খুলনার এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের মুখে খুশির ঝিলিক, ধান ঘরে তুলতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক-কৃষানিরা। শান দেওয়া হচ্ছে ধান কাটার সরঞ্জামগুলোতে।
কৃষকদের ধারণা এবার খুলনা জেলায় ধান উৎপাদনে রেকর্ড হবে।
খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় নতুন ধান ঘরে তোলার জন্য বসতবাড়িতে ও মাঠে চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে সব জায়গায় ধান কাটা শুরু হবে। এ বছর বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ফসলের মাঠে সবুজের মাঝে সোনালি ধানের হাসি কৃষকের মনে আনন্দ বয়ে আনছে।
দুর্যোগের মধ্য দিয়েও এ বছর মাঠে বাম্পার ফলন ফলেছে। সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমন আবাদ করেছিলেন তারা।থধার কাটা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আশানুরূপ ফসল পাবেন।
আরও পড়ুন:
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা থেকে সরকারিভাবে ৫১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৫ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও দাকোপে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
কয়রা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছিল।
দাকোপ উপজেলায় ১৯ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধানের ভালো ফলনে খুশি চাষিরা
খুলনার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, খুলনা বিভাগে এবার ফলন ভালো। আশা করা যায় এবার আমনের ফলন পুরোপুরিভাবে পাওয়া যাবে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে সোনালি ধানের সমারোহ। রোদ আর হিমেল বাতাসে ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্নের ধান। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ বর্ণ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করার অপেক্ষায়। আর মাত্র ক’দিনের মধ্যেই কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তোলার উপযোগী হবে।
আংটি হারা পশ্চিম বিলের কৃষক শশধর সানা বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। বাম্পার ফসল ফলেছে। বিঘাপ্রতি আনুমানিক ৩০ মণের মতো ফসল হবে বলে ধারণা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ধান ঘরে তোলার সব প্রস্তুতি নিয়েছি। শিগগিরই নতুন ধান থেকে চাল তৈরি করে পিঠা তৈরি করার আসর বসবে পরিবারের সদস্যদের মাঝে।
সাতালিয়া পূর্ব বিলের কৃষক মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি এ বছর ২২ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি ফসল অনেক ভালো হয়েছে এ সপ্তাহে কাটা শুরু করব। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ পাব বলে আমা করছি।’
কয়রা সদর ইউনিয়নের কৃষক মাস্টার আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। ফলন যথেষ্ট ভালো হয়েছে।’
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘কয়রার কৃষক ভাইয়েরা এবার আমনের বাম্পার ফলন আশা করছেন। আমনের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়লে অনেকের দ্বিতীয়বার বীজতলা করার প্রয়োজন পড়ে। উপজেলা কৃষি অফিস প্রণোদনার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ সংগ্রহ করে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে। সুষম সার প্রয়োগ, উন্নত জাতের আবাদ সর্বপরি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মতৎপরতায় আমনে প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফলন পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় রোপা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা