স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলার সাত গ্রামে সাতটি পুকুর খনন প্রকল্প হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন কার্যক্রম শুরু করে। যা চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।
স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি পুকুরের গভীরে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানির স্তর ঠিক রাখা এবং ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে উপরিভাগের পানি ব্যবহারে এলাকার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাও প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পুকুরের পানির গভীরতা হবে পাঁচ থেকে ৭ দশমিক ৫ মিটার। চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার পাশাপাশি পুকুরের অপব্যবহার রোধে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে থাকবে একটি ফটক। চারপাশে থাকবে হেঁটে চলার ইটের রাস্তা। থাকবে পুকুরপার রক্ষার জন্য বেষ্টনী। পুকুরের আকার সর্বনিম্ন এক হাজার ৫০০ বর্গমিটার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার বর্গমিটার হওয়ার কথা।
প্রকল্পের আওতায় থাকা পুকুরগুলো হচ্ছে মাগুরা সদরের বনগ্রাম, জাগলা, শিবরামপুর, রায়গ্রাম পুকুর, শ্রীপুরের খামারপাড়া, কল্যাণপুর ও রাজাপুর পুকুর। এসব পুকুর কার্যত জেলা পরিষদের। এ কারণে গোটা কার্যক্রম তদারকি করার জন্য পুকুর এলাকায় জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দিয়ে একটি তদারকি কমিটি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব জেলায় স্যালাইন তথা লবণাক্ত পানির আধিক্য রয়েছে, সেসব এলাকায় এ প্রকল্পের কাজ হওয়ার কথা। মাগুরায় স্যালাইন ওয়াটারের আধিক্য নেই। এখানকার মানুষ নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানি পানে অভ্যস্ত। যে কারণে তারা এই পুকুরের পানি পান করবে তেমন সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, মাগুরায় পর্যাপ্ত নলকূপ থাকায় খনন করা পুকুরের প্রকৃত লক্ষ্য বুঝতে পারছে না স্থানীয় লোকজন। ফলে এসব পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি গোসলসহ অন্য ব্যাবহারিক কাজ করছেন তারা। অথচ এসব পুকুরে মাছ চাষ কিংবা অন্য ব্যবহারিক কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগুরা সদরের শিবরামপুরের পুকুরটির খননকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সেই পুকুরে পলাশ নামের স্থানীয় এক যুবক মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন। একই চিত্র দেখা গেছে রাজাপুর, কল্যাণপুর, খামারপাড়া পুকুরেও। শ্রীপুরে রাজাপুরের পুকুরে মাছ চাষ করছেন মোজাহার আলী নামের এক ব্যক্তি। একই উপজেলার কল্যাণপুর পুকুরে মাছ চাষ করছেন সাহেব আলী।
রাজাপুরের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। মাছের খাবার দিয়ে পানি বিষাক্ত করছে। আমরা এসব পুকুরের পানি পান করি না।’
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড বিল্ডার্সের তত্ত্বাবধায়ক আসিফ আল আসাদ বলেন, ‘কাজে কোনও অনিয়ম হয়নি।’
মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পংকজ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ঠিকাদারি জবাবদিহির ক্ষেত্রে আমাদের কথা বলার সুযোগ কম।’
শ্রীপুর জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত কাজল বলেন, ‘সাতটি পুকুরের মধ্যে শ্রীপুরের তিনটির কাজ ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ হয়েছে। সদরের চারটি পুকুরের কাজ গড়ে ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ইতোমধ্যেই বরাদ্দের ৫০ শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছে।