নতুন মৌসুমে নতুন আঙ্গিকে শুরু হতে চলেছে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের অভিজাতদের লড়াই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে নতুন মৌসুমের গ্রুপপর্বের ড্র। এর আগে চলুন জেনে নেই, নতুন আঙ্গিকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরের খুঁটিনাটি।
এতদিন ধরে ৩২ দল আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গ্রুপপর্ব খেলার রীতি থাকলেও ২০২৪-২৫ মৌসুমে এই ধারায় পরিবর্তন আসতে চলেছে। নতুন মৌসুম থেকে ৩৬ দল নিয়ে শুরু হবে ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই।
মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরমেটের গ্রুপপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হবে। উয়েফা ডটকমে সরাসরি দেখা যাবে এই আসরের ড্রয়ের অনুষ্ঠান।
গ্রুপপর্বে এসেছে আমূল পরিবর্তন
২০০৩ সাল থেকে গ্রুপপর্বে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচ হিসেবে প্রতিটি দল তিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে ছয়টি করে ম্যাচ খেলত। এর মধ্যে থেকে টেবিলের শীর্ষ দুই দল শেষ ষোলোতে জায়গা করে নিত। এছাড়া তৃতীয় দল ইউরোপা লিগের প্লে-অফ খেলার সুযোগ পেত, আর তলানির দল সরাসরি বাদ পড়ত।
তবে নতুন মৌসুমে প্রতিটি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এসব সুবিধা থাকছে না।
৩৬টি দলের প্রত্যেকে গ্রুপপর্বে আটটি করে ম্যাচ খেলবে। ফলে গত মৌসুমেও গ্রুপপর্বে যেখানে মোট ৯৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো, এই মৌসুম থেকে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪৪ ম্যাচ। তবে এবারের প্রতিটি ম্যাচই হবে নকআউট, অর্থাৎ এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে একবার করেই খেলার সুযোগ পাবে ক্লাবগুলো।
গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ ৮ দল সরাসরি শেষ ষোলো নিশ্চিত করবে, এর পরের ১৬ দল থেকে দুই লেগের প্লে-অফ পর্ব খেলে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেবে বাকি ৮ দল। এছাড়া শেষ ১২ দল গ্রুপপর্ব থেকে সরাসরি বাদ পড়বে। তারা আর ইউরোপা লিগে খেলার সুযোগ পাবে না।
প্লে-অফ পর্বে ৯-১৬তম দলগুলো ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ খেলার সুবিধা পাবে।
নতুন ফরমেটের শেষ ষোলো থেকে ফাইনাল পর্যন্ত অবশ্য আগের নিয়মেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফরমেটে পরিবর্তন আনায় টুর্নামেন্টের মোট ম্যাচ সংখ্যা ১২৫ থেকে বেড়ে ১৮৯-এ দাাঁড়াবে। আবার ছয় ম্যাচের পরিবর্তে একেকটি দল এবার কমপক্ষে আটটি করে ম্যাচ খেলবে, আর ফাইনালিস্ট দুই দলের খেলা মোট ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭টি।
অতিরিক্ত চার ক্লাব যেভাবে বাছাই হবে
ইউরোপের যে দুই দেশের ক্লাবগুলো গত মৌসুমে উয়েফার সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সম্মিলিতিভাবে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে, সেই দুই দেশ থেকে অতিরিক্ত একটি করে দল পরের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেবে।
এই হিসাবে ইতালির সেরি-আ এবং জার্মানির বুন্দেসলিগার পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম দল যথাক্রমে বোলোনিয়া ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এবারের আসরে সুযোগ পাচ্ছে।
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলে ডর্টমুন্ড। এছাড়া লেভারকুজেন খেলে ইউরোপা লিগের ফাইনাল। ফলে লিগ টেবিলের পঞ্চম দল হয়েও এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা পেয়েছে ডর্টমুন্ড। অন্যদিকে, গত আসরের ইউরোপা লিগের শিরোপা জেতে ইতালির ক্লাব আতালান্তা। কিন্তু তারা প্রথম চার দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি জায়গা করে নেওয়ায় পঞ্চম দল হয়েও বোলোনিয়ার কপাল খুলেছে।
তৃতীয় দল আসবে ইউরোপের সেরা পাঁচ ঘরোয়া লিগের পঞ্চম লিগ থেকে। সেই হিসেবে ফ্রান্সের লিগ-১ থেকে দুটি দল সুযোগ পেলেও এবার তৃতীয় দল হিসেবে সরাসরি জায়গা পেয়েছে ব্রেস্ত।
উল্লেখ্য, উয়েফার প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে থেকে পঞ্চম দল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
এছাড়া চতুর্থ ক্লাবটি আসবে র্যাঙ্কিংয়ের নিচের সারির দেশগুলোর সেরা ক্লাবগুলোর মধ্যে প্লে-অফ পর্ব থেকে। গত আসর পর্যন্ত চারটি দেশের চার ক্লাব প্রতিযোগিতা করলেও এই মৌসুম থেকে পাঁচটি ক্লাবের মধ্যে হবে শেষ জায়গাটি পাওয়ার লড়াই।
যেভাবে হবে ড্র
আগের মৌসুমের মতো ৩৬টি ক্লাবকে চারটি পাত্রে ভাগ করে ড্র অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখানেও আছে পরিবর্তন।
আগে লিগের পয়েন্ট টেবিলের চার দলকে চারটি পাত্রে রাখলেও এবার উয়েফার প্রতিযোগিতায় গত পাঁচ মৌসুমে সবচেয়ে সেরা ৯টি ক্লাবকে প্রথম পাত্রে এবং পরবর্তী পাত্রগুলোতেও একই বিবেচনায় রাখা হবে ক্লাবগুলোকে।
এই হিসাবে এবারের ড্রয়ের প্রথম পাত্রে সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলা দলগুলোও ছাড়াও রয়েছে বার্সেলোনা ও লাইপসিগ।
প্রথম পাত্র থেকে একটি দলের নাম ঘোষণার পর কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে চারটি পাত্র থেকেই দুটি করে মোট আট প্রতিপক্ষের নাম স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। এই দুই দলের একটির সঙ্গে হোম এবং অন্যটির সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলবে নির্ধারিত দলটি।
কোন পাত্রে কারা রয়েছে
এবারের ড্রয়ে কোন কোন ক্লাব কোন পাত্রে রয়েছে, চলুন দেখে নেই-
পাত্র-১: রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, প্যারিস সেন্ত জার্মেই, লিভারপুল, ইন্টার মিলান, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, আরবি লাইপসিগ ও বার্সেলোনা।
পাত্র-২: বায়ের লেভারকুজেন, আতলেতিকো মাদ্রিদ, আতালান্টা, ইউভেন্তুস, বেনফিকা, আর্সেনাল, ক্লাব ব্রুজ, শাখতার দোনেৎস্ক ও এসি মিলান।
পাত্র-৩: ফেয়েনুর্দ, স্পোর্টিং লিসবন, পিএসভি আইন্দোহভেন, ডায়নামো জাগরেব, জালসবুর্গ, লিল, ক্রভেনা জাভেজদা, ইয়াং বয়েজ ও সেল্টিক।
পাত্র-৪: স্লোভান ব্রাতিস্লাভা, মোনাকো, স্পার্তা প্রাহা, অ্যাস্টন ভিলা, বোলোনিয়া, জিরোনা, স্টুটগার্ট, স্ট্রাম গ্রাজ ও ব্রেস্ত।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সময়সূচি
গ্রুপপর্ব
ম্যাচ ডে ১: ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ২: ১-২ অক্টোবর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৩: ২২-২৩ অক্টোবর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৪: ৫-৬ নভেম্বর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৫: ২৬-২৭ নভেম্বর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৬: ১০-১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৭: ২১-২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ম্যাচ ডে ৮: ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫
নকআউট পর্ব
নকআউট প্লে-অফ: ১১-১২ এবং ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
শেষ ষোলো: ৪-৫ এবং ১১-১২ মার্চ, ২০২৫
কোয়ার্টার ফাইনাল: ৮-৯ এবং ১৫-১৬ এপ্রিল, ২০২৫
সেমিফাইনাল: ২৯-৩০ এপ্রিল এবং ৬-৭ মে, ২০২৫
ফাইনাল: ৩১ মে, ২০২৫
ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগের ড্র অনুষ্ঠিত হওয়ার পর শনিবার (৩১ আগস্ট) প্রতিটি ক্লাবের খেলার সময়সূচি ঘোষণা করবে উয়েফা।
বিলিয়ন ইউরোর প্রাইজমানি
নতুন এই ফরমেট করার পেছনে আর্থিক অঙ্কটা যে বড় একটি কারণ, উয়েফা কর্মকর্তারাই সেটি নিশ্চিত করেছেন। গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন দল ১৩৫ মিলিয়ন ইউরো আর্থিক পুরস্কার পেলেও এবারের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো।
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলগুলো প্রাথমিকভাবে ১৮.৬ মিলিয়ন ইউরো করে পাবে। এরপর প্রতিটি ম্যাচ জিতলে আরও ২.১ মিলিয়ন ইউরো করে বাড়বে এই অঙ্ক। তবে ড্র করলে অর্থের পরিমাণ হবে এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৭ লাখ ইউরো।
এছাড়া নকআউট পর্বে নাম লেখানো দলগুলোর প্রত্যেকে ১১ মিলিয়ন ইউরো করে বোনাস পাবে। সব মিলিয়ে বিলিয়ন ইউরোর টুর্নামেন্ট হতে চলেছে নতুন আঙ্গিকের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।