শনিবার অভিবাস দিবসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে অভিবাসীদের ত্যাগ অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪ দেশে এক কোটি ২০ লাখ অধিক বাংলাদেশি অভিবাসীকর্মী কর্মরত রয়েছেন। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় জাতিসংঘের উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে অভিবাসী ভাই-বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শ্রম, অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য।’
রবিবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রী এই সব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির প্রেক্ষিতে অভিবাসী ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অভিবাসীকর্মী পাঠানোয় যার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বিভিন্ন ফলপ্রসু কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহণ
তিনি বলেন,‘করোনার সময়ে অভিবাসী ভাইবোনেরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হয়েছিলেন সেগুলো মোকাবিলায় সরকার অত্যন্ত দ্রুত কার্যকরী সব পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি নিজে অভিবাসী গ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি যাতে অভিবাসীরা জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি ও বেতন-ভাতার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের ঘোষিত শতকরা দুই শতাংশ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও প্রবাসী ভাই-বোনেরা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। আমাদের অভিবাসী ভাইবোনদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের উৎস। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে। এদের টেকসই ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে চলছে।’
আব্দুল মোমেন বলেন,‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে এক হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো,এনজিও,সুশীলসমাজসহ সকল অংশীজনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জনগণ গ্রহণ করেনি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থানের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে অতিক্রম করা সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বিদেশে বর্তমান শ্রমবাজারগুলো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ,নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং সর্বোপরি অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অভিবাসীদের কল্যাণ এবং করোনা মহামারির কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে স্থিতিশীল রাখা এবং পুনরায় বেগবান করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বদ্ধ পরিকর হয়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের অভিবাসী ভাই-বোনদের এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত করা সম্ভব হবে।’