বিশেষ সংবাদ
খরায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা; বাজারেও সংকট
দেশে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। দাম বাড়ছে ক্রমবর্ধমান গতিতে। এর মধ্যে তীব্র খরায় মানিকগঞ্জে কমে গেছে কাঁচা মরিচের উৎপাদন। এ অবস্থায় ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপাদন হয়। এই দুই জেলায় উৎপাদিত মরিচ দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণের পর দেশের অন্য জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে হরিরামপুর ও শিবালয়ে মরিচের ক্ষেতে কোনো মরিচ নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে ৩ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ১৭৬ হেক্টর বেশি। প্রতি বছর এখানকার উৎপাদিত মরিচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। দুই বছর আগেও এ অঞ্চল থেকে শত কোটি টাকার মরিচ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। তবে এ বছর প্রচণ্ড গরম ও সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
প্রায় সব জমিতেই মরিচ গাছের পাতাগুলো কুঁকড়ে মরে যাচ্ছে। আসছে না নতুন ফুল। ফলনও নেই। হতাশায় পড়েছেন মরিচচাষিরা। তারা জানান, অতি খরায় মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা উজানপাড়া গ্রামের কৃষক সামছুদ্দিন বলেন, দুই বিঘা জমিতে এবার মরিচ লাগিয়েছিলাম। শুরুতে গাছে ফলন ভালো ছিল। তখন ফলন বেশি থাকায় বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম ছিল না। সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করেছি। এর কিছুদিন পর অতি খরায় মরিচ ক্ষেত নষ্ট হতে থাকলে বাজারে মরিচের সংকট তৈরি হয়। তখন বাজারে সর্বোচ্চ প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করেছি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। ধীরে ধীরে মরিচ ক্ষেত নষ্ট হয়ে ফলন কমে যায়। দুই বিঘা জমিতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিলে হাজার বিশেক টাকা লাভ পেয়েছি। এখন অতি খরায় মরিচ ক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছি।
একই গ্রামের মরিচ চাষি নূর হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে মরিচের আবাদ ভালো হওয়ায় এবার ৩০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে সাড়ে চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করি। কিন্তু এমন বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছের মাথা থুবরে গেছে। শুধু আমার অবস্থাই এমন না, আশপাশের সব কৃষকের একই অবস্থা। সব কৃষকের মাথায় হাত।’
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের মরিচ চাষী আবদুর রহমান ব্যাপারী বলেন, তীব্র খরায় অধিকাংশ মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। কয়েক বার সেচ দেওয়ার পর সামান্য ভালো হয়। দ্বিতীয় দফায় আবার তীব্র খরায় একই অবস্থা হয়। পরে অনেক গাছ মরে যায়। তবে যে গাছগুলো আছে তাতে ফুল এলেও মরিচ ধরছে না।
এদিকে শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের বরংগাইল গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন জানান, দুই বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করতে চারা, সার, কীটনাশক, সেচসহ তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এই সময়ে প্রতিদিন জমি থেকে দুই আড়াই মণ মরিচ হওয়ার কথা থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে প্রতিদিন দুই কেজিও মিলছে না। সার, কীটনাশক, সেচ দিয়েও সুফল পাননি তিনি।
একই উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, এ বছর অতি খরার কারণে মরিচ ক্ষেতে মাটি ফেটে যাওয়ায় গাছ মরে গেছে। আবার অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় গাছের গোড়া পঁচে গিয়ে গাছ মরে গেছে।
চাষিরা বলছেন, ফলন বিপর্যয়ের কারণে বাজারে খুব অল্প মরিচ উঠছে। এর প্রভাবে গত বছরের মতো এবারও কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে চলছে। বিভিন্ন আড়তে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, মানিকগঞ্জের মরিচের উৎপাদন না থাকায় এখন পাইকারি মোকামগুলোতে মরিচের চালান আসে দেশের কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গাসহ কয়েকটি জেলা থেকে। এছাড়া এলসির মাধ্যমে ভারতীয় মরিচ আমদানি হচ্ছে মানিকগঞ্জের পাইকারি আড়ৎগুলোতে।
মানিকগঞ্জের বড় একটি পাইকারি আড়ৎ জাগীর বন্দর ধলেশ্বরী পাইকারি আড়ৎ।
সোমবার সকালে এই আড়তে ভারতীয় এলসির কাঁচা মরিচ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায়।
পাইকাররা জানান, দেশীয় মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় মরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কোনো মরিচ এখন আড়তে আসছে না। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু মরিচ আসলেও দাম বেশি।
মানিকগঞ্জ জাগীর বন্দর ধলেশ্বরী পাইকারি বাজারের আড়তদার আবদুস সাত্তার জানান, ‘এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মরিচ নিয়ে যায় পাইকাররা। ভারতীয় আমদানি করা মরিচ একদিন আসা বন্ধ থাকলে দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাছাড়া এলসির মরিচ অর্ধেক পঁচা বের হচ্ছে। এতে ঘাটতি পূরণ করতে দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বলেন, ‘টানা তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মানিকগঞ্জের মরিচ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই ফলন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যেহেতু বছরে একাধিকবার মরিচের আবাদ করা হয়, তাই আবহাওয়া অনুকূলে এলে কৃষকরা আগের মতো ফলন পাবেন। আর পাতা কুঁকড়ানো রোগের সমাধানের জন্য বগুড়ার মসলা গবেষণাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেছি। তারা এ বিষয়ে আমাদের যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন তা কৃষকদের জানানো হয়েছে।’
৪৭ মিনিট আগে
অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে নারায়ণগঞ্জের বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়ামাটি
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা নয়ামাটির অলি-গলি দিয়ে কখনো চার চাকার গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। অথচ এখানে বছরে শতশত কোটি টাকার হোসিয়ারি পণ্য বেচাকেনা হয়। এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো এলাকা বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জালে মোড়ানো। কিছুকিছু জায়গায় তারের জঞ্জালের কারণে আকাশও দেখা যায় না। বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা এই বাণিজ্যিক এলাকার প্রায় প্রতিটি ভবন কাপড়, কেমিক্যাল আর সুতায় ঠাসা। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে বড় ধরনের আগুন লাগলে কীভাবে নেভানো হবে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।
গত ৭ অক্টোবর রাত ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগ্নিকাণ্ডে ৪০ দোকান পুড়ে যায়। এরপর থেকে নয়ামাটির হোসিয়ারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক।
আরও পড়ুন: জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে ৮ হাজারের মতো হোসিয়ারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার অধিকাংশ এই নয়ামাটি ও এর আশাপাশের এলাকায় অবস্থিত। অথচ নয়ামাটি অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
নয়ামাটির হোসিয়ারি ব্যবসায়ী আব্দুস সেলিম বলেন, ‘এখানে যত মার্কেট আর বাড়ি দেখেন সব জায়গায় কোটি কোটি টাকার খেলা। কিন্তু জীবনের নিরাপত্তা নেই। আপনি ঠিকমতো খুঁজে দেখেন কোথাও আগুন নেভানোর যন্ত্র নেই। পানির রিজার্ভ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেহেতু আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারবে না, সেই কথা মাথায় রেখেই ব্যবসা করা উচিৎ। তবে সেটা নিয়ে কারো চিন্তা ভাবনা নেই। এর পেছনে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানও দায়ী বলে আমি মনে করি।’
রহমান হোসিয়ারির নারী শ্রমিক আবেদা পারভীন বলেন, ‘যেই রাস্তা দিয়ে ঢুকেছেন সেখানে তারের মধ্যে প্রায়ই আগুন লাগে। তখন বিল্ডিং থেকে পানি বালু দিয়া আগুন নেভানো হয়। আমরা এমন এক জায়গায় কাজ করি তা আর কী বলব। ৫-৬ তলার উপরে কারখানায় শ্রমিকেরা থাকে। নিচে আগুন লাগলে আমরাদের সবার মরা ছাড়া উপায় নেই। গার্মেন্ট আর হোসিয়ারিতে অনেক তফাত। গার্মেন্টে দুইটা সিঁড়ি থাকে আগুন নেভানোর মেশিন থাকে। নয়ামাটির হোসিয়ারিতে এগুলো নেই।’
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের মালিকেরা টাকা কম কামায় নাকি? তাদেরটা ধরা পড়ে না। সরকারের উচিত এখানে নজর দেওয়া, না হলে আমাদের আগুনে জ্বলে মরতে হবে।’ নয়ামাটির কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এলাকাটি ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকির মধ্যে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের নজর খুব কম এখানে। নয়ামাটির নিরাপদ বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরিতে এই সরকারি প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো উদ্যোগ নেয় না।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ফখরউদ্দীন আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে অফিস টাইমে ফোন দেবেন। আমি এখন অসুস্থ।’
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩
২২ ঘণ্টা আগে
ঢাকার পুননির্মাণে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ গবেষকদের
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা নগর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি চ্যালেঞ্জের মুখে। ঢাকাকে আবারও বাসযোগ্য করে তুলতে অবশ্যই ঝুঁকিগুলোর সমাধান করতে হবে। এমন পরামর্শই উঠে এসেছে ঢাকাকে নিয়ে পরিচালিত বেশ কয়েকটি গবেষণায়।
একটি গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালের ওই গবেষণায় দেখা দেখে যানজটপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার মতো সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে ঢাকার বাসিন্দারা। যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩০ হাজার ৯৩ জন।
এই সমস্যাগুলো নগরীর বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। এটি পুননগরায়ন এবং জনস্বাস্থ্য উভয়কেই শহরের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য অগ্রাধিকারে একটি। এরসঙ্গে যুক্ত রয়েছে ঢাকার দূষিত বাতাস, যা শ্বাসকষ্টের রোগী বা এমন সমস্যাগ্রস্ত নাগরিকদের মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।
এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সায়েন্স অ্যাডভান্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকায় বায়ুদূষণের কারণে ২৪ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে, যা বিশ্বের ৪৬টি শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই ফলাফলগুলো নগর উন্নয়নের জন্য একটি বিস্তৃত পদ্ধতির জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। যা অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং পরিবেশগত ঝুঁকিগুলোকে রোধ করে।
ঢাকার দ্রুত নগরায়ন এসব সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। অপরিকল্পিত অবকাঠামো, দুর্বল স্যানিটেশন, অপরিকল্পিত বসতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয় শহরটিকে ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে।
গবেষণা নিবন্ধে নগর পুননির্মাণের উদ্যোগের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য একীভূত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের দুটি মূল গবেষণায় উদ্ভাবনী সমাধানের প্রস্তাব দেওয়ার সময় ঢাকার চলমান চ্যালেঞ্জগুলোর গভীরে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে নওরোজ ফাতেমী, জারিন হাবিবা ইসলাম এবং তাহমিনা রহমানের নেতৃত্বে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল পুরান ঢাকার পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখেছেন। পুরান ঢাকা এলাকাটি একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল, যেখানে সাংস্কৃতিক তাৎপর্য গভীরভাবে জড়িত কিন্তু অবকাঠামোগত ব্যর্থতায় জর্জরিত।
গবেষকরা বাসযোগ্যতা উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণের জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ডিএপি) সংস্কারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।আরও পড়ুন: বন্যায় সব হারিয়ে বিপর্যস্ত শেরপুরবাসী, কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকারও বেশি
গুরুত্বপূর্ণ গ্রুপ আলোচনা, মূল তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার এবং নগর নকশা কর্মশালার সঙ্গে জড়িত তাদের অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি প্রমাণ করেছে যে, বাসিন্দারা কেবল অবকাঠামোগত উন্নতিই চায় না, বরং সম্প্রদায়ের শক্তিশালী সংহতিও চান।
গবেষণায় তৃণমূল পর্যায়ের প্রচেষ্টার সঙ্গে আগা-গোড়া উদ্যোগগুলোকে একীভূত করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছিল। উন্নত ড্রেনেজ, বর্ধিত সড়ক নেটওয়ার্ক এবং জনসাধারণের উন্নত সুযোগ-সুবিধার মতো শারীরিক উন্নতিগুলো অবশ্যই সম্প্রদায়ের অনন্য সাংস্কৃতিক কাঠামোকে সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
এই শহুরে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য সম্প্রদায়-চালিত সমাধানগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ পরিকল্পনার ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বকে আরও জোরদার করে।
একইভাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফ্রন্টিয়ার্স ইন পাবলিক হেলথে মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, আবুল কালাম এবং মো. আল-মামুনের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে উদ্ভূত জনস্বাস্থ্য সংকটের উপর আলোকপাত করা হয়েছিল।
অননুমোদিত বসতিগুলোতে, বিশেষত বস্তিগুলোতে দুর্বল অবকাঠামোর কারণে কলেরা এবং ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি বায়ু দূষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাসহ গুরুতর জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে পরিচালিত করেছে।
শারীরিক স্বাস্থ্যের বাইরেও, গবেষণায় বাসিন্দাদের উপর মনস্তাত্ত্বিক বোঝাও তুলে ধরা হয়েছে, উপচে পড়া ভিড় এবং পরিবেশগত চাপগুলো মানসিক সুস্থতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
গবেষকরা জনস্বাস্থ্যের বোঝা কমানোর জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা বাড়ানোর মতো সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এই পদক্ষেপগুলো ঢাকার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের অকল্পনীয় উন্নতি করতে পারে।
আরও পড়ুন: আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে মাগুরাবাসী, বাজার না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে ঘরে
উভয় গবেষণা প্রচেষ্টা শহুরে পুননির্মাণেল জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে - যা স্বাস্থ্যের শারীরিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত নির্ধারকদের বিবেচনা করে। নীতিনির্ধারক এবং নগর পরিকল্পনাবিদদের একটি সহযোগিতামূলক কৌশল গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়, যা সরকারি সংস্থা, সম্প্রদায়ের নেতা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের শহরের ভবিষ্যতের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে জড়িত করে।
২০২০ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্টাল অ্যানালাইসিস (সিইএ) জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করেছে যে বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি এবং দুর্বল স্যানিটেশনের মতো পরিবেশগত কারণগুলোতে দেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এই পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে তার জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমতুল্য ক্ষতি করেছে, যার অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যুর জন্য এককভাবে বায়ুদূষণ দায়ী।
ঢাকা নগরীকে পুননির্মাণে অবশ্যই ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগ মোকাবিলা, পরিবেশগত ঝুঁকি রোধ এবং জনগোষ্ঠীর শক্তিশালী সম্পৃক্ততা জোরদারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
যেহেতু ঢাকার সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে, তাই এর চ্যালেঞ্জটি এমন একটি শহর হয়ে ওঠা, যা কেবল আধুনিক এবং কার্যকরী নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকরও হবে।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের মতে, ছোট শহর ও জেলা শহরগুলোতে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ চীনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শিক্ষা নিতে পারে, যার ফলে ঢাকায় অতিরিক্ত অবকাঠামোগত চাপ কমবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষাগ্রহণ করে বাধা ভাঙতে চায় বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়
১ দিন আগে
বন্যায় সব হারিয়ে বিপর্যস্ত শেরপুরবাসী, কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৬০০ কোটি টাকারও বেশি
শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে থাকায় দৃশ্যমান হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বন্যায় ভেঙেছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও ডুবে গেছে ফসলি জমি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বন্যাকবলিতরা।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণ তৎপরতা থাকলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার-বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে- ডায়রিয়া, আমাশয়, চুলকানিসহ পানিবাহিত রোগ।
সরেজমিনে নকলা উপজেলার পিছলাকুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভোগাই নদীর তীরে জেলেপল্লীতে প্রায় ১৫০ পরিবারের বসবাস। নদীর বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকার অনেকের বাড়ি-ঘর, জিনিসপত্র, ফসলি জমি সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ৫০ বছরের মধ্যে সাহারা মরুভূমিতে প্রথম বন্যার বিরল দৃশ্য
ছয় দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় গ্রামের ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য পিছলাকুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাড়াকান্দা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি ঢলের পানিতে জায়গায় জায়গায় ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছে।
ওই গ্রামের অহল্লা রানী বর্মণ বলেন, ‘বাড়িঘরে বন্যার পানি। ৫ থেকে ৬ দিন পর পানি নামছে। পানি থাকার সময় একদিন সেনাবাহিনীরা এক প্যাকেট খিচুরি, আরেকদিন আধাকেজি মুড়ি দিয়েছিল। তিনদিন ওইগুলাই খাইয়া, না খাইয়া থাকছি। পানি থাকায় একরকম কষ্ট আর এখন পানি নামার পরে আরেক রকম কষ্ট।’
বাদল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ঋণ নিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে শসা খেত করেছিলেন। তিন দিন পরই শসা তোলা শুরু হতো। প্রায় এক লাখ টাকার মতো আয়ের আশা ছিল। ঢলের পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, শসা খেত ছাড়াও ৫ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ, ৩ কাঠা (২১ শতাংশ) জমিতে লাল শাক ও ১৮ কাঠা (১২৬ শতাংশ) জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। পাহাড়ি ঢলে সব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি দেখিয়ে বাদল বলেন, ‘বাড়িও গেছে, ফসলও গেছে। আমি এখন সর্বহারা। ফসল তুইল্লা ঋণধার শোধতো দূরের কথা, এখন নতুন কইরা ঋণের জালে পড়লাম। সরকার যদি এহন সহায়তা না করে, তাহলে আমি এক্কেবারে শেষ। কিন্তু সরকারের কোনো লোকতো দেখতেও আসলো না, আমরা বাঁইচ্চা আছি, নাকি মইরা গেছি।’
ঢলে ভেঙে পড়েছে বিধবা বানেছা বেগমের একমাত্র থাকার ঘরটি। ভেসে গেছে সব জিনিসপত্র। সব হারিয়ে শূন্য ভিটায় বসে থাকা বানেছা বেগম বলেন, ‘আমারতো আর কিছু নাই। আমি এখন এই ভাঙা ঘর কীভাবে করব কিছুই জানি না। আমারতো কোনো উপায় নাই। যদি কেউ আমারে সাহায্য না করে, আমারতো কোনো গতি নাই।’
গৃহবধূ কিরণ মালা বর্মণ বলেন, আমার বয়সে এত পানি দেখি নাই। বন্যার পানি আমাদের যে ক্ষতিটা করেছে, এখন আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমরা এখন খুব কষ্টে আছি, চিন্তায় আছি। সরকার থেকে আমাদের কিছু না করলে আমরা দাঁড়াতেই পারব না।
জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব মতে, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এবার এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও আমন, সবজি চাষ এবং আদা ও কৃষি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকার মতো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এজিইডি) রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৩ কোটি টাকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী তীর রক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক/ব্রিজ, কালভার্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকার।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বন্যাকবলিতদের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ অভুক্ত থাকবে না। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ, সংস্থা, সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণ তৎপরতা চলছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক একটি তালিকা তৈরি করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।
সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী, মেডিকেল স্টুডেন্ট, চিকিৎসকসহ ৪টি মেডিকেল টিম ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তায় কাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, এখন ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি পুনর্বাসন সহায়তা খুবই প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে তাদের জন্য কিছু করা উচিত।
আরও পড়ুন: শেরপুরে বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
১ দিন আগে
আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যে দুর্ভোগে মাগুরাবাসী, বাজার না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে ঘরে
মাগুরায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে অনেককে বাজার না করেই ফিরতে হচ্ছে ঘরে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের দুর্ভোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বিক্রেতাদের আক্ষেপ, আগের মতো বেচাকেনা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি হাট-বাজারে শাক-সবজিসহ সব কাঁচা বাজারের দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই বাজারে এসেও কাঁচা বাজার না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন।
মাগুরার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচা মরিচ, ডিম ও সবজির দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা।
জেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
গত দুই সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি প্রায় ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা।
আরও পড়ুন: ২২ দিনের শিকার নিষেধাজ্ঞায় চাঁদপুরে রেকর্ড দামে ইলিশ বিক্রি, হতাশ হয়ে ফিরছেন ক্রেতারা
পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মাঝারি লাউ প্রতিটি ১০০ টাকা, ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০, শসা ৮০ টাকা ও প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম।
প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্য ১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ডিমের দাম ৬০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। যেখানে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১৫০ টাকা। যার প্রতি হালি বিক্রি হতো ৫০ টাকায়।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েকদিনে মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেশি তাই স্বাভাবিকভাবেই খুচরা বাজারেও দাম বেশি।
গরু, ছাগল এবং দেশি ও ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম না বাড়লে মাছের দাম ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারগুলোতে ছোট মাছ নেই বললেই চলে। যেগুলো আছে সেগুলো সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আবার বড় মাছের দামও অনেক বেশি। ইলিশের ভরা মৌসুমেও দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এছাড়া বেড়েছে সব ধরনের চাল ও তেলের দাম।
তবে হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বিক্রিও কমে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উপসচিব
ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও তাদের উপার্জন বাড়েনি। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি যে বাজারে যেতেই ভয় হয়। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে জেলার বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সামুনুল ইসলাম জানান, অধিক পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় ও পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতিদিনই কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়ে যাওয়ায় নিরুপায় হয়েই দাম বাড়াচ্ছে বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ শতাংশ: সালেহউদ্দিন
২ দিন আগে
২২ দিনের শিকার নিষেধাজ্ঞায় চাঁদপুরে রেকর্ড দামে ইলিশ বিক্রি, হতাশ হয়ে ফিরছেন ক্রেতারা
ইলিশ মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্যে চাঁদপুরে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। শনিবার (১২ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে প্রশাসনের জারি করা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত।
পদ্মা-মেঘনার মিঠাপানিতে ইলিশের ডিম ছাড়াকে নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণেই দেশের অন্যতম বৃহৎ চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র- ‘বড় স্টেশন মাছ ঘাটে’ ইলিশ কিনতে শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে দাম মধ্যবিত্ত ও গরীবের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে আজও রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। ১ কেজি বা ‘ কেজি ১০০-২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ইলিশের বড় পাইকারি এই মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আড়তগুলো। বিশেষ করে খুচরা ক্রেতাদের ভিড়। তারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন।
কিছু সময় ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা গেল স্থানীয় জেলেরা বরফ ছাড়া তাজা ইলিশ নিয়ে আসছে আড়তগুলোতে। আবার কিছু ইলিশ নোয়াখালী হাতিয়া এলাকা থেকে মিনি ট্রাকে সড়ক পথে আসছে ঘাটে।
আড়তগুলো ঘুরে একাধিক খুচরা ইলিশ বিক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে কথা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০টাকায়। আর ছোট সাইজের অর্থাৎ ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি।
শহরতলীর আশিকাটি থেকে আসা সোলাইমান বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেও ইলিশের দাম আরও কম ছিল। ইলিশ ধরা বন্ধ হওয়ার কারণে ছোট-বড় প্রতিকেজি ইলিশের দামে বেড়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। কেনার ইচ্ছা থাকলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে কিনতে পারছি না।
ঢাকা থেকে বেড়াতে এসে ঘাটে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছেন নাজনিন নামক এক কলেজ শিক্ষিকা। তিনি বলেন, আড়তগুলো ঘুরে দেখছি। দাম অনেক চড়া।
জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে ইলিশ কিনতে আসা মানিক, মন্টু ও সোহরাব জানান, বরফ দেওয়া ইলিশের দামও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশের খুচরা দাম ৩ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। একদম জাটকা সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ৮০০ থেকে হাজার টাকা। অসম্ভব দাম বেড়েছে ইলিশের।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯টি চালানে ভারতে ৪৫৯ টন ইলিশ রপ্তানি
মেসার্স কালু ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক ইউএনবিকে বলেন, ইলিশের দাম এখন সর্বোচ্চ। এর কারণ হচ্ছে সামনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মাছঘাটে সরবরাহের চাইতে খুচরা ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুন বেশি। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতার ভিড় থাকে। তাছাড়া আজ ছুটির দিনে অনেক ট্যুরিস্টও মাছঘাট সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু ট্যুরিস্ট পার্কেও এসেছে।
দেখা গেছে, অনেক ইলিশপ্রিয় ভোজনরসিক পরিবারের সদস্য সহ এসে মাছ কিনে পাশের রেস্টুরেন্টে নিয়ে নিজের চোখের সামনে ভেজে টাটকা ইলিশের স্বাদ নিচ্ছেন। তারা ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এসেছেন।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সম্পাদক শবেবরাত সরকার ইউএনবিকে বলেন, ১২ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাত থেকেই ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। ২২ দিন ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকবে। শেষ মুহূর্তে ইলিশ কিনতে লোকজন ঘাটে আসছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা থেকে চাঁদপুরের এ ঘাটে ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় ইলিশ এখন সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে কেউ দেখেনি।
ঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, মোস্তফা খান, দীদার খানসহ সবাই ইউএনবিকে জানান, ইলিশ মাছের এত দাম গত ৫০ বছরেও কখনো দেখিনি।
বিকালে শহরের ব্যস্ততম বাজার- বিপনীবাগ বাজার, ওয়ারলেস বাজার, প্রসিদ্ধ পালবাজার, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। বাজারে মাছের সরবরাহ প্রচুর থাকলেও দাম সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি সারওয়ার হোসেনসহ অনেককে অসহায়ভাবে ইলিশের দিকে তাকিয়ে দাম বেশি হওয়ায় ফিরে যেতে দেখেছি।
তারা বলছেন, ইলিশ মাছ টুকরা করে বিক্রি করলেও কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। এক ইলিশের টাকা দিয়ে ৪ কেজি গরুর গোশত কেনা যায়।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান ইউএনবিকে বলেন, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে পদ্মা–মেঘনার মিঠাপানিতে ছুটে আসে। যে কারণে সরকার আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, বহন ও বিক্রি বা স্টক করা নিষিদ্ধ করেছে। মা ইলিশ রক্ষায় ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি
২ দিন আগে
শিক্ষাগ্রহণ করে বাধা ভাঙতে চায় বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়
বাংলাদেশে প্রথাগত লিঙ্গের ভূমিকা গভীরভাবে প্রোথিত। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষ শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনে অস্বাভাবিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত একটি গবেষণায় তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের লড়াইয়ে যেসব গুরুতর বাধার মুখোমুখি হন সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাদিকুল ইসলাম, বৃহন্নলা, মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং মো. আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের অব্যক্ত অভিজ্ঞতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। এটি অধ্যবসায়, আকাঙ্ক্ষা এবং পদ্ধতিগত ব্যর্থতার গল্পগুলোকে তুলে ধরেছে।
বাধা
টিচার্স ওয়ার্ল্ড: জার্নাল অব এডুকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণাটি আটজন প্রাপ্তবয়স্ক তৃতীয় লিঙ্গের অংশগ্রহণকারীর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তৃতীয় লিঙ্গ একটি লিঙ্গ পরিচয়, যা শতাব্দী ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যমান।
গবেষণায় উঠে এসেছে শিক্ষার প্রতি অদম্য তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের ( তৃতীয় লিঙ্গের) ব্যক্তিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হন।
সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে তাদের যৌন পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হওয়া। এছাড়াও সহপাঠীদের কাছ থেকে হয়রানি এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে অজ্ঞতা বা উদাসীনতা।
আরও পড়ুন: সাভার বাসস্ট্যান্ডে হিজড়া-হকার সংঘর্ষে আহত ১০
এই বাধাগুলো তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে বাধা দেয়, যার ফলে তারা শিক্ষাগ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
গবেষকরা সমস্যার মাত্রা নির্ধারণের জন্য গভীরতর সাক্ষাৎকার এবং ব্যাখ্যামূলক ঘটনানির্ভর বিশ্লেষণ ব্যবহার করেছেন।
আর্থিক কষ্ট এবং দারিদ্র্য তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের মুখোমুখি হওয়া সমস্যাগুলোকে আরও বাড়ায়। এর ফলে অকালে তাদের অনেককে পড়াশোনা ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
যদিও বাংলাদেশ ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২০২০ সালে তাদের একটি পৃথক বিভাগে ভোট দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। তবে এই আইনি স্বীকৃতিগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থবহ পরিবর্তনে রূপান্তিরিত হয়নি।
গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক কলঙ্কগুলো গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে, যা তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য বর্জনের একটি চক্রকে স্থায়ী করে।
পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
গবেষণায় তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন বা হ্রাস করার ক্ষেত্রে পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উভয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্ত অভিজ্ঞতাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে পরিবারগুলোর কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতার অভাব স্কুলগুলোতে বর্জনের মুখোমুখি হওয়ার মতোই ক্ষতিকারক হতে পারে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় ৮০ জন হিজড়ার মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ
পরিবারের সমর্থন ছাড়াই অনেক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি সামাজিক বাধাগুলো অতিক্রম করতে লড়াই করে, যা তাদের শিক্ষা অর্জনে বাধা দেয়।
গবেষকদের মতে, প্রান্তিকতার চক্র ভাঙার জন্য সামাজিক ও শিক্ষাগত উভয় পরিমণ্ডলের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।
তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, কেবল শিক্ষাগত সংস্কারই যথেষ্ট হবে না, বরং তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ, সহায়ক শিক্ষার পরিবেশের সুবিধা নিশ্চিত করতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকারের বৃহত্তর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা প্রয়োজন।
গবেষকরা এমন একটি ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করার জন্য বৃহত্তর বোঝাপড়া, সহানুভূতি এবং নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা বৈষম্যের কোনো হুমকি ছাড়াই সাফল্য অর্জন করতে পারে।
কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ
‘এমপ্লয়াবিলিটি অব ট্রান্সজেন্ডার ইন বাংলাদেশ: প্রবলেমস অ্যান্ড প্রসপেক্টস' নামে ফারিহা আবেদিন এবং মো. আতিকুর রহমান সরকারের আরেকটি গবেষণা নির্ভর বইয়ে বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গেরদের যারা তাদের শিক্ষা এবং পেশাদার দক্ষতার অভাবের কারণে আনুষ্ঠানিক চাকরির বাজার থেকে মূলত বাদ পড়ে যায় তাদের জন্য সম্ভাব্য সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ওই গবেষণায়।
প্রতিকূলতার মধ্যেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (এসএমই ফাউন্ডেশন) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিলের মতো সংস্থাগুলো তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের দক্ষতা ও কর্মসংস্থান উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: ‘হিজড়া’ বলে কটুক্তির প্রতিবাদ করায় শিশু শুভকে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩
উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তাসহ এসব উদ্যোগ তৃতীয় লিঙ্গেরদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের পথ তৈরিতে সহায়তা করছে।
এসব উদ্যোগ কিছুটা আশার আলো দেখালেও সামগ্রিক চিত্র এখনও ভয়াবহ। বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকাংশই অশিক্ষিত, বেকার ও প্রান্তিক রয়ে গেছেন।
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে যারা চাকরি পেতে সক্ষম হন, তারা প্রায়শই ক্যারিয়ারের অগ্রগতির সীমিত সম্ভাবনাসহ শ্রমিক শ্রেণিতে নিযুক্ত থাকেন।
অন্তর্নিহিত সমস্যাটি হলো তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে সামাজিক ধারণাগুলো এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়নি এবং ফলস্বরূপ, আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে তাদের অবদানকে অবমূল্যায়ন করা হয়।
অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপ
উভয় গবেষণার লেখকরা যুক্তি দিয়েছেন যে, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা যাতে তাদের জন্মগতভাবে নারী কিংবা পুরুষ সহকর্মীদের মতো সমতার ভিত্তিতে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান লাভের সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু করা দরকার।
উদাহরণস্বরূপ, যদিও কিছু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রুপচর্চা শিল্প, আতিথেয়তা এবং তৈরি পোশাকের মতো খাতে কাজ শুরু করেছে, তবে এগুলো নিয়মের বাইরে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
এমপ্লয়াবিলিটি স্টাডিতে অংশগ্রহণকারীরা একটি সাধারণ আবেদন জানানো হয়েছে। আর তা হলো- তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক আচরণ করা, সুযোগ দেওয়া এবং সমাজের পূর্ণ সদস্য হিসেবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া।আরও পড়ুন: জীবনধারণে লড়ছেন জয়িতা পুরস্কার জয়ী খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া
তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত একজন উত্তরদাতা মর্মস্পর্শীভাবে বলেছিলেন, ‘দয়া করে, আমাদের সুযোগ দিন, আমাদের আশা এবং সম্মান দিন। আমাদের আলোকিত হতে দিন। আমরা আপনার মতোই স্বাভাবিক এবং আমরা অবশ্যই কাজ করতে পারি এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি।’
গবেষণাটি শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান পর্যন্ত তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট প্রয়োজনকে তুলে ধরে এমন লক্ষ্যযুক্ত নীতি তৈরির গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।
বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গেরদের আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য শুধু আইনি স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়।
তারা তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সরকার, নীতিনির্ধারক এবং নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ
গবেষণায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনের দীর্ঘ পথটি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা শিক্ষা ও অর্থনৈতিক জীবনে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করতে পারে।
বিদ্যমান উদ্যোগগুলো উৎসাহব্যঞ্জক হলেও তা এখনও যথেষ্ট নয়। সত্যিকারের পরিবর্তন সাধনের জন্য, সমাজকে অবশ্যই বিদ্যমান পক্ষপাতিত্বকে মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অবদান রাখার সুযোগ করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বেনাপোলে হিজড়াকে গলাকেটে হত্যার পর মাটিচাপা, আটক ১
২ দিন আগে
৩ পার্বত্য জেলা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, পর্যটন খাতে ধস
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে। পর্যটক ভ্রমণ না করায় প্রশাসনের দেওয়া সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ এবং হতাশা ব্যক্ত করেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। আর দুর্গাপূজাকে ঘিরে ৩ পার্বত্য জেলায় হোটেল মোটেলগুলোতে অনেক বুকিং পেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে বুকিং বাতিল হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের বোট ঘাট ইজারাদার রমজান বলেন, ঝুলন্ত সেতুটি তলিয়ে যাওয়ায় পর্যটক আসছে না। এরপর প্রায় এক মাসের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা। এতে করে আমরা কীভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন: সাজেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াল জেলা প্রশাসন
হোটেল স্কয়ার পার্কের ব্যবস্থাপক মো. সুলতান বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাঙ্গামাটির সকল হোটেল মোটেল পর্যটকশূন্য।
তিনি আরও বলেন, যেসব বুকিং ছিল তাও বাতিল হয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সুনজর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বিভিন্ন কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে।
তিনি আরও বলেন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে কোনো পর্যটক আসছে না। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পর্যটন ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন।
আশাকরি প্রশাসন থেকে যদি নিশেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়, তাহলে আবারও এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব বলে জানান আলোক বিকাশ চাকমা।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙ্গামাটির সার্বিক পরিস্থিতি ও পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় পর্যটকদের ভ্রমণ না করার জন্য আমরা আহ্বান করেছি। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং পর্যটকরা জেলাগুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
৩ পার্বত্য জেলায় ভ্রমণে বিরত থাকার ব্যাপারে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা দ্রুত তুলে নেওয়া হবে। এবিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এদিকে ৩ পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার উদ্বেগ প্রকাশ এবং অবিলম্বে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ৪ দফা দাবি জানিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১০টি সংগঠন রাঙ্গামাটি রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, হাউজ বোর্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি, পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড টোয়ার, পর্যটন ঘাট টুরিস্ট বোট মালিক সমিতি, রিজার্ভ বাজার ঘাট টুরিস্ট বোট মালিক সমিতি, সমতা ঘাট টুরিস্ট বোট মালিক সমিতি, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি ও রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করছি। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকরা যখন দেশব্যাপী ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন এই ধরনের ঘোষণা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে পার্বত্য জেলাগুলো ভ্রমণের বিষয়ে অত্যন্ত নেতিবাচক বার্তা বহন করছে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের গড়ে ওঠা পর্যটন খাতকে আবারও খাদের কিনারায় নিয়ে যাবে। এ কারণে আমরা পেশা ও বিনিয়োগ বিষয়ে গভীর অনিশ্চয়তায় ভুগছি।
তাই দ্রুত পর্যটকদের ভ্রমণ নিরবিচ্ছিন্ন রাখা ও স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তা এবং এই খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ সুরক্ষার কথা বিবেচনায় আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
৪ দিন আগে
বিমানবন্দরের হর্নমুক্ত ঘোষিত এলাকায় বেজেই চলেছে হর্ন
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকাসহ আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং আগের মতোই বাজছে হর্ন।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি-৪ অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সম্মুখস্থ এলাকা ও তার উত্তর-দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার (স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে হোটেল লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত) এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
নির্দেশনায় বলা হয়, ১ অক্টোবর থেকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ওই এলাকায় গাড়ির হর্ন বাজানো নিষেধ এবং হর্ন বাজালে কারাদণ্ড বা জরিমানা হতে পারে।
সে অনুযায়ী বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ, পরিবহন মালিক সমিতিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
সরেজমিনে যা দেখা গেল-
দক্ষিণে লা মেরিডিয়ান পয়েন্টের সামনে নীরব এলাকার শুরু হয়েছে এমন লেখাযুক্ত বিভিন্ন বোর্ড রয়েছে। একইভাবে উত্তরার স্কলাস্টিকা পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতের ওপর একটি স্টিলের খুঁটিতে টাঙানো বোর্ডে লেখা ‘নীরব এলাকা শুরু: ঢাকা সড়ক বিভাগ’। কিন্তু এসব এলাকায় সড়কের কোথাও হর্ন ছাড়া গাড়ি চলতে দেখা যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাত ও পরদিন শুক্রবার দিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এ নিয়ম মানছে না কেউ। যে যেভাবে পারছে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজিয়েই চলেছে। বেশি হর্ন বাজাচ্ছে বাস-মোটরসাইকেল। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ তৈরি করে বাজানো হচ্ছে হর্ন। সেখানে তদারকি বা মনিটরিং করার মতে কাউকেও দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে ঢাকার বায়ুদূষণ: গবেষণা
যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ-
স্থানীয় লোকজন, যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত ১ অক্টোবর নীরব এলাকা কর্মসূচি উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শব্দদূষণে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই কারণে-অকারণে হর্ন বাজিয়ে চলছেন চালকরা। তাই আইনের প্রয়োগ ছাড়া এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় মেইন সড়কে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হর্ন যার যার ইচ্ছেমতোই বাজিয়ে চলছে। বাস-কার-মোটরসাইকেল সবাই প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে হর্ন বাজাচ্ছে। কেউ দেখার নেই। ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু কোনো জরিমানা করতে দেখলাম না।
হর্ন বাজানো এই এলাকা নিষিদ্ধ, এখন আগের মতো হর্নের শব্দ শুনেন কি না, লা মেরিডিয়ান হোটেল সামনে দায়িত্বরত সিকিউরিটির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হর্ন আগের মতোই যে যার মতো প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে বাজিয়েই চলছে, বাস- ট্রাক ও মোটরসাইকেল বেশি হর্ন দিতেই থাকে।
চালকদের দাবি-
এ বিষয়ে চালকদের দাবি, ঢাকা শহরে হর্ন ছাড়া যানবাহন চালানো সম্ভব নয়। কারণ, সড়কে পথচারীরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা মানেন না। আবার সড়কের কোথাও জেব্রা ক্রসিং বা ট্রাফিক সিগন্যাল নেই। ফলে যত্রতত্র সড়ক পার হন পথচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে হর্ন না দিলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।
বাস স্টপে থামা অবস্থায় কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, এই এলাকা হর্নমুক্ত বা নীরব এলাকা ঘোষনা করছে সেটি তারা জানেন না। হর্ন ছাড়া বাস চালানো যায় নাকি উল্টা প্রশ্ন রাখেন।
চালকদের দাবি, মানুষজন ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হয়, হঠাৎ সামনে মোটরসাইকেল পড়ে যায়, তখন হর্ন না বাজালে দুর্ঘটনা ঘটে যাবে, তাই হর্ন বাজাতে হয়। তবে রাস্তায় সবাই সচেতন থাকলে হয়তো হর্ন কম বাজালেও চলবে।
হর্ন বাজালে জরিমানা কত জানতে চাইলে চালকরা সঠিক কোনো তথ্য বলতে পারেনি।
আরও পড়ুন: অসহনীয় যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না ঢাকাবাসীর
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘোষিত নীরব এলাকাগুলো হলো-
এর আগে পরিবেশ অধিদপ্তর সারাদেশে ১২টি নীরব এলাকা ঘোষণা করে। ঢাকায় পাঁচটি নীরব এলাকা রয়েছে। সবশেষ যুক্ত হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা। আগে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয় সচিবালয়, আগারগাঁও, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকা।
গবেষণায় দেখা যায়-
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটি গবেষণায় দেখা যায়, নীরব এলাকার কোনোটিতেই আইন অনুযায়ী ‘নীরব এলাকা’ বাস্তবায়ন হয়নি। সবগুলোতেই শব্দের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, নীরব এলাকা সচিবালয়ের ১২টি লোকেশনে শব্দের মাত্রা গড়ে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল। জাতীয় সংসদ এলাকায় ৭১ দশমিক ৮৬ ডেসিবেল, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এলাকায় ৭৫ দশমিক ৫৮ ডেসিবেল ও আগারগাঁও এলাকায় ৭২ দশমিক ৮৬ ডেসিবেল।
আরও পড়ুন: শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে বেবিচক: বেবিচক চেয়ারম্যান
এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, হর্ন বন্ধ করতে হলে আগে মানুষ, চালক ও গাড়ির মালিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পরে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলে হর্ন বন্ধ করা সম্ভব। যেহেতু শব্দদূষণের অন্যতম উৎস হলো হর্ন, এটি বন্ধ করতে পারলেই ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ শব্দদূষণ কমে যাবে। কিন্তু এটি বন্ধ করার জন্য আইনগত যে ভিত্তি রয়েছে সেটি দুর্বল।
তিনি আরও বলেন, আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরো ঢাকা শহরই নীরব এলাকা। কোথাও হর্ন দেওয়া যাবে না। আইন প্রয়োগ করতে গেলে এটা একটা বড় সীমাবদ্ধতা। শব্দদূষণ রোধে আমাদের যে দুটি আইন রয়েছে সেটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এছাড়া আইন অনুযায়ী স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ এলাকায় ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা আছে।
হর্ন নিয়ে আইনে কি আছে-
শব্দদূষণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময় ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
এই আইনে শাস্তি হিসেবে বলা আছে, আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ইউএনবিকে জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর সামনের ৩ কিলোমিটার মহাসড়ক হর্নমুক্ত ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিমানবন্দরের উত্তরে স্কলাস্টিকা পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে লা মেরিডিয়ান পয়েন্ট পর্যন্ত নীরব এলাকা। সবাই সচেতন থাকলে হর্নমুক্ত এলাকা হিসেবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে চালক ও গাড়ির মালিকসহ সবার সচেতন সহযোগিতা দরকার।
তিনি আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং আশপাশের এলাকায় শব্দদূষণ রোধে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা কার্যক্রমকে সফলভাবে বাস্তবায়নের নানা কার্যক্রম চালিয়েছে বেবিচক ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এলাকাকে 'নীরব এলাকা' ঘোষণা করল ডিএনসিসি
৫ দিন আগে
গাইবান্ধায় ভাঙা সেতুর ওপর বাঁশ-কাঠের সাঁকো!
মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটায় পূর্ব আমধির পাড়া বটতলা সেতু। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন অন্তত শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ।
সেতুটি যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে মুষ্টির চাল ও চাঁদা তুলে সেতুর ওপর তৈরি করেছে বাঁশ-কাঠের সাঁকো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পূর্ব আমধিরপাড়া বটতলা সেতু।
নির্মাণকাজে কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় নির্মাণের ৫ বছরের মাথায় নড়বড়ে হয়ে পড়ে সেতুটি। তদারকি না থাকা ও সংস্কার না করায় চলতি বছরের বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়ে এবং দুই পাশের মাটি ধসে যায়। দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়।
হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের বাসিন্দা মোনারুল ইসলাম বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অনেক শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করে। সেতুটি চলাচলের অযোগ্য হওয়া ২২টি গ্রামের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, মুমুর্ষ রোগী নিয়ে ঘাড়ে করে সেতু পার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অনেক প্রসূতি মা এই সেতুর কারণে পার হতে না পারায় সেতুর পাশের বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে।
দীঘলকান্দি চরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ায় ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা সেতু। এছাড়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভয়ে অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সেতু দিয়ে সাঘাটা, হলদিয়া ও জুমারবাড়ি ইউনিয়নের বেড়া, গারামারা, দক্ষিণ দীঘলকান্দি, উত্তর দীঘলকান্দি, পাতিলাবাড়ি, জুমার বাড়ি, গোবিন্দপুরসহ অন্তত শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।
মোমেনা খাতুন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কাজে যাই। কিন্তু বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে ভয় লাগে। সেতুটি অনেক নড়বড়ে, কখন যে পানিতে পড়ে যাই।
এদিকে এই সেতুটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে ইউপি চেয়াম্যান রফিকুল ইসলামসহ এলাকার মানুষ নিজেদের উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে মুষ্টির চাল ও চাঁদা সংগ্রহ করে সেই চাঁদা দিয়ে সেতুর ওপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে। তাতে পায়ে হেঁটে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বাইক, ইজিবাইক-অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সামিউল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ওই জায়গায় নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া করা যায় কি না।
৫ দিন আগে