অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
মঙ্গলবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত ও আইনি জটিলতার কারণে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
তিনি অবশ্য পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন উন্নয়ন এবং গবেষণা সংস্থা দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ অনুমান করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ই সংস্থাগুলো তাদের পদ্ধতিকে সঠিক বলে দাবি করে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে।
কামাল বলেন, ‘আসলে, অর্থ পাচারের পরিমাণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাত্রা বা পরিমাণ নির্বিশেষে অর্থ পাচারের সম্ভাব্য উৎস বন্ধের পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।’
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে।
সরকারের পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে মানি লন্ডারিং অনেকাংশে কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চোরাকারবারি বা পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে সরবরাহ করছে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা (সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি সহ) বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন বেশ কয়েকটি মামলা বর্তমানে তদন্ত চলছে।
এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স কাজ করছে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা প্রদানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন নেছা খানের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির শতাংশে বাংলাদেশ ঝুঁকি সীমার অনেক নিচে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত ও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধে বড় ধরনের কোনও ঝুঁকি নেই বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:৩২.৪৬ কোটি টাকা বকেয়া: রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার
আইএমএফের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেশীয় ঋণসহ বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ঋণ খেলাপির দায়ে ২১৭ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঋণ খেলাপি (পাবনায়)১২ জন কৃষককে জেলে নেয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি তফসিলি ব্যাংক নয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, ঋণখেলাপিদের কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিতে মন্তব্য করা ঠিক হবে না, এটি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত।
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণে নীতিমালা অনুমোদন মন্ত্রিসভার