ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেছে বেসরকারি সংস্থা পাথওয়ে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর মিরপুরে পাথওয়ের প্রধান কার্যালয়ে ১০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে ১০টি মেশিন বিতরণ করে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ পরিষদের উপ-পরিচালক ভবেন্দ্র নাথ বাড়ই ও নোয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম-এনজেএফ ঢাকার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম ফয়েজ।
অনুষ্ঠানে বক্তৃব্যে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য চাঁদাবাজি নয়, স্থায়ী কর্মসংস্থান প্রয়োজন। তাদের মূলধারায় আনতে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য চাঁদাবাজি বা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। পাথওয়ে তৃতীয় লিঙ্গকে অপরাধ থেকে কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।’ তিনি পাথওয়েকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশ্বাস দেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, পৃথক লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে হিজড়ারা মূলধারার জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। তারা পরিবারের একটি সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাছাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়াও পারিবারিক সম্পত্তিতে তাদের কোনো অংশ দেয়া হয় না।
পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজের সকল ক্ষেত্রে সর্বদা অবজ্ঞা ও অবহেলা এবং বিভিন্ন রকমের অপমানের শিকার হয়। তারা খুবই অসহায়। তাই তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে সবসময় তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, তারা আমাদের সন্তানের মতো। তাই তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে আমাদের অন্য শিশুদের মতো বড় করা উচিত। তাদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে। তবেই একদিন এই অবহেলিত গোষ্ঠী ধীরে ধীরে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসবে। জৈবিক চাহিদার বাইরে, ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সব ধরনের ক্ষমতা আছে। কিন্তু তারা কেন পিছিয়ে?, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘মিরপুরে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের জীবনযাপন দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করি, তারা তাদের জীবনের অজানা গল্পগুলো আমার সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না।তারা বলছে এভাবে আর বাঁচতে চান না? নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান তারা। এমনি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। তাই তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পাথওয়ে বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের একজন সদস্য তাদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।