ভারতের মণিপুর রাজ্যে গত সপ্তাহের দাঙ্গা ও জাতিগত সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬০ জনে পৌঁছেছে এবং কমপক্ষে ৩৫ হাজার বেসামরিক মানুষ এ ঘটনায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সোমবার রাতে সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্থনৈতিক সুবিধা ও সংরক্ষণের দাবিতে উপজাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা মৈতৈ নামক একটি অ-উপজাতীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় প্রায় ২৩০ জন আহত এবং প্রায় ১৭০০টি ঘরে আগুন দেওয়া হয়।
সিং বলেছেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরে নিরাপত্তা কর্মীদের পাহারায় কয়েক হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। রাজ্যে এখনও কারফিউ চলছে।
তিনি বলেন, সহিংসতার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের কাছ থেকে এক হাজার ৪১টি বন্দুক এবং সাত হাজার ৪৬৫০ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট করা হয়েছিল এবং কিছু ধর্মীয় স্থাপনাও পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা।
সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইন্ডিয়া টুডে নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহে চুরাচাঁদপুর এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ৫০ হাজারের বেশি কুকি এবং অন্যান্য খ্রিস্টানপ্রধান উপজাতি সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিক্ষোভের পরে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এই রাজ্যটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতৈ হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল। বিশেষ এই সুবিধার ফলে মৈতৈরা পাহাড়ি বনভূমিতে চাষ করার অধিকার, সস্তা ব্যাংক ঋণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাগত সুবিধার পাশাপাশি সরকারি চাকরির একটি নির্দিষ্ট কোটা সহ সুবিধা পাবে।
সংখ্যালঘু পাহাড়ি সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, মৈতৈ সম্প্রদায় তুলনামূলকভাবে সচ্ছল এবং তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া অন্যায্য।
অন্যদিকে, মৈতৈরা জানায় যে তাদের এই বিশেষ অধিকার প্রাপ্তির ফলে উপজাতিদের জন্য চাকরির কোটা এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো সুরক্ষিত হবে।
রাজ্যের ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ একটি উপত্যকায় বাস করে, যা রাজ্যের মোট এলাকার প্রায় ১০ শতাংশ নিয়ে গঠিত।
মৈতৈ হিন্দুদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কুকি এবং অন্যান্য উপজাতিসহ বেশিরভাগই খ্রিস্টান এবং প্রধানত পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলাগুলোতে বাস করে।
জাতিগত মুসলমানরা রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ।