সূত্র জানায়, ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি সকাল ১০টায় ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয়।
এর আগে নাব্যতা সঙ্কট মোকাবেলার পর মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় রওনা হয় স্প্যানটি। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে বিকাল পৌনে ৫টায় জাজিরা প্রান্তে স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) পৌঁছায় । তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ‘তিয়ান ই’ স্প্যানটিকে পাজা করে নিয়ে যায়।
এদিকে সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর এর আগে ৫টি স্প্যান বসানো হয়। এর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে ১ কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। আর বুধবার ‘ঋ-৬’ স্প্যানটি বসানোর পর সেতুটির ওই অংশে ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।
এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত না থাকায় সেখানাকার স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) ‘ঋ-১’ আপাতত সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর রাখা হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত হলে ‘ঋ-১’ স্প্যানটি সরিয়ে বসিয়ে দেয়া হবে।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, মূল সেতুর মোট খুঁটি (পিয়ার) ৪২টি। এর মধ্যে ২০টি দৃশ্যমান রয়েছে। যার ১৬টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে আরও ১১টি খুঁটি। ৬,৭,৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর এই পাচঁটি খুঁটিতেই পাইল বসেছে ৩টির বেশি। ৮, ৩১ ও ৩২ নম্বর খুঁটিতে খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসানোর কাজ চলমান আছে। আর ২৮ জানুয়ারি থেকে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে আরও ৪টি করে খাঁজকাটা কাটা পাইল বসানো শুরু হচ্ছে। বাকি ছয়টি অর্থ্যাৎ ১০, ১১, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩০ খুঁটিতেও খাঁজকাটা পাইল বসবে। তাই সেতুর মূল ভিতের কাজ এখন শেষ পর্যায়ের চলে আসছে। এতে সেতু চালু হওয়ার কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, নদীতে ৪০টি খুঁটির মোট ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৯২টি পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৪টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলোর টম সেকশন হবে।
এছাড়া ১৭টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ১৮টি স্প্যান। সম্পূর্ণ হওয়া এই ৩৫টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছেছে ১৯টি স্প্যান। বাবি ১৬টি স্প্যান পথে রয়েছে বা চীন থেকে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সেতুর নিচ তলায় চলবে ট্রেন। তাই নিচতলায় ট্রেন চলাচলের জন্য স্লাভ বসানো হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের বসিয়ে দেয়া স্প্যানে এ পর্যন্ত ১২৮টি রেলওয়ে স্লাভ বসানো হয়েছে। রেল লাইনের জন্য ২ হাজার ৯৫৯টি স্লাভের মধ্যে এরই মধ্যে ১৩০৫টি স্লাভ তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্লাভগুলো তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। আর ২২ মিটার দীর্ঘ রোডরওয়ে স্লাভ প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি। মাওয়া ও জাজিরা দুপাড়েই এই রোডওয়ে স্লাভ তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত ২৮০টি। এই মাসেই রোডওয়ে স্লাভ বসানোর কথা রয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। আর দু’পাড়ে ভয়াডাক্ট (সংযোগ সেতু) রয়েছে আরও প্রায় ৩ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুটি হচ্ছে ৯ দশমিক ৮২ কিলোমিটার।
সংযোগ সেতুও তরতর করে উঠে যাচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।