রাজধানীর গুলশান-১-এর ‘গুলশান শপিং সেন্টার’ ৩০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ।
আজকের আদেশের ফলে ‘গুলশান শপিং সেন্টার’ ভেঙে ফেলতে হবে বলে জানান বাণী চিত্র ও চলচ্চিত্র লিমিটেডের আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। যিনি শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডেরও আইনজীবী।
বাণী চিত্র ও চলচ্চিত্র লিমিটেডের পরিচালক জিয়া ইয়ামিনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন জেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। বাণী চিত্র ও চলচ্চিত্র লিমিটেডের পক্ষে শুনানি করেন জেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী ও খন্দকার নাজমুল আহসান।
আরও পড়ুন: থানা-আদালত প্রাঙ্গণে জব্দ করা মালামালের তথ্য জানাতে আইজিপিকে হাইকোর্টের নির্দেশ
গত বছরের জুলাইয়ে গুলশান শপিং সেন্টার ভেঙে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট রিট করেন বাণী চিত্র ও চলচ্চিত্র নামে দুটি কোম্পানি। সে রিটের শুনানির পর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে রুল শুনানি শেষে গত ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ গুলশান শপিং সেন্টার ৩০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ভবন মালিক পক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। যে আবেদন আজ খারিজ করে দিলেন হাইকোর্ট।
গত ২৩ জুলাই রাজধানীর গুলশান-১ এ অবস্থিত ‘গুলশান শপিং সেন্টারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সিলগালা করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
‘গুলশান শপিং সেন্টার’-এর হোটেল, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নাইন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান।
‘গুলশান শপিং সেন্টার’-এর জরাজীর্ণ ভবন ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকার কারণে ২০২১ সালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ডিএনসিসিকে জরুরি ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেয়।
অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নাইন বলেন, শপিং সেন্টারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দোকান মালিকদের ভবন খালি করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা সেটি করেনি। ঝুঁকিপূর্ণ-পরিত্যক্ত এই ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বারবার সতর্ক করা হলেও ব্যবসায়ীরা পরিত্যক্ত ভবনটি খালি করছেন না। খালি করার জন্য একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছেন। জানমালের নিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সুপারিশ বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯, তৃতীয় তফসিল-১৭, ইমারত নিয়ন্ত্রণ ইমারত সম্পর্কিত প্রবিধানের ১৭.১ ও ১৭.২ অনুযায়ী জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটটি সিলগালা করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ও নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ প্লাটুন পুলিশ, ১ প্লাটুন এপিবিএন ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ উপস্থিত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মার্কেটটির গেটগুলো তালাবদ্ধ ও সিলগালা করা হয়। এ সময় মাইকিং করা হয় ও মালামাল সরানোর জন্য নিদের্শনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য সেবা সংস্থার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এদিকে গুলশান শপিং সেন্টার সিলগালা করার প্রতিবাদে মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা গোলচত্বর অবরোধ করে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। সেই সময় দোকানদাররা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। গুলশান শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী এই মার্কেটে ৭ শতাধিক দোকান রয়েছে।
আরও পড়ুন: মহাসড়কে হাটবাজার, অননুমোদিত যানবাহন অপসারণের নির্দেশ হাইকোর্টের