প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সই করা প্রতিটি চুক্তি প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) সরকারি ক্রয়ের সব নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এই চুক্তিগুলো তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুসারে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে করে বন্ধ দরপত্রের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছিল। এসব তথ্য জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বক্তব্য দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু বলেন, জাতি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি দেখতে চায়।
তিনি বলেন, 'তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) কীভাবে এই চুক্তিগুলো করেছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো এই চুক্তিগুলো প্রকাশ করা।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ করেছে, একই সঙ্গে জনগণের পকেট কেটেছে।
তিনি বলেন, ‘সবাই বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করে, সবাই এই ক্ষতির শিকার। প্রকৃতপক্ষে তারা ক্ষমতাকে ব্যবসা খাতে পরিণত করেছে। তারা বুঝতে পেরেছিল কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই এ খাত থেকে দ্রুত অর্থ উপার্জন করা যাবে, কারণ বিদ্যুৎ একটা 'বাতাসের' মতো—এটা দেখা যায় না।’
টুকু বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে টুকু বলেন, 'বিদ্যুৎ খাতে গত ১৫ বছরে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জের আড়ালে লুটপাট হয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাত থেকে বিভিন্নভাবে জনগণের অর্থ পাচার করেছে, যার মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু না থাকলেও অর্থ পরিশোধ করাও রয়েছে।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'যেসব কোম্পানিতে ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়া হয়, সেগুলোর বেশির ভাগই মেশিনে ত্রুটি ছিল। এসব ত্রুটিপূর্ণ মেশিন থেকে এসব কোম্পানি অর্থ উপার্জন করত।’
ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, সামিট গ্রুপ ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, এগ্রো ইন্টারন্যাশনাল ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা এবং আরপিসিপিএল ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা পেয়েছে।
ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে গত ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে।
টুকু দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা টেকসই নয় এবং যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবার রাশিয়ার সহায়তায় বাস্তবায়িত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫০ কোটি ডলার লুটপাট করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে স্বৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না: তারেক রহমান
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটি সিন্ডিকেট স্মার্ট মিটার প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে।
টুকুর অভিযোগ, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মালিকানাধীন একটি কোম্পানি একটি সিন্ডিকেটসহ এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন।
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের দল ক্ষমতায় ফিরলে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ, আশঙ্কা বিএনপির