করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় সরকার আরোপিত ১১ দফা বিধিনিষেধ অমান্য করলে লকডাউন দেয়া হতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্রই ১১ দফার একটি কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছি। আমরা জনসাধারণকে এই নির্দেশনা মানতে আহ্বান করবো। এই নির্দেশনা মানলে দেশে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না। নির্দেশনা না মানলেই লকডাউন দেয়ার চিন্তা রয়েছে।’
শনিবার (১৫ জানুয়ারি)-দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সিটিস্ক্যান ও ডায়লাসিস ইউনিট উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলছে, সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধি নিষেধ না মানলে দেশের পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। লকডাউন দিলে দেশের ক্ষতি, আমরা সেদিকে যেতে চাই না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমেলাসহ অনেকস্থানেই যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এটা খুবই উদ্বেগজনক। নিজের জন্য, দেশের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরার কোন বিকল্প নাই। মাস্ক পরতে হবে যাতে আমরা সংক্রমিত না হই।
মন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা দ্রুত সক্রমিত হচ্ছে। গতকালের হিসাবে একদিনে ৪ হাজার ৪০০ জন সক্রমিত হয়েছে। এ হিসাবে সক্রামণের হার প্রায ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন ৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সবাইকে টিকা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের টিকার কোন ঘাটতি নেই। ইতোমধ্যে সোয়া ১৪ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন ও দশ বেডের ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির, জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোনে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ, সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বিপ্লব, মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১০ জানুয়ারি করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ১১ দফা কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর শুরু হয়।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি: ফিরে এল কঠোর বিধিনিষেধ
বিধিনিষেধগুলো হলো
• সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে;
• দোকান, শপিংমল, বাজার, হোটেল, রেঁস্তোরাসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে;
• অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে;
• রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে;
• ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না;
• স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দরে জাহাজের ক্রুদের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু চালক থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে;
• ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে এবং চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ এর টিকা সনদধারী হতে হবে;
• বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে;
আরও পড়ুন: বিশ্বে একদিনে ৩৪ লাখের বেশি করোনা শনাক্ত
• স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন;
• সবার করোনার টিকা ও বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে;
• কোনো এলাকায় বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে সরকার বেশ কয়েকবার বিধিনিষেধ এবং লকডাউন আরোপ করেছে।
আরও পড়ুন: দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় শনাক্ত