বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাত সুশাসন ও জবাবদিহিতার সংকটে ভুগছে।
বৃহস্পতিবার(২৩ মে) রাজধানীতে ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সামনে কী আছে?’ শীর্ষক এক সংলাপের মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফাহমিদা বলেন, আর্থিক অভিজাতদের সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘দেশের আর্থিক খাত ব্যাংকের উপর নির্ভর করে। দেশের উন্নয়নে এ খাতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই ব্যাংকিং খাতে ভঙ্গুরতা দেখা দিয়েছে। সুশাসন এবং জবাবদিহিতার ক্ষতি হয়েছে।’
ডা. ফাহমিদা বলেন, ব্যাংকে ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিলকরণ, রিট-অফ এবং ফোরক্লোজার সবকিছুই ব্যাংকে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ইচ্ছায় নয়, বরং বাইরের চাপে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, যখন ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়, তখন তার উপর নির্ভর করে নীতিগত পদক্ষেপ ভুল হবে। আর্থিক খাতের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সঠিক সময়ে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাংবাদিকদের জন্য তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহকে কঠিন করে গণমাধ্যমের প্রবেশকে সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফাহমিদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে, যখন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (বিবি) স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘তারা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) নিজেরাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের অধীনস্থ, এবং তারা স্বাধীন নয়। এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাতের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা থাকা উচিত এবং ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা উচিত।
সংলাপে উপস্থাপিত একটি গবেষণাপত্রে সিপিডি তুলে ধরেছে যে, দেশে খেলাপি ঋণের (এনপিএল) মোট পরিমাণ গত দশ বছরে তিনগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। যেটি ২০২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অবস্থা একই।
আরও পড়ুন: আ.লীগ ছাড়া সবাই বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধ করতে চায়: সিপিডি
তবে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলো ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ভালো কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ইসলামী ব্যাংকে ধীরে ধীরে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পরিচালনার নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারল্য ২৫ শতাংশে নেমে আসে।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতকে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করতে হলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা অতীতে দেখেছি ব্যাংকিং খাতের লাভের বেসরকারিকরণ এবং লোকসান জাতীয়করণ হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২৭৭৬ টাকা করার সুপারিশ সিপিডির