বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে দুর্বৃত্তরা কীভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল সে বিষয় তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিতে বলেছিল দুর্বৃত্তরা।
ভিডিও ফুটেজ ও বিজিবি সদস্যদের বরাতে তিনি বলেন, যারা বিটিভি ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে তাদের অধিকাংশই ছাত্র ছিল না।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রথমে বিজিবির একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি বুঝে দ্বিতীয় দলটিও ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধ করতে গিয়েছিলেন।’
বৃহস্পতিবার উন্নয়ন সহযোগীদের ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিটিভি রক্ষায় বিজিবি সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন ভাষায় কথা বলেছে হামলাকারীরা। যা অবর্ণনীয়। এমনকি তারা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করে।’
দুর্বৃত্তরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সেখানকার ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে বিজিবির টিম লিডার প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়েন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা চারদিক থেকে বিজিবি সদস্যদের ঘিরে ধরছিল। তারা বলতে থাকে, আপনাদের (বিজিবি সদস্যরা) ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হলো, পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানান। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে।'
এ পর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা গুলি চালাতে প্রস্তুত থাকলেও তাদের টিম লিডাররা অনুমতি দেয়নি।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বিজিবি টিম লিডারের পায়ে গুলি লেগেছে। আরও কিছু জায়গায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। তারা এগিয়ে না এলে বিটিভিকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতো না। এটা এখন আংশিক সুরক্ষিত আছে।’
র্যাব হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়েছে এ তথ্য ভুয়া দাবি করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, র্যাব হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েনি বলে ভিডিও প্রমাণ মিলেছে। র্যাব হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েনি এটি নিশ্চিত হয়েছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে। আমরা প্রতিটি মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
সহিংসতার ভিডিওগুলো কূটনীতিকদের দেখানো হয়েছিল।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আমরা তাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপন করেছি এবং ভিডিও দেখিয়েছি। আমরা আগেই বলেছি, র্যাব হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়েনি। এছাড়া আন্দোলনে বিজিবি ও পুলিশের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছি। আমরা তাদের ভিডিওটিও সরবরাহ করেছি।'
ব্রিফিংয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, সুইডেন, কাতার, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, মরক্কো, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২২টি দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এম নাঈমুল ইসলাম খানও ব্রিফিংয়ে যোগ দেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই টেলিভিশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ পদক্ষেপের বারবার আশ্বাস দিলেও এর আগে ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও স্লোগান দিয়ে ছাত্রসমাজের একটি অংশের মধ্যে অস্থিরতা ও সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট।
পরিস্থিতি শিগগিরই প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ব্যাপক সহিংসতা, নৈরাজ্য ও নৃশংসতা শুরু হয়, যাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে সবচেয়ে দুঃখজনক ও ভয়াবহ যেটি ঘটেছে সেটি হলো কিছু তরুণ ও অপ্রাপ্তবয়স্কসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগীদের হত্যার জন্য সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের 'পুরস্কার' দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
মেট্রোরেল স্টেশন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে; জনস্বাস্থ্য সুবিধা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস; জাতীয় সম্প্রচার সুবিধা যেমন বাংলাদেশ টেলিভিশন সদর দপ্তর; অগ্নিনির্বাপক যানবাহন এবং জাতীয় ডেটা সেন্টার, কেন্দ্রীয় ব্রডব্যান্ড অবকাঠামো ও অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কসহ ডিজিটাল সংযোগের মতো উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি সম্পত্তিতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে এক দশকের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে কারাগারে হামলা ও নয়জন দোষী সাব্যস্ত জঙ্গিকে মুক্ত করা হয়।