উয়েফা নেশন্স লিগে ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে দেশটির রাজধানী প্যারিস। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করেছে প্যারিস প্রশাসন।
প্যারিসে দেশটির জাতীয় স্টেডিয়াম স্তাদ দে ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার নেশন্স লিগের পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচে ইসরায়েলকে আতিথ্য দেবে ফ্রান্স। স্থানীয় সময় রাত পোৗনে ৯টায় (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ২টা) শুরু হবে ম্যাচটি।
এই ম্যাচে উপস্থিত থাকার কথা জানান ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেটেলারদের মুখপাত্র বেজালেল স্মোত্রিচ। তার আগমন উপলক্ষে প্যারিসে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসরায়েলের সমর্থনকারী ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী ইহুদিরা।
ফ্রান্সে বসবাসাকারী ইহুদিদের সংগঠিত করতেই মূলত ‘ইসরায়েল ইজ ফরেভার’ নামের একটি ইসরায়েলিপন্থী সংগঠন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য তহবিল সংগ্রহও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে ছিল বলে জানা গেছে।
এ খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্যারিসজুড়ে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে বামপন্থী দলগুলো রাস্তায় নেমে আসে।
আরও পড়ুন: নেদারল্যান্ডসে ইসরায়েলি ফুটবল সমর্থকদের ওপর হামলা
এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্স সফর বাতিল করেন স্মোত্রিচ। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ের প্রতিবাদ জানানো হয়।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় স্থানের নাগরিকরা যাতে শান্তি বসবাস করতে পারে, তার জন্য দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে ফ্রান্স। এটিই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী সমাধানের একমাত্র সম্ভাবনা।’
তবে এরপরও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে শহরজুড়ে। বুধবার রাত থেকেই উল্লিখিত অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। ইসরায়েলপন্থীদের ওই অনুষ্ঠানের নিন্দা জানিয়ে তারা এটিকে ‘ঘৃণা ও লজ্জার অনুষ্ঠান’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিক্ষাভকারীদের যুক্তি ছিল এমন যে, হামাস বা হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো দল বা গোষ্ঠী যদি প্যারিসে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, তাহলে নিশ্চিতভাবে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ফলে (ইহুদিদের) এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বেআইনি।
বিক্ষোভ ছড়ালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন প্যারিসের পুলিশ প্রধান লরেন্ত নুনেস।
এদিকে, ম্যাচ চলাকালে গ্যালারিতে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ৪ হাজার পুলিশ ও স্টেডিয়ামের ১ হাজার ৬০০ নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, পার্ক দে প্রান্সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত বুধবার রাতে পিএসজি-আতলেতিকো মাদ্রিদ ম্যাচের আগে গ্যলারি থেকে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিশাল ব্যানার প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পরেরদিন বৃহস্পতিবার রাতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে ইউরোপা লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচের পর ইসরায়েলি ক্লাব মাকাবি তেল আবিবের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এবার ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগেই বিক্ষোভ ছড়িয়েছে প্যারিসজুড়ে।