শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অধীনে ১৫ বছরের অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের পর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহায়তা করতে দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৪ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, 'সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা একটা জগাখিচুড়ির মধ্যে ছিলাম। তারা আমাদের অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছে। তবে সবার সহযোগিতায় আমরা জাতিকে পুনর্গঠন করতে পারব।’
বৈঠকে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দেশ ব্যর্থ হতে পারে না। ‘অন্যথায় এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। জাতি অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হতে পারে।’
ব্যবসাকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখার জন্য প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, 'আপনাদের স্পষ্ট বার্তা দেওয়া উচিত যে, রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসা মেশাবেন না। এতে কোনো লাভ হবে না।’
অধ্যাপক ইউনূস ছাত্র-নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক বিপ্লবকে 'মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন' বলে বর্ণনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেন। ‘তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি বিদেশে থাকাবস্থায় তারা আমাকে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিল।’
জাতির এই সংকটকালে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি বিজিএমইএ নেতারা পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তারা বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে খাতভিত্তিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠনের অনুরোধ জানান। তাদের দাবির মধ্যে ঋণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করা এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে সমন্বয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ইউনূসের প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম সংগঠনগুলোর আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা তাদের উদ্বেগগুলো শোনেন এবং তা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অগাধ প্রতিভা। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমরা চাই এটা আরও বাড়ুক।’
বৈঠক শেষে বিজিএমইএ পরিচালক শোভন ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করায় সারা বিশ্বের ক্রেতারা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা অর্জন করছে। ‘আমরা সেই আস্থাকে কাজে লাগিয়ে কার্যাদেশ বাড়াতে চাই।’
তিনি চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি টাস্কফোর্স গঠনসহ শিল্পের স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয়তার রূপরেখাও তুলে ধরেন।
শোভন ইসলাম বলেন, 'দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা পালন করতে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে আমরা তাকে অনুরোধ করেছি।’
তিনি বিদ্যুৎ প্রাপ্তি এবং তারল্য সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএর সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করলে অধ্যাপক ইউনূস ইতিবাচক সাড়া দেন। ‘আমাদের সহায়তা করবেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।’
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস সচিব হলেন শফিকুল আলম