মাদকের বিস্তার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেউ যাতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে না জড়ায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩ উপলক্ষে তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের ৫ হাজার ৪৭৪টি স্থানীয় সরকার সংস্থা- ১২টি সিটি করপোরেশন, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৩২৯টি পৌরসভা, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ এবং ৪ হাজার ৫৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৮ হাজার জনপ্রতিনিধি যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে এবং মন্দির সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদান করছে।
তিনি বলেন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার উন্নয়নে যা যা করা দরকার সরকার তা করবে।
তিনি জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ দিতে বলেছেন, যাতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যথাযথ পরিষেবা দেয় এবং সচেতনতা সৃষ্টি করে, বিদেশি চাকরিপ্রার্থীরা যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত না হয় এবং তারা ব্যাংকগুলো থেকে; বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে জামানত দিয়ে ঋণ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের খাদ্য উৎপাদনে কাজ করতে এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে জনগণকে উৎসাহিত করতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যা সম্পদ আছে তা ব্যবহার করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি সবাইকে সেই অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান করছি।’
আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু বলে নিজেদের অবজ্ঞা করবেন না: হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবার সরকার গঠনের পর স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রেখে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। ‘এ কারণেই গ্রাম-পর্যায় পর্যন্ত আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি।’
এখনো অনেক গ্রামে মাটির রাস্তা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দল যদি আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে তারা এসব রাস্তারও উন্নয়ন করবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গ্রামকে শহরের মতো গড়ে তোলা হবে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের সঠিকভাবে সেবা দিয়ে জনগণের ভরসা ও আস্থা অর্জনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষ তথা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাই জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার, আমার এবং সবার (জনপ্রতিনিধি) দায়িত্ব। জনগণের জন্য কাজ ও সেবা করে তাদের ভরসা ও আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যেতে হবে। আপনাদের ভরসা ও আস্থা অর্জন করতে হবে, যাতে জনগণ আবার আপনাদের ভোট দেয়।
আজকের উন্নয়নের সাফল্য দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ জনগণকে সজাগ থাকতে বলেন। যাতে তার ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলের মতো অর্জনকে কেউ নষ্ট করতে না পারে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি, যা ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ' নির্মাণ এবং ২০৩০ সালের এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে বৈশ্বিক মঞ্চে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও স্থানীয় সরকার সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও সিলেটের পাঁচ সিটি করপোরেশনের মেয়র; চট্টগ্রাম ও পিরোজপুর দুই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; পটুয়াখালীর দুমকি ও চট্টগ্রামের রাউজান, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও রংপুর সদরের চারটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; দুটি পৌরসভার মেয়র- নীলফামারী সদর ও নাটোর সদর; ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের দুই সদস্য; জুড়ী উপজেলা (মৌলভীবাজার) ও মোহাম্মদপুর উপজেলা (মাগুরা) থেকে দুই ভাইস চেয়ারম্যান; আটটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা হলেন- নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন (রাউজান উপজেলা, চট্টগ্রাম), গোলাপগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতি, চাঁদপুর সদরের বাগাদী, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়কাশিয়া বিরামপুর, সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া, মোড়লগঞ্জের তেলেগাতী, লালগঞ্জ উপজেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলা, সিলেটের সুরমা ও নরসিংদীর রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়নসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: ‘লুটেরাদের’ ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: দ. আফ্রিকায় প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা