১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কর্মচারী নিয়োগ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে করার বিষয়ে কমিটির সুপারিশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
মন্ত্রী জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি পিএসসির মাধ্যমে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ থেকে ২০ গ্রেডের অর্থাৎ তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ এবং নিয়োগের পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ১১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করে। তাদের রিপোর্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে যে এটি সঠিক আছে কিনা। এতে কোন ত্রুটি আছে কিনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যালোচনা শেষে আমরা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা কি পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দিব, নাকি একটি কর্তৃপক্ষ করব। তবে কমিটি ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনকে দায়িত্ব প্রদানের সুপারিশ করেছে। সরকারি কর্মকমিশন বলেছে তারা এটা করতে সক্ষম হবে।’
এই কমিটির সুপারিশ চূড়ান্ত নয় জানিয়ে ফরহাদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপর আরও কিছু মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের পরামর্শ নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু টেকনিক্যাল মিনিস্ট্রি আছে, তারা তাদের লোক কীভাবে নেবে, সেটার একটা ব্যাপার আছে। এটা যখন ওখানে (পিএসসি) হবে সেটা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয় কি না।’
আগামী তিন মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ফরহাদ হোসেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বেশ কিছু জটিলতা ওখানে রয়েছে। কারিগরি কিছু বিষয় রয়েছে। সেটি কীভাবে হবে, আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে আমরা পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেব। আশা করি আমরা আগামী তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি শেষ করতে পারবো।’
নিয়োগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী দাবি করেন, যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রশাসনে পদোন্নতি এবং পদায়ন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কর্মকর্তারা বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা জন্য থাকেন, কেউ কেউ অসুস্থ থাকেন; ছাড়া অবসরের বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক সময় অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনের থেকে আমরা বেশি পদোন্নতি দিচ্ছি, সেটা কাজে লাগছে। কাউকে কিন্তু অযথা প্রমোশন দিয়ে, ডেস্ক নেই তার কোন কাজ নাই, এ রকম কিছু নাই কিন্তু। বরং আমাদের আরও (কর্মকর্তা) প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী আমরা ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলো আছে।’
প্রয়োজন অনুযায়ী সকল মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ফরহাদ হোসেন।
ভোটের আগে বিশেষ পরিস্থিতিতে কয়েকজন সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করেন। এখন আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি ভালো লোক খুঁজে দেওয়া।
মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের অনেক কাজ। সে অনুযায়ী ইউএনওদের ঠিকমতো কাজ করতে হবে। সেখানে তাদের গাড়ির প্রয়োজন। মাঠ পর্যায়ের গাড়িগুলো ১৭ বছরের পুরনো।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ২৬১টি গাড়ি কেনা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ডিসিদের গাড়ি ৬১টি। বাকিগুলো ইউএনওদের। সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ১৬১টি গাড়ির তৈরির সরঞ্জাম রয়ে গেছে। প্রতিটি গাড়ির দাম মূলত ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭২০ টাকা। এরমধ্যে প্রতিটি গাড়ির জন্য এক কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার ২৮০ টাকা সরকারের ট্যাক্স। এনবিআর বা অর্থ মন্ত্রণালয় টাকাটা পেয়ে যাচ্ছে। অনেকে হয়তো মনে করছে এত দামি গাড়ি।’
বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে এই সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।