শিগগিরই উদ্ধারকাজ শুরু না করা হলে আন্দামান সাগরে ভাসমান ৪০০ রোহিঙ্গা মুসলমান মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।
সাধারণত বাংলাদেশের অস্বচ্ছল ও জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবির থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী এসব রোহিঙ্গা মুসলমান ইঞ্জিনের নৌকায় চড়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্ট করে।
গত বছর থেকে খাদ্য রেশনে ঘাটতি এবং শিবিরের অভ্যন্তরে সহিংসতার কারণে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ বেড়ে গেছে।
মঙ্গলবার ইউএনএইচসিআরের ব্যাংককভিত্তিক আঞ্চলিক মুখপাত্র বাবর বালোচ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, ‘এই হতাশ মানুষদের বাঁচানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ না নিলে কমপক্ষে ৪০০ শিশু, নারী ও পুরুষ নিশ্চিতভাবে মারা পড়বে।’
তিনি বলেন, নৌকাগুলো বাংলাদেশ থেকে এসেছে এবং প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সমুদ্রে ভাসছে বলে জানা গেছে।
একটি নৌকার ক্যাপ্টেনের সঙ্গে এপির কথা হয়েছে।
মান নকিম নামের ওই ক্যাপ্টেন বলেন, তার নৌকায় ১৮০ থেকে ১৯০ জন রয়েছে। তাদের কাছে খাবার ও পানি নেই এবং ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সাহায্য না পেলে তার নৌকায় থাকা সবাই মারা পড়বে বলে ভয় পাচ্ছেন তিনি।
রবিবার নকিম বলেন, নৌকাটি থাইল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল থেকে ৩২০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) দূরে ছিল।
সোমবার থাই নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, তার কাছে নৌকাগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
আঞ্চলিক মুখপাত্র বাবর বালোচ বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ার উত্তরতম প্রদেশ আচেহ থেকে প্রায় একই দূরত্বে ১৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীবাহী আরেকটি নৌকা শনিবার সুমাত্রার উপকূলে সাবাং দ্বীপে অবতরণ করেছে। নৌকাটিতে ৫৮ জন শিশু, ৪৫ জন নারী এবং ৩৬ জন পুরুষ ছিল। গত মাসে আরও শতাধিক রোহিঙ্গা আচেহ এসেছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগত নিধনের হাত থেকে বাঁচতে বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা এবং হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড গণহত্যা কি না আন্তর্জাতিক আদালত তা বিবেচনা করছে।
সমুদ্রপথে শিবির ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী কাজ পাওয়ার আশায় মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে।
কারণ থাইল্যান্ড তাদের ফিরিয়ে দেয় বা আটক করে এবং আরেক মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়াও তাদের আটকে রাখে।
বালোচ বলেন, সমুদ্রে ভাসমান নৌকা দুটিকে সহায়তা না করা হলে বিশ্ব ‘আরেকটি ট্র্যাজেডির সাক্ষী হতে পারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যেমন হয়েছিল। সেসময় এই অঞ্চলের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোর একটিতে ১৮০ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা নিখোঁজ হয়েছিল।’
সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ২২ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগের সপ্তাহে ৪৬৫জন রোহিঙ্গা শিশু নৌকায় করে ইন্দোনেশিয়ায় এসেছে এবং সমুদ্র পাড়ি দেওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৮০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এই বছর ৩ হাজার ৫৭০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্যাগ করেছে। ২০২২ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার। এই বছর ২২৫ রোহিঙ্গা অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।