বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে দায়িত্ব অবহেলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শুয়াইবুর রহমান চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ইউকে শাখা।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনের সভাপতি মো. রহমত আলী।
তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি ২০১ সিলেট থেকে লন্ডন ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্ব অবহেলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শুয়াইবুর রহমান চৌধুরী ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর মারা যান।
তিনি আরও বলেন, বিমান উড্ডয়নের আড়াই ঘণ্টা পরে শুয়াইবুর রহমান চৌধুরী প্রথমে অসুস্থবোধ করেন পরবর্তীতে মারা যান।
বিমানের লগ বুক থেকে জানা যায়, আনুমানিক ৬টা ৫৫মিনিটে ইউটিসিতে কেবিনের প্রধান ফ্লাইট পার্সার পাইলটকে জানানো হয় একজন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তাকে অক্সিজেন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ৭ দশমিক ২৫ ইউটিসিতে কেবিনের প্রধান ফ্লাইট পার্সার জানান যাত্রী মারা গিয়েছে। যদিও ফ্লাইটে কোনো চিকিৎসক ছিল না।
নিয়ম অনুযায়ী যখন কোনো যাত্রী বিমানে অসুস্থ হয়ে পরে তখন বিমান থেকে নিকটতম বিমানবন্দরে একটি এসওএস পাঠানো হয়। কিন্তু শুয়াইবুর রহমান চৌধুরীর অসুস্থ হওয়া থেকে শুরু করে মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত কোনো এসওএস নিকটস্থ বিমানবন্দরে পাঠানো হয়নি। যদিও পাইলট ৩০ মিনিট সময় পেয়েছিলেন। যা আন্তর্জাতিক বিমান পরিচালনা নীতিমালাসহ আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০২০, বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ২০১৭, বিমান দুর্ঘটনা ও মারাত্মক ঘটনার তদন্ত বিধিমালা ২০২৩ এবং সংবিধানের ৩১ এবং ৩২ অনুচ্ছেদ পরিপন্থী।
আরও পড়ুন: সৈয়দপুর বিমানবন্দর হচ্ছে আঞ্চলিক এভিয়েশন হাব: পর্যটনমন্ত্রী
এ ব্যাপারে এইচআরপিবি’র পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত ১৯ মার্চ শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিবাদীদেরকে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০২০ ও বিমান দুর্ঘটনা ও মারাত্মক ঘটনার তদন্ত বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী দুর্ঘটনার যাত্রীর ক্ষেত্রে আইনের বিধানগুলো পালন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন ২০২০ অনুযায়ী শুয়াইবুর রহমান চৌধুরীর পরিবারকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং যাত্রী অসুস্থ থাকা অবস্থায় কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ না করার কারণে পাইলটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না বিষয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।
আদালত অপর এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে, সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ৭ দিনের মধ্যে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি (দুইজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর) সহকারে কমিটি গঠন করে যাত্রীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন।
রিট পিটিশন করেন হিউম্যান রাইট অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে মো. সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া ও রিপন বাড়ৈ। মামলার বিবাদীরা হলেন সচিব বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সচিব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেয়ারম্যান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ, চেয়ারম্যান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং পাইলট ফজল মাহমুদ।
বাদী পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিল আইনজীবী সেলিম আজাদ (এএজি)।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে বিমানের লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটের আসন ফাঁকা পোস্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ