ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর অর্ন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মোখবারকে।
ইরানের শিয়া অনুসারী অন্যান্য রাজনীতিবিদদের তুলনায় অনেকটাই আড়ালে ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী মোখবার। রাইসির মৃত্যুই সামনে নিয়ে এলো তাকে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী বাধ্যতামূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ৫০ দিন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মোখবার।
রবিবার (১৯ মে) হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসির মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোখবারের নিয়োগের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
জনসম্মুখে বেশি উপস্থিতি না থাকলেও মোখবার দেশের ক্ষমতা কাঠামোতে বেশ উচ্চপদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। মোখবার প্রয়াত সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির কথা উল্লেখ করে ইংরেজিতে এক্সিকিউশন অফ ইমাম খোমেনির অর্ডার বা ইআইকেও নামে পরিচিত একটি দলের তত্ত্বাবধান করেছিলেন।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জানায়, ‘এই সংস্থাটি সর্বোচ্চ নেতা আলী খোমেনির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একটি ব্যবসায়িক দল হিসেবে শত শত কোটি ডলারের সম্পদের তত্ত্বাবধান করেছে। জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ এবং আর্থিক পরিষেবাসহ ইরানের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতে এর অংশীদারিত্ব রয়েছে।’
২০২১ সালে মোখবেরকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময় মার্কিন মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক বিরোধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নির্বাসিত ইরানিসহ শাসকগোষ্ঠীর বিরোধীদের কাছ থেকে জমি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ইআইকেও পদ্ধতিগতভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।’ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কিছু সময়ের জন্য অন্যদের সঙ্গে মোখবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
ইআইকেওর প্রধান হিসেবে মোখবার করোনা মহামারির সময় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করেছিলেন।
এর আগে মোখবার ব্যাংকিং ও টেলিকমিউনিকেশনে কাজ করতেন। তিনি দেশের মেগা-প্রকল্প এবং ব্যবসা পরিচালনার একটি প্রধান সংস্থা মোস্তাজাফান ফাউন্ডেশনেও কাজ করেছেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি মোবাইল ফোন পরিষেবা সরবরাহকারী তুর্কসেল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন’র মধ্যে ইরানের বাজারে আসার বিষয়ে আইনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত যা জানা গেল
শেষ পর্যন্ত এমটিএন ইরানের বাজারে আসে। মোখবার তুর্কসেলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এমটিএনের কাছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম চেয়েছিলেন।
মোখবার এমটিএনের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে বিশেষ অধিকারের ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, পরে যা নিয়ে আইনি অভিযোগ করেন তুর্কসেল। পরে এমটিএন একটি প্রতিবেদনে স্বীকার করে এমটিএন ইরানে প্রবেশের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে মোখবারের হাত ছিল।
ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের তেল শিল্পের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন আন্তর্জাতিক আইনে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী মোখবার।
২০২২ সাল থেকে মোখবার ইরানের এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন, যে কাউন্সিল দেশটির সর্বোচ্চ নেতাকে পরামর্শ দেয়, পাশাপাশি সংসদ এবং ইরানের সাংবিধানিক নজরদারি সংস্থা গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে।
১৯৫৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের দেজফুলে এক ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোখবার।
ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের মতে, আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি বিপ্লবী গার্ডের মেডিকেল কোরে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইউএএনআই বলেছে, ইরানের জনগণের টাকায় বানানো ইআইকেওর সঞ্চিত বিপুল সম্পদ শাসকগোষ্ঠীর অভ্যন্তরে থাকা তার মতো ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করতে ব্যবহার করেছেন মোখবার।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লাশ উদ্ধার