পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কারও কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই বা কেউ এ থেকে সুবিধা চায় না।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যা সবাই জানে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সংস্কারের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের পর তারা আর একদিনও থাকবেন না।
এর আগে ভারত, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার, চীন ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ বেশ কয়েকজন কূটনীতিক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও তাদের ভবিষ্যতের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, কিছু লোকের লুটপাটের কারণে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট নৈরাজ্য এবং দুর্নীতি মোকাবিলা ও দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার প্রয়োজন।
উপদেষ্টা জানান, দেশগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, সৌজন্য সাক্ষাৎ হওয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি।
বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব যাতে জনগণের উপকারে আসে সেটি নিশ্চিত করতে চান তারা।
চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন এ সম্পর্ক অক্ষত থাকবে।
বাংলাদেশের জনগণ চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচকভাবে দেখে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউর ভারপ্রাপ্ত দূত ড. বার্নড স্প্যানিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, ইইউ বাংলাদেশের বন্ধু ও অবিচল অংশীদার হিসেবে সবসময় পাশে থাকবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সময়টি তারা কীভাবে তাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে সে নিয়ে জানার আগ্রহ থেকে এই বৈঠকে এসেছেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তাদের কাজের যে কোনো সহায়তা দিতে উন্মুখ।
স্প্যানিয়ার বলেন, ‘ইইউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে থাকে। তাই আমাদের স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারি।’
জিএসপি প্লাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা জিএসপি প্লাস নিয়ে কথা বলিনি কারণ এটি ভবিষ্যতের একটি প্রক্রিয়া যা নিয়ে এখনই উদ্বেগের কিছু নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা হোসেন জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনগণ যেসব সংস্কারের কল্পনা করেছে তা সম্পন্ন হওয়া মাত্রই সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন করবে।
বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়েও আলোচনা হয়।