বিশেষ সংবাদ
উপকূলে অশনিসংকেত: কয়রায় অসময়েও ভাঙছে বাঁধ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নদী ভাঙনে প্রতি বছর প্লাবিত হওয়া খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে কয়রার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার-ভাটার তীব্রতা এবং নদীর গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা উপকূলীয় এই অঞ্চলের প্লাবন-ঝুঁকিও বাড়ছে।
এদিকে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন আশার আলো জাগালেও কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্পে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার পরও অবৈধভাবে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে নদী চরের সবুজ বনায়ন। যার ফলে বাঁধের স্থায়িত্ব কমছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, গেল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দোশহালিয়া থেকে হোগলার মধ্যকার একটি অংশের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করেন। এ ছাড়া নদীতে পানির চাপ ও কোনো প্রকার ঝড়ো বাতাস ছাড়াই গত ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বাঁধটির বিশাল অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে প্লাবিত হয় সংলগ্ন এলাকা। পরের দিন ভাটার সময় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হলেও তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার পর থেকেই নদীর পাড়ের মাটি সরে যাওয়ার অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, বাঁধের বড় বড় খণ্ড নদীতে ধসে পড়ে ২০০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের স্থায়ী সংস্কার এবং নদী খননে অবহেলার কারণে এই অঞ্চলে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ধানচর, শামুকপোতা, কুতুবেরচর, গাবতলা ও খোলপেটুয়া পাড়ের বেশ কয়েকটি এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাটিয়াভাঙ্গার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ সেদিন রাতের ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনে দিয়ে বাঁধটা নদীতে চইলে গেল। মনে হচ্ছিল, আজই বুঝি সব শেষ; বাড়িঘর সবকিছুই বুঝি তলাই যাবেনে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ‘প্রতিদিনই নদী এগিয়ে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে জরার্জীণ থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
মাটিয়াভাঙ্গা বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুই বছর যাবৎ বিভিন্ন প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও তাতে রয়েছে চরম ধীরগতি। মাটিয়াডাঙ্গার ওই অংশটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় থাকলেও সংস্কারে গুরুত্ব দেননি ঠিকাদার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৪/১ ও ১৩–১৪/২) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চরবনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙনকবলিত এলাকাটিও এই প্রকল্পের অংশ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘সুন্দরবনঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনার পাশে থাকা এ বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তার ভাষ্যে, ‘অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। তাই গতরাতে আগের ফাটলটা হঠাৎ বড় রূপ নিয়ে ধসে গেছে।’
রাতে গ্রামবাসী ও পাউবো মিলে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নদীর ভাঙন ঠেকাতে রিং বাঁধ কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, রিং বাঁধের স্থায়িত্ব খুব স্বল্প। যেকোনো মূহুর্তে সেটি ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত যদি মূল বাঁধ সংস্কার করা না হয়, তাহলে ধ্বসের পরিধি আরও বাড়তে পারে।
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেখানে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, তার আশপাশ থেকেই বালু উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া নদীর চর থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে নদীর চরের গাছ কেটে বনায়ন নষ্ট করা হচ্ছে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাগরিক সমাজের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালের ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রত্যেক বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো না কোনো এলাকা ভেঙে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এলাকা প্লাবিত হাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেও শীত মৌসুমে প্লাবিত হলো। শীতকালে এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখিনি।
‘আমাদের প্রাণের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে সরকার বরাদ্দ দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু বরাদ্দের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিষয়টি কি শুধুই প্রকৃতির তাণ্ডব, নাকি বাঁধের কাঠামোগত দুর্বলতাও—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর মাটিয়াডাঙ্গা এলাকার মেগা প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে পাউবোর সাতক্ষীরা–২ বিভাগ। ওই বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, ‘কাজ চলমান অবস্থায়ই বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি। সকাল থেকে জোরেসোরে আমাদের বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’
২ দিন আগে
বেনাপোলে দুই মাস আটকে ১৫০ সুপারির ট্রাক, প্রতিদিন লোকসান ৩ লাখ টাকা
বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রায় দুই মাস ধরে আটকে আছে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের দেড় শতাধিক রপ্তানিমুখী সুপারির ট্রাক। দীর্ঘ এই অচলাবস্থার কারণে রপ্তানিকারকদের প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ২ হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের মান নির্ণয় ও কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টির ফলেই এই রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
বিশ্বে সুপারি উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং গুণগত মানের কারণে ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারি ভারতে রপ্তানি হয়। তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সুপারি আমদানিতে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ। এমন রমরমা বাণিজ্যের মধ্যেই দেড় শতাধিক সুপারির ট্রাক প্রায় দুই মাস ধরে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে।
দীর্ঘদিন বন্দরে আটকে থাকায় পণ্যজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ট্রাক চালকদেরও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
আটকে থাকা সুপারি বহনকারী ট্রাকচালক শাহ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মাস ২৭ দিন ধরে এখানে আটকে থেকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওপারের ব্যবসায়ীরা সুপারির বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব ট্রাক দেরিতে নিচ্ছেন বলে আমাদের সন্দেহ।
৩ দিন আগে
গোমতীর দুই পাড়ে মাটি লুটের মহোৎসব, মাটিখেকোদের ‘ম্যানেজে’ নির্বিকার প্রশাসন
কুমিল্লায় গোমতী নদীর দুই পাড়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। শীতের শুরুতেই আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া থেকে গোলাবাড়ি পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে ট্রাক্টর নিয়ে রাতদিন মাটি তোলা হচ্ছে। নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর বাঁধ, সংরক্ষিত সড়ক ও সেতু। বিষয়টি স্থানীয়দের উদ্বেগের কারণ হলেও জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
স্থানীয়রা জানান, নদীর উত্তর তীরে ৫ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ তীরে মোটামুটি ২৫ কিলোমিটার এলাকায় ট্রাক্টর ওঠানামা করছে। এসব ট্রাক্টরে নদীর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা ও বসতবাড়িতে ব্যবহারের জন্য। নদীর উৎসমুখ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার ও গোলাবাড়ি থেকে শুরু করে পালপাড়া পীরবাড়ির সামনে পর্যন্ত উভয় তীরে মাটি কাটার প্রক্রিয়া চলছে প্রকাশ্যে। এতে গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাঁধসংলগ্ন পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে পিচ উঠে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর দক্ষিণ তীরে দুর্গাপুর, ভাটপাড়া, পালপাড়া পীরবাড়ি, কাপ্তানবাজার, চানপুর মাস্টারবাড়ি, শালধর এবং সামারচর এলাকায় অন্তত ২০টি ট্রাক্টর দিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে। এসব ট্রাক্টর চলাচলের জন্য সড়কের একটি অংশ কেটে বাঁধের ভেতর দিয়ে চলার পথ তৈরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, নদীর উত্তর পাড়ে ছত্রখিল এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই চলছে মাটি কাটার কাজ। বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়া ও নদী তীরের গাছের নিচ থেকেও মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। চানপুর বেইলি সেতু এবং কাপ্তান বাজার পশ্চিম অংশেও মাটি কাটতে দেখা গেছে।
নদীর দুই তীরে মোট ৭টি ঘাট থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোমতীর স্বাভাবিক গতিপথ, নদীর চরসহ তীরবর্তী পরিবেশ।
৪ দিন আগে
বিয়ানীবাজারের সবুজ দুনিয়া সংকুচিত, অতিথি পাখি উধাও
শীতের মৌসুম চলে এলেও সিলেটের বিয়ানীবাজারে এবার কোথাও অতিথি পাখির দেখা মিলছে না। জলাশয়, জলাধার, খালবিল, নদীনালা—কোথাও এ বছর অতিথি পাখির কলরব নেই।
১০ বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন বিল, ঝিল, নদীনালা ও খালগুলোতে শীতের মৌসুম আসতে না আসতেই নানা জাতির ও আকৃতির অতিথি পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে উঠত পুরো উপজেলা। কিন্তু অরণ্যাঞ্চল সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় পরিযায়ী পাখিরা তাদের গন্তব্য বদলেছে।
বিয়ানীবাজারে গত কয়েক বছর ধরেই বনভূমি উজাড়ের মহোৎসব চলছে। কংক্রিটের ভারে হারিয়ে যেতে বসেছে গাছগাছালি। ফসলের খেতে কীটনাশক ও ঘাস মারার বিষ প্রয়োগের ফলে ঘাসজমির দেখা পাওয়াও এখন অনেকটা দুর্লভ। ফলে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য হারিয়ে পাখিদের কোলাহল ক্রমেই কমে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে না। বাড়ির আঙিনায় পাখিদের কিচিরমিচির ডাক, গাছের ডালে ডালে ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসা পাখিদের সেই কলকাকলি আর নেই। অথচ একসময় ছিল যখন গাছে গাছে, ঝোপ-ঝাড়ে, মাঠ-ঘাটে, বিলে-ঝিলে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনায় দোয়েল, টিয়া, ঘুঘু, কাক, কোকিলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির পাখির বিচরণ চোখে পড়ত।
শীতের আমেজ শুরু হলেই উপজেলার মুড়িয়ার হাওরসহ ছোট-বড় বিলে আগে বিভিন্ন অতিথি পাখির ঢল নামত। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে হাওর ও বিলের পানি শুকাতে শুরু করলে সেখানে পুঁটিসহ ছোট ছোট মাছ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামত দেশি বকসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখি। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে শীতের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে বসন্তে আবারও নিজ দেশে পাড়ি জমাত অতিথি পাখিরা। কিন্তু উপজেলার চিরচেনা অভয়ারণ্যগুলোতেও এবার পাখির বিচরণ নেই। অতিথি পাখি আসার হার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
৫ দিন আগে
ভূমিকম্পে মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল, আতঙ্কে মানুষ
জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলার সংযোগ সেতু হিসেবে পরিচিত বিশাল ‘মতলব সেতু’র মাঝখানের জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং সেতুটি নিয়মিত ব্যবহারকারী যানবাহনের চালকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ২১ নভেম্বর সারা দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ক্ষতি এড়াতে পারেনি স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থায় অতি গুরুত্বপূর্ণ মতলব সেতু। ভূমিকম্পের পর সেতুটির মাঝখানের জয়েন্টে ফাটল লক্ষ করে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে বড় ফাঁকা। সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে পড়েছে রড। প্রতি দিন ছোটবড় হাজার হাজার যানবাহন চলছে এই ভগ্নদশাগ্রস্ত সেতুর ওপর দিয়ে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপতে থাকে। সেতু পারাপারের সময় যানবাহনের চালকসহ যাত্রীদের চোখেমুখেও আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়। তাদের সঙ্গে কথা হলেও উৎকণ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা।
এ ছাড়া দুই পাশের সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সেতুর নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত তো নয়, যেন মরণফাঁদ। অতি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে সেতুর মাঝ দিয়ে ফাটল দেখা যাচ্ছে। ভূমিকম্পের আগে এরকম ছিল না। সেতু পরিদর্শন করে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান তিনি।
কামরুল হাসান ও গোলাম নবী বলেন, প্রতি দিন ঝুঁকি নিয়েই জরুরি পরিষেবার গাড়ি, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ শত-সহস্র সাধারণ মানুষ দিনরাত সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। তাই সেতুর দুপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কে সৃষ্ট গর্ত এবং মাঝখানে সৃষ্ট ফাটল সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সেতুর অবস্থা ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দেন কলেজ শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদিন। স্কুলশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘প্রতি দিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা-যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার করার সময় এটি কাঁপতে থাকে। তখন মনে হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়ল।’
শুধু স্থানীয় নয়, আন্তঃজেলা ও ঢাকাকেন্দ্রিক যোগাযোগের জন্যও মতলব সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা—নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ২৪ ঘণ্টা এই সেতুটি ব্যবহার করে থাকে। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের সুত্র জানায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ, চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানো এবং যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ৫৬ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকায় ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের উত্তর-পূর্ব পাশে বিশাল এ সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
সেতুটিতে ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দু-পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক ১.৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাবু বলেন, ‘মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করছে। সেতুর দুপাশের রাস্তারও বর্তমানে বেহাল দশা। সেতুর মাঝখানের জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।’
সেতুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ‘অতি দ্রুত সেতুটির সংস্কার করা হবে।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ আলিউল হোসেন বলেন, ‘সেতুটির বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে প্রকৌশলী পাঠানো হবে।’
৬ দিন আগে
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: স্বপ্ন নাকি অধরা বাস্তব?
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজ নিয়ে `ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ (ডিসিউ) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অনিশ্চয়তা-অনৈক্য যেন কাটছেই না।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় পেলেও ক্লাস শুরু না হওয়া, অধ্যাদেশ জারি, প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোয় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের অন্তভুক্তি, নারী শিক্ষার্থীদের কাঠামোগত শঙ্কা, ঐতিহ্যবাহী উচ্চ মাধ্যমিক স্তর নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাত্রা
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকা এই ৭ কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। বর্তমানে এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন।
২০২৪ সালের ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে’ দেশের পট পরিবর্তনের পর সে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পরে, সাত কলেজের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে গত ২৭ জানুয়ারি কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মঞ্জুরি কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি কাঠামো করার প্রস্তাব দেয়।
ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়, এই পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারির দায়িত্ব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি’ নামটি চূড়ান্ত হয়। নাম চূড়ান্ত করার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশীজনের মত নেয়।
চলতি বছরের ১৮ মে অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকের হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জুলাই মাসে প্রস্তাবিত ডিসিউ স্নাতক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর ২৬ আগস্ট ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে—বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান— ৩ ইউনিটে মোট আসন সংখ্যা ১১ হাজার ১৫০টি। তিন ইউনিটে প্রায় ৭২ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত রূপরেখা তৈরি করে। বর্তমানে সংসদ কার্যকর না থাকায়, অন্তর্বর্তী সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাদেশ আকারে জারির উদ্যোগ নেয়।
অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব পড়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির ওপর। প্রস্তাবিত প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কাঠামো নিয়ে অংশীজনদের মতামত জানতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে।
যারা এই সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই ২০১৯–২০, ২০২০–২১ ও ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
খসড়া অধ্যাদেশের ৫২ (খ) অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা ঢাকেবির অন্তর্ভুক্ত।
খসড়া অধ্যাদেশে প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্য চরমে ওঠে।
এক বছরের সেশনজটে ডিসিইউ
প্রস্তাবিত ডিসিইউতে প্রথমবারের মত ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২৩ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হয়নি। অথচ দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস চার-পাঁচ মাস ধরে চলছে। এমনকি ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের দুটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন চলছে।
ফলে প্রস্তাবিত ডিসিইউ’র প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার আগেই এক বছরের সেশনজটে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবিতে গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
বিশ্ব সঙ্গীতশিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
২২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভর্তির তারিখ ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ায়, এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়। পুনর্নির্ধারিত তারিখেও ক্লাস শুরু না হওয়ায় এদিনই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
স্কুলিং নিয়ে অনৈক্য
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসে বিভক্ত করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানো হবে।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস, ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে স্কুল অব সায়েন্স।
ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে অ্যাপ্লাইড ম্যথেমেটিক্স, জুলোজি, ড্যাটা সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিজিক্স, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, বোটানি ও ফরেনসিক সাইন্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সাইকোলজি, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ স্কুলটি সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে।
এই ক্যাম্পাসে জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইকোনোমিকস, ফিল্ম স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব বিজনেস স্কুলটি সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। এ ক্যাম্পাসে অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
মানবপাচার, অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশি পাসপোর্টের প্রতি বৈশ্বিক আস্থা কমছে
স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস স্কুলটি কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে।
তবে, খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের পর থেকেই এই হাইব্রিড বা স্কুলিং পদ্ধতির বিরুদ্ধে নানামহল থেকে বিরোধীতা করা হচ্ছে।
ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত সিস্টেমের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোর স্বাতন্ত্র্য ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের একাংশ। এমনকি ঢাকা কলেজের স্বকীয়তা রক্ষায় খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কলেজটির প্রাক্তন ছাত্ররা।
প্রকাশিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি হাইব্রিড পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ৩৫%-৪০% ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এবং সকল পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
স্বকীয়তা বনাম নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
এমনকি শিক্ষার্থীদের একাংশ এখনো ৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান নি।
৭টি কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ সময়সীমা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে, ইডেন কলেজকে শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু হলে, তা এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ইডেন কলেজের স্বতন্ত্রতা রক্ষায় সকালে সড়ক অবরোধ করেন কলেজটির ছাত্রীরা। পরে ইডেন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে আসে ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন ইডেন কলেজের শিক্ষকরাও।
ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র শেখ ইউএনবিকে বলেন, ‘৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার প্রস্তাবটি বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, গবেষণাসুবিধা ও স্থায়ী শিক্ষকসংখ্যা এসব মৌলিক শর্ত পূরণ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদা শুধু নামেই মূল্য যোগ করবে, শিক্ষার মানে নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি না করে বিদ্যমান কলেজগুলোর শিক্ষার স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। উন্নয়নকে নামের সম্প্রসারণ নয়, মানের নিশ্চয়তা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত।
শিক্ষকদের আপত্তি
খসড়া অধ্যাদেশের ২ (ফ) অনুযায়ী, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা ঢাকেবির শিক্ষক নন, তাই ওই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস–পরীক্ষা নেওয়ার এখতিয়ার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নেই। এদিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব জনবল নিয়োগ দেয়নি, ফলে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কুকি-চিনের উত্থান বনাম বান্দরবানের পর্যটন: ক্ষতির পাহাড়
ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদ আছে দেড় হাজার। এর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক স্থায়ী পদ প্রায় ১১০০। আর ডেপুটেশনের পদ আছে চারশ।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয় বিষয়ভিত্তিক পদের বিপরীতে। সাতটি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হলে এ দেড় হাজার পদ শিক্ষা ক্যাডার থেকে বিলুপ্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা, যা তাদের ‘নানা জটিলতায় জর্জরিত’ পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করবে।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির ‘স্কুলিং’ পদ্ধতি বাতিল এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করে আইন করার দাবি জানিয়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষকরা। ‘সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটি’ ব্যানারে তারা এ দাবি জানান।
এর আগের দিন, সোমবার শিক্ষকরা চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতির হুশিয়ারি দেন।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শঙ্কা
এদিকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাবিত কাঠামোতে হলে তা কলেজগুলো ‘স্বকীয়তার’ জন্য হুমকি হবে বলে মনে করছেন কলেজগুলো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট মোড় অবরোধ করে ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
যেখানে নায়কেরা শুয়ে আছেন, সেই তিন নেতার মাজার মাদকসেবীদের দখলে
ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক বহাল রাখা এবং কলেজের স্বকীয়তা রক্ষার দাবিতে এর আগেও আন্দোলন করেছেন শিক্ষালয়টির উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি খসড়া আইনে উচ্চ মাধ্যমিক বহাল রাখার কথা বলা হলেও ধীরে ধীরে তা তুলে দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৭ কলেজের মধ্যে ৫টি— ঢাকা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, কবি নজরুল ও সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু রয়েছে।
চূড়ান্ত অধ্যাদেশ ‘সময়সাপেক্ষ’
চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সুধীজনের কাছ থেকে ছয় হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব মতামত বিবেচনায় নিয়ে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত সময়সাপেক্ষ বিবেচনা করে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।
তবে, এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে রাস্তা অবরোধ এবং আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে রাখেন। যে কারণে নিউমার্কেট থেকে শাহবাগ ও আজিমপুরমুখী রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এরপর তারা আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম দেন। এর মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে রবিবার থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবেন।
ডাকসু: নজর কাড়ছে লিগ্যাল নোটিশ, ডলারসহ জেন-জি প্রচারণা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।”
ইউজিসির সদস্য ও ৭ কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গঠিত কমিটির সদস্য ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ৭ কলেজ নিয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমাদের টার্মস অব কন্ডিশন অনুযায়ী আমাদের যে দায়িত্ব ছিল, তা আমরা সম্পন্ন করেছি। এরপর আমাদের আর কোন ভূমিকা নেই, বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে।
এমতাবস্থায়, এখন পর্যন্ত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি স্বপ্ন ও স্থবিরতার মধ্যে আটকে আছে। অবিশ্বাস, প্রশাসনিক শূন্যতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়, স্বায়ত্তশাসন ও শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতেই তোলা।
৭ দিন আগে
সিলেটে মশার উপদ্রব, নগরবাসীকে ‘পরিচ্ছন্ন’ থাকতে বলছে কর্তৃপক্ষ
সিলেটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। ঘরের ভেতরেও মিলছে না স্বস্তি। মশা কমাতে নগর কর্তৃপক্ষ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও বাস্তবে তার কোনো প্রভাব নেই। ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছড়ানো ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে নগরবাসীর দাবি, মশার কামড়ে নগরজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু-আতঙ্ক। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি-জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে, আর্থিক সঙ্কটের কারণে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ‘নগরবাসী সচেতন হলে ও নগরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারলে বছরে এক-দুইবার অভিযানই যথেষ্ট।’
চলতি অর্থবছরে মশা নিধনে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। গত অর্থবছরেও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এত ব্যয়ের পরও সেই একই অবস্থা। মশার কামড় সহ্য করা নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে।
মশার উপদ্রব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরজুড়ে ডেঙ্গুর আতঙ্কও বাড়ছে। সিলেটে প্রতি দিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই মৃত্যুও; চলতি বছরে সিলেটে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য সিসিকের দাবি, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দাদের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ রোগীই বিভিন্ন উপজেলার।
জানা গেছে, মশক নিধনে সিসিকের স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। প্রতি বছর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক কর্মীকে দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করানো হয়।
সিসিক জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মশা দমনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ৪ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (টেমেপস ৫০ ইসি) এবং ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড (ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি) কেনা হয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সমপরিমাণ ওষুধ কিনেছিল কর্তৃপক্ষ।
বছরে কোটি কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করলেও সে তুলনায় সেবা মিলছে না। যদিও সিসিকের দাবি, ৩০-৪০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তবে এসব কর্মীদের নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায় বছরে মাত্র এক-দুইবার।
নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে বসা কলেজছাত্র সুমন শাওন জানান, বিকেল বেলাও বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্প করা যায় না। মশা এমনভাবে কামড়ায় যে দাঁড়িয়ে থাকাও দায় হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, ‘আধা ঘণ্টাও হয়নি বন্ধুদের সঙ্গে শহিদ মিনারে এসেছি, কিন্তু মশার তাণ্ডবে না পারছি দাঁড়িয়ে থাকতে, না পারছি বসে গল্প করতে।’ কিছুক্ষণ পর একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই বন্ধুদের নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, খুব দ্রুত ড্রেন, নালায় সিসিকের কীটনাশক ব্যবহার করা জরুরি।’
নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অপু বলেন, ‘এমনিতেই চারদিকে জ্বর-সর্দি ছড়িয়ে পড়ছে। কোনটা ডেঙ্গু আর কোনটা সাধারণ জ্বর, তা বোঝা যাচ্ছে না। ফলে মশার কারণে সাধারণ জ্বর হলেও অনেকে ডেঙ্গুর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে শরীরের হাত-পায়ের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি-জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসে ড্রেন, খোলা জায়গা ও বাসার আঙিনায় ধোঁয়া স্প্রে করে যান। এতে সাময়িকভাবে মশার আক্রমণ থেকে কিছুটা রেহাই মিলেলেও স্থায়ী কোনো সুফল মিলছে না।’
সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীতে মশা নিধনের জন্য প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৪৫ জন মশক নিধনকর্মী ও ৭ জন সুপারভাইজার দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন, যা যথেষ্ট নয়। ওয়ার্ডভিত্তিক কমপক্ষে ৪-৫ জন কর্মী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিতে হবে। এ হিসেবে সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডে দুইশতাধিক কর্মী প্রয়োজন। এসব কর্মীদের বেতন-ভাতা সিসিকের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়। তাই আর্থিক সংকটের কারণে স্থায়ীভাবে কোনো কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে কর্মী নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছি, কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মশা নিধনের জন্য নগরীতে বছরে ২-৩ বার বিভিন্ন স্থানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। নিয়ম হচ্ছে প্রতি মাসে কীটনাশক ব্যবহার করা। তাই বাস্তবিকভাবে স্থায়ী সুফল পাওয়া সম্ভব হয় না। সীমিত সামর্থ্য থেকে সিসিক যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নগরবাসী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন না করবে এবং সচেতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। নগরবাসী সচেতন হলে ও নগরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারলে বছরে এক-দুইবার অভিযানই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ওষুধ কিনে পরিকল্পনামতো কাজ করতে না পারলে এটি অপচয় হবে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।’
৯ দিন আগে
বন্যার পলিতে উর্বর উত্তরের চরাঞ্চল, চাষাবাদের ধুম
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের নদ-নদীগুলোর তীর এখন ধুঁ ধুঁ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বালুময় জমিগুলোর ওপর বন্যার রেখে যাওয়া পলি জমে বেলে-দোআঁশে পরিণত হওয়ায় চাষাবাদের ধুম পড়েছে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে।
কৃষি বিভাগ বলছে, উত্তরের এসব নদীতে প্রায় ৭৮৬ টি চর রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব চরে এবার ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বিভিন্ন প্রকার ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার টন।
কৃষি বিভাগ মনে করে, চরের ফসলে ঘুরে দাঁড়াবে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এক ফসলেই তাদের সারা বছর চলে যায়, বলেন এই কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর চরে কৃষিজমিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পেঁয়াজ, আদা, রসুন, শিম, ধনেপাতা, গাজর, কপি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, সরিষা, ভুট্টার আবাদ হয়েছে। সব ফসলেরই ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা।
রংপুরের গঙ্গাচরার ইচলির চরের হোসেন মিয়া বলেন, তিস্তার চরে ৩ বিঘা জমিতে আলু, তিন বিঘায় বেগুন ও ২০ শতক জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছি। ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে এ মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
শুধু হোসেন নন ওই এলাকার কৃষক হাবিবুর, রহিম ও খায়রুল বলেন প্রায় একই কথা। তাদের দাবি, যেটুকু জমিতে আবাদ করেছি, ফলন ভালো হলে ৬০-৭০ হাজার টাকা করে লাভ হবে তো হবেই।
লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষি জোনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসল বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করছেন। চরের কৃষকের একটাই দুঃখ; উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারে সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন থেকে বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয়, তাতে অন্তত ২-৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ গংগাচড়ায় আছে মাত্র একটি হিমাগার। তাছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল থেকে কৃষক উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারেন না।
কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমায় তা অনেক উর্বর। রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, তিল, তিশিসহ শাকসবজি চাষ বেশি হচ্ছে।
চর নিয়ে কাজ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বন্যা চলে যাওয়ার পর চরের জমিতে যে পলি থাকে, তা অত্যন্ত উর্বর। এ কারণে প্রতি বছরই বন্যার পর কৃষিতে বাম্পার ফলনের দেখা পান চরের কৃষকরা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পান না চাষিরা।
তিনি মনে করেন, তিস্তাসহ অন্যান্য নদী যদি খনন করা হয়, তাহলে চরের জমিগুলো জেগে উঠবে এবং উত্তরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরের ৮ জেলার ৭৮৬টির বেশি চরে যে ফসল উৎপাদন হবে, তাতে ২০০ কোটি টাকা আয় হওয়া সম্ভব।
ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রণোদনাসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা। বন্যায় চরের যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ইতোমধ্যেই সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রংপুর অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।
১০ দিন আগে
সেতু নির্মাণে স্থবিরতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিন ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নরেন্দ্রপুরের কাঁচরার খালের ওপর নির্মাণাধীন একটি সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন শাহজাহানপুর, আলাতুলী ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
জানা গেছে, সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর কাঁচরার খালের ওপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২৩ সালে কাজ শুরু করে। চলতি বছরের ৬ মার্চ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি। পরে সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মূল কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলেও সংযোগ সড়কসহ বাকি কাজ আটকে আছে।
১১ দিন আগে
দর্শনার্থী বরণে প্রস্তুত কুমিল্লার শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর
বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অমূল্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলের কোলে, সবুজে মোড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিহার শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতা, স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জীবন্ত সাক্ষ্য।
হেমন্তের শেষভাগে শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন এ দুই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে সাজানো হয়েছে ফুলের বাগান, উন্নত করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনরাত কাজ করছেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত শালবন বৌদ্ধ বিহারটি খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ এবং চারপাশের দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ মিটার। কেন্দ্রে অবস্থিত মূল মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে ১১৫টি কক্ষ, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিদ্যা ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন। প্রতিটি কক্ষে তিনটি করে কুলুঙ্গি ছিল, যেখানে রাখা হতো দেবমূর্তি, প্রদীপ ও ধর্মীয় সামগ্রী।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে পাওয়া গেছে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, যা এ অঞ্চলে একসময়কার সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশ ঘটার প্রমাণ। বিহারের নামকরণ হয়েছে এখানকার শাল-গজারির ঘন বন থেকে, যার অবশিষ্ট কিছু এখনো টিকে আছে।
১৫ দিন আগে