ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস রবিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, ফেব্রুয়ারিতে ওমান থেকে সৌদি আরব যাওয়ার পথে সানায় তিনটি জাহাজ থেকে ওই ২০ নাবিককে বন্দী করে হুতিরা।
কেরালার দুই বাসিন্দা প্রবীণ থাম্মাকরন্তাভিদা (৪৫) এবং আবদুল ওহাব মুস্তাবা (৪২) দুটি জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা। এর মধ্যে একটি জাহাজ ডুবে যায়, তবে এর ক্রুদের উদ্ধার করা হয়েছিল।
ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধে সানা হুতিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আটকদের গ্রেপ্তার করে একটি পাঁচতলা হোটেলের চারটি কক্ষে রাখা হয়েছে।
প্রবীণ থাম্মাকরন্তাভিদা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বলেন, ‘আমরা নির্মাণ কার্যক্রমের সুবিধার্থে সৌদি আরবের ইয়ানবু বন্দরে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে আমরা জানতে পারি যে খারাপ আবহাওয়ার কারণে আমাদের একটি জাহাজ লোহিত সাগরে ডুবে গেছে। সেই জাহাজের ক্রুদের উদ্ধারের পর আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ইয়েমেন উপকূলে নোঙ্গর করি। এর পরপরই কোস্টগার্ডের ছদ্মবেশে একটি দল এসে আমাদের সানায় নিয়ে যায়। তারা হুতি বিদ্রোহী ছিল। আমরা ইয়েমেনের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিলাম, এমন অভিযোগে আমাদের বন্দী করা হয়।’
‘জাহাজের মালিকরা দায় এড়িয়ে গেছেন’
যদিও প্রাথমিকভাবে নাবিকদের বলা হয়েছিল যে শিগগিরই তারা মুক্তি পাবেন, কিন্তু কিছুই হয়নি। ওমানি জাহাজের মালিকদের কাছ থেকে দুই লাখ ওমানি রিয়াল মুক্তিপণ দাবি করেছিল হুতি বিদ্রোহীরা।
‘কিন্তু জাহাজের মালিকরা তাতে সাড়া দেননি। বিষয়টি এখন সরকারের হাতে উল্লেখ করে তারা তাদের দায়বদ্ধতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকেই তারা প্রতারণামূলক আচরণ করেছেন,’ বলেন মুস্তাবা।
প্রবীণ ছিলেন ‘আল রাহিয়া’ জাহাজে এবং মুস্তাবা ছিলেন ‘ফরিদা’-তে।
মিশর এবং বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় নাবিকদের মধ্যে সাতজন মহারাষ্ট্রের, দুজন তামিলনাড়ুর এবং পন্ডিচেরি ও উত্তর প্রদেশের একজন করে রয়েছেন। যেহেতু সাতজন ভারতীয় নাগরিক নন, তাদের মধ্যে একজন বা আরও বেশি বাংলাদেশি থাকতে পারেন।
জিবৌতি থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা চার মাস আগে আটকদের দেখতে গিয়ে তাদের মুক্তির জন্য সকল বিষয়ের নিশ্চিয়তা দিয়েছিলেন।
প্রবীণ বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহে একটি ইতিবাচক সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছি। এখানকার আদালত বলেছে আমরা কোনো অপরাধ করিনি। জাহাজ সংস্থা ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমাদের বেতন দেয়নি এবং আমাদের বাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।’
‘এটি জেলের মতো’
গত ১৫ বছর ধরে ওমান-ভিত্তিক আইল্যান্ড ব্রিজ ট্রেডিং অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট শিপিং কোম্পানির সাথে কাজ করা প্রবীণ বলেন, ‘এটি জেলের মতো। আমাদের বাইরে যাওয়া বা বাইরে থেকে কারও ভেতরে আসার অনুমতি নেই। খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসা সীমিত। আমরা প্রায়শই বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেতাম।’
আটক হওয়ার পর থেকে কোনো টাকা পাঠাতে না পারায়, ভারতে থাকা নিজের পরিবারের বিষয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন মুস্তাবা।
প্রবীণের ছেলে প্রণব কেভি জানান, বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরালিধরন এবং ভাদাকারার সংসদ সদস্য কে মুরালিধরনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সক্রিয় হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রায় ১০ মাস কেটে গেছে এবং প্রতিটি দিনই অসহনীয়।’
জিম্মি থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত কি না তা জানার চেষ্টা করছে ইউএনবি।