আলোকচিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডন (ইউএএল) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী, লেখক, শিক্ষক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম।
রবিবার তার ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষে দৃক পিকচার লাইব্রেরিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ ঘোষণা দেন। এতে তিনি জানান, ইউএএলের ফিলিস্তিনবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি এই পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ২০২২ সালের ৮ জুলাই লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
সে সময় আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনে ইউএএল বিশ্বের শীর্ষ দুইয়ে ছিল উল্লেখ করে ড. শহীদুল আলম বলেন, একাডেমিক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকারের কারণে তিনি আনন্দের সঙ্গে ইউএএল চ্যান্সেলর গ্রেসন পেরির কাছ থেকে ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। গ্রেসন পেরি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে "সমস্যা তৈরির জন্য বিশ্বের বৃহত্তম কারখানা" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
ড. আলম বলেন, জেমস পারনেল নামে একজন কট্টর ইহুদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রদর্শন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন প্রদর্শনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান ইউএএলের শিক্ষার্থীরা। ব্রিটেনের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের অগ্রণী ভূমিকার কারণে তিনি আনন্দিত।
তবে, ইউএএল প্রশাসন, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য তাদের সঙ্গে সংহতি জানানোয় তিনি হতবাক হয়েছেন বলেও জানান।
ড. আলমের মতে, ইউএএলের শিক্ষার্থীরা বারবার উল্লেখ করেছে যে কীভাবে তাদের ‘দমন করা হয়েছে, গতানুগতিকভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।’ শিক্ষার্থীরা দাবি করে যে ‘ইউএএল, পুমা, কর্নিট, এলভিএমএইচ, ল'রিয়াল এবং ইসরায়েল ওশানোগ্রাফিক এবং লিমনোলজিকাল রিসার্চ, শেনকার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বেজালেল একাডেমি অবে আর্টস অ্যান্ড ডিজাইন সহ আরও অনেক ইসরায়েলি বা ইসরায়েল অনুমোদিত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ ও চলমান গণহত্যার সহযোগী।
ড. আলম বলেন, এসব কারণেই তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি রাখতে চান না এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএএল লন্ডন কলেজ অব কমিউনিকেশনের মিডিয়া ডিন স্টিফেন ক্রসকে জানিয়েছেন যে তিনি সম্মানসূচক ডক্টরেট ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
ড. শহিদুল আলম লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭৬ সালে প্রাণ রসায়ন ও জেনেটিক্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপরে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেডফোর্ড কলেজে ডক্টর অব ফিলোসফি অর্জনের জন্য লন্ডনে চলে যান। যেখানে তিনি ১৯৮৩ সালে জৈব রসায়নে ডক্টরেট অব ফিলসফি অর্জন করেন।
ড. শহিদুল আলম ১৯৯৮ সালে দৃক পিকচার লাইব্রেরি এবং ১৯৯৯ সালে ঢাকায় পাঠশালা সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি (পরবর্তীকালে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছবি মেলা আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি উৎসব চালু করেন, যা বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক ফটোগ্রাফি উৎসব। তিনি এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।