'মার্চ ফর ইউনিটি' কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী জড়ে হতে থাকেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাইয়ের গণজাগরণের স্বীকৃতি দিয়ে একটি ঘোষণার খসড়া তৈরির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন করা।
অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় পতাকা সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের কাছে জড়ো হতে দেখা গেছে। এসময় আয়োজকরা মঞ্চ প্রস্তুত করা এবং শেষ মুহুর্তের মাইকের সাউন্ড পরীক্ষাসহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
'মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলাই হবেনা', 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা', 'শেষ হয়নি যুদ্ধ, আবু সাঈদ মুগ্ধ', 'আজাদী না গোলামী' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্লোগান দিতে দিতে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে।
আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে এই কর্মসূচিতে অন্তত ৫ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করবে।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এস এম সাজ্জাত আলী নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল শহীদ ও আহত নিহতদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে জুলাই ঘোষণার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার শহীদ ও আহত নিহতদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার দলিল হিসেবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা অপরিহার্য।’
আরও পড়ুন: এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি ৬ সংস্কার কমিশন
তিনি আরও বলেন, ‘নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণের পক্ষে এই ঐতিহাসিক দলিল প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।’
জনগণের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের অন্যান্য জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীসহ জনগণের আহ্বানে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই মাসের ইশতেহার প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি জনগণকে উৎসাহ বজায় রেখে বিকাল ৩টায় শুরু হতে যাওয়া এ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
সরকারি সহায়তা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ জুলাই ঘোষণার বিষয়ে সরকারের চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'আমরা প্রাথমিকভাবে বিজয় অর্জন করেছি। জুলাই বিপ্লব ঘোষণার ব্যাপারে সরকার সম্মতি দিয়েছে। ঘোষণা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আসবে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের সমাবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক প্রতিফলন
এই ঘোষণাপত্রটি ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিকে সমর্থন করবে। আয়োজকরা ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সহ ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা করেছেন এবং কেন বিভিন্ন আন্দোলন তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল সেসম্পর্কে আলোকপাত করবে।
জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অংশগ্রহণে 'মার্চ ফর ইউনিটি' একটি ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে পরিণত হতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ঐক্য ও ন্যায়বিচারের আহ্বানকে আরও জোরদার করবে।