থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ আলোচনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ।
পরে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি সব সময় জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই… দল ভাঙার প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, অতীতের মতো দলকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।
আরও পড়ুন: দেশে ফিরেছেন রওশন এরশাদ, জাপায় ঐক্যের ডাক
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৭৮ বছর বয়সী বিধবা রওশনও দাবি করেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান ও তার দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে তার কোনও বিরোধ নেই।
রওশন বলেন, ‘আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি এবং বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে সব সংসদ সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যদের সঙ্গে বসব। আমি নিশ্চিত, আমরা শিগগিরই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে সক্ষম হব।’
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জুর ও কাজী জাফর আহমেদের সঙ্গে যারা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি ছেড়েছেন তাদের দলে ফেরার আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় এই নেতা।
তিনি বলেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকূল সময়ে যারা আমাদের পাশে ছিলেন তাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।
রওশন বলেন, তাদের দল ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একজন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির যেকোন জোট করার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, ‘জনগণ অগ্রগতি ও শান্তির জন্য পরিবর্তন চায়, যা শুধু জাতীয় পার্টিই নিশ্চিত করতে পারে, বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে কোনো জোট করার প্রশ্নই আসে না।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি জোট করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রওশন বলেন, সময়ই বলে দেবে।
তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে রওশন বলেন, তিনি এখন ভালো আছেন, তবে এখনও তার পায়ে কিছু সমস্যা রয়েছে যার জন্য তিনি ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন।
তাকে সমর্থন করার জন্য এবং ব্যাংককে চিকিৎসাকালীন তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান রওশন।
তিনি বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনীতি, বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে, যা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সকলকে আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।’
রাহগীর আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ নামেই বেশি পরিচিত) ও তার স্ত্রী মাহিমা সাদ এবং রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন জাপা নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সুনীল শুভ রায় ও গোলাম মসিহ প্রমুখ।
৫ জুলাই রওশন ফলোআপ চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যান।
এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বর তার স্বাস্থ্যের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ২৭ জুন দেশে ফিরে আসেন এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে দেশে আট দিন অবস্থান করেন।
আগের বারের মতো বাসার পরিবর্তে এবারও তিনি বিমানবন্দর থেকে নগরীর গুলশান এলাকার ওয়েস্টিন হোটেলে থাকার জন্য যান বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
রওশন এমন এক সময়ে দেশে ফিরেছেন যখন জাতীয় পার্টি দলীয় কাউন্সিল করার জন্য তার আগের আহ্বানে বিভক্ত এবং সম্প্রতি মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠান জাপা এমপিরা।
এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দল থেকে বহিষ্কৃত জাপা’র সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১শে অক্টোবর জিএম কাদেরকে দলের বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন রওশন এরশাদ