে যাওয়ার পর পরিবারের আয়, মূলত বেতন বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পড়েছেন চাকরিজীবীরা।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২৩ সালের নভেম্বরে টানা ২২তম মাস বাংলাদেশে গড় মজুরি প্রবৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির হারের অনেক নিচে রয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমদানি হোক বা দেশে উৎপাদিত হোক সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, চাকরিজীবীদের আয় না বাড়লেও অন্যদের পাশাপাশি তাদের ব্যয়ও বেড়েছে, তবে এটি নির্দিষ্ট আয়ের গোষ্ঠীর জন্য একটি বিশেষ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, যদি 'যৌক্তিক ও পদ্ধতিগতভাবে' দাম বাড়ানো হয় অর্থাৎ বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলা, তাহলে এই বোঝা নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকবে। কিন্তু যখন স্বেচ্ছাচারিতা করে, তখন জনগণের পক্ষে এটি খুব কঠিন হয়ে যায়।
এমনটি এটি ঘটছে কি না সেদিকে কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, কারণ দেশে মূল্যবৃদ্ধি, মজুতদারি ইত্যাদির বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যায়, সেখানে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, বাজারে স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান ক্যাব সভাপতি।
আরও পড়ুন: রমজানে ২৫ মার্চ পর্যন্ত খোলা থাকবে স্কুল: শিক্ষা মন্ত্রণালয়