পরীক্ষায় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৪ কোম্পানির মধ্যে ১১টির পাস্তুরিত দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই ১১টি কোম্পানি হলো-মিল্কভিটা, ডেইরী ফ্রেশ, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং, প্রাণ মিল্ক, আয়রন, পিউরা ও সেফ ব্রান্ড।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুধে সিসার পাশাপাশি ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
যদিও বিএসটিআই ৩০৫টি নমুনা সংগ্রহ করে মাত্র দুটি ব্রান্ডের দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
শুনানিকালে আদালত বলে, ‘কেউ বলছেন দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে, আবার কেউ বলছেন ক্ষতিকর উপাদান নেই। তাহলে দুধ নিয়ে কি কোনো রাজনীতি হচ্ছে? এ ধরনের দুধ বাজারে থাকা কি সমীচীন? বিশ্বের অন্য কোনো দেশে দুধে এ ধরনের ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হত দফায় দফায়।’
প্রতিবেদন দাখিলের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, ‘আমরা তরল দুধের ৫০টি নমুনা, ১১টি পাস্তুরিত দুধের ১১টি নমুনা ও ৬টি গো-খাদ্য তিনটি সরকারি সংস্থার ল্যাব ও তিনটি বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। সবকটি দুধের নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার বেশি সীসা ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। গো-খাদ্যে মাত্রা অতিরিক্ত কিছু পাওয়া যায়নি।’
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ১৯টি প্যারামিটারে দুধ পরীক্ষা করেছেন। বিএসটিআই ৯টি ও আমরা ৫টি প্যারামিটারে এটা পরীক্ষা করেছি।
এসময় আদালত বলে, ‘এই প্যারামিটারের কথা বলে বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো যাবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সুপারশপ/দুগ্ধ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কর্তৃক পাস্তুরিত তরল দুধের নমুনা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়। প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের ৫০০/১০০০ মি.লি. পরিমাণ পাস্তুরিত তরল দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয় বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, পরমাণু শক্তি কমিশন, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চ ও আইসিডিডিআর, বি এর ল্যাবে। এসব দুধ ও গো-খাদ্য পরীক্ষা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সেই পরীক্ষায় ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের সবকটিতে সীসা ও কোনোটিতে ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে বলে জানান আইনজীবী ফরিদুল আলম।
এই পরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই কি ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যানিমেল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বা বিতরণ করতে পারবে না আদেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে কোনো খামারি বা কেউ প্রেসক্রিপশন ছাড়া গবাদিপশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতেও পারবে না বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে।
এ সময় বিএসটিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী সরকার এমআর হাসান মামুন ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক শুনানি করেন।
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘বাজারে বিশুদ্ধ দুধ দিতে বিএসটিআই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য যা যা করা দরকার তাই করা হবে।’
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি তাদের এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী গরুর দুধে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক, দইয়ে ক্ষতিকর সিসা ও গো খাদ্যেও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে জানায়।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্ট গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বত:প্রণোদিত হয়ে রুল ও আদেশ জারি করে।
আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেয়। জাতীয় নিরাপদ খাদ্যকর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।