ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদ সদস্যদের অনাস্থা ভোটে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার। এর ফলে ফ্রান্সের বর্তমান সরকারের পতন ঘটছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এই ভোটাভুটি হয়।
ফ্রান্সে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জাতীয় পরিষদ সদস্যদের ন্যূনতম ২৮৯টি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেখানে বার্নিয়ারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ৩৩১টি ভোট পড়েছে।
দেশটির বামপন্থী দলগুলোর জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) ও উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) নেতাদের অধিকাংশই বার্নিয়ারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে, ১৯৬২ সালের পর বার্নিয়ারই প্রথম ফরাসি প্রধানমন্ত্রী যাকে অনাস্থা ভোটে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলো।
আরও পড়ুন: ফ্রান্স-বাংলাদেশ সম্ভাব্য রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদনটি 'অসত্য': প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ফ্রান্সের সংবিধান অনুযায়ী, বার্নিয়ারকে এখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে পদত্যাগপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হবে বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।
ভোটাভুটির আগে ফরাসি সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় ২০২৫ সালের সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট পাস করতে বাধ্য করার সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গান বার্নিয়ার। তিনি বলেন, ‘শোনা, শ্রদ্ধা ও সংলাপের মনোভাব দেখানোর পরই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ফ্রান্স ব্যাপক ঘাটতির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে বার্নিয়ার বলেন, ‘এটিই এখন বাস্তবতা। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে আমাকে সরিয়ে দিলেও রাতারাতি এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। (আমার পর) যে-ই দায়িত্ব নিক, তাকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে।’
অনাস্থা ভোটে সাফল্য পেলেও এটিকে বিজয় হিসেবে দেখতে নারাজ সাবেক কট্টর ডানপন্থী নেত্রী মারিন লে পেন।
তার ভাষ্যে, ‘এর মাধ্যমে আমরা দেশের নাগরিকদের রক্ষা করেছি মাত্র। এটি ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।’
নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনএফপি থেকে কাউকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী করা হবে, এটিই প্রাথমিকভাবে সবাই ধরে নিয়েছিল, কিন্তু মাক্রোঁ বার্নিয়ারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন। এমন পদক্ষেপের পর তিনি বামপন্থী দলগুলোর দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।
এরপর ২০২৪ সালের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পর ৯ জুন ফ্রান্সের বর্তমান সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন মাক্রোঁ।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সের নির্বাচনে বেশি আসনে জয় বাম জোটের, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
বার্নিয়ার সরকারের পতনের ফলে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০২৫ সালের জন্য অনুমোদিত বাজেট তৈরির চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ল ফ্রান্স।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম বিএফএমটিভির খবরে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। সৌদি আরব সফর থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।