জ্বালানি তেল
সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর উপায় বের করছে: প্রধানমন্ত্রী
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার উপায় নিয়ে ভাবছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এনইসিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নিয়মিত বৈঠকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনা এখন গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি সরকারের ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষকে বিশেষ পরিবার কার্ড দেবো, যার মাধ্যমে তারা ন্যায্য মূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে সক্ষম হবে। আমরা এই পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন-মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীকে ভোগান্তি থেকে বাঁচাতে সরকারকে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন: ডলার সাশ্রয়ে টেলিটকের ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প স্থগিত
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, নিম্ন-আয়ের মানুষ, মধ্যম-আয়ের মানুষ এবং সীমাবদ্ধ আয়কারী মানুষ মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা তা বুঝতে পারি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি জনগণের জন্য তার রাজনীতি করেন এবং যখনই জনগণের কষ্ট হয়, তিনিও কষ্ট অনুভব করেন।
প্রধানমন্ত্রী আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ক্রয় করার ক্ষমতা ছিল, কিন্তু দাম আমাদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখনই এগিয়ে যেতে শুরু করেছে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছে; তখনই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে এই ধরনের অনিশ্চয়তা আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন: আ.লীগের প্রতি জনগণের আস্থা সরকারের সাফল্যের চাবিকাঠি: প্রধানমন্ত্রী
তরুণদের উদ্যোক্তা হতে দক্ষতা অর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকার অনেক এলাকায় আজ তিন ঘণ্টা করে লোডশেডিং
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। তালিকা অনুযায়ী ডিপিডিসি ও ডেসকোর আওতাধীন অধিকাংশ এলাকায় আজ তিন ঘণ্টা করে লোডশেডিং থাকবে।
ডেসকো এলাকার মধ্যে রয়েছে উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, বসুন্ধরা, বনানী, বাড্ডা, উত্তরা খান, দক্ষিণখান, আগারগাঁও, মিরপুর, কাফরুল, কল্যাণপুর, খিলক্ষেত, পল্লবী, রূপনগর ও টঙ্গী।
তবে ডিপিডিসির আওতাধীন কিছু এলাকার গ্রাহকরা দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকবেন।
ডিপিডিসি জানায়, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে লোডশেডিং কমবেশি হতে পারে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানী ও আশপাশে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকবে। তবে এই তালিকার বাইরেও ডেসকোর আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
লোডশেডিংয়ের সময়সূচী DPDC এবং Desco ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে সারা বাংলাদেশে দৈনিক এক ঘণ্টা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু করে।
পড়ুন: জ্বালানি সংকটের পেছনে রয়েছে দুর্নীতি, লুটপাট, আত্মঘাতী চুক্তি: বিএনপি
এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা, মোমেনের মন্তব্য নিয়ে বিএনপি
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।
নজিরবিহীন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভোলা জেলা শাখার সভাপতি নূরে আলম ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।
সমাবেশে ফখরুল বলেন, চলমান লোডশেডিং এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে সহযোগী সংগঠনের দুই নেতাকে হত্যার বিরুদ্ধে দলের প্রতিবাদ করাও তাদের কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: আর কান্না নয়, জেগে উঠুন: কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
ফখরুল বলেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি।
এছাড়া, শুক্রবার দলের সকল মহানগর ও জেলা ইউনিট সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর পতন নিশ্চিত করতে তাদের দল আগামী দিনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে আসবে।
ফখরুল রাজধানীর শাহবাগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার কয়েকটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ওপর পুলিশের হামলার জন্য সরকারের তীব্র নিন্দা করেন।
তিনি বলেন, জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের কাছে এখন দমনমূলক কর্মকাণ্ড ও হত্যার বিকল্প নেই। ‘কিন্তু তাদের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। তুমুল আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।’
উল্লেখ্য, সরকার শুক্রবার রাতে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৪২.৫ শতাংশ, ৫১.৭ শতাংশ এবং ৫১ শতাংশ বাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যাবে না: ফখরুল
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা: বিএনপি
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা জাপার
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরকারের ‘জনবিরোধী’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।
রবিবার দলটির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের বৈঠকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করবে জাপা যা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
এছাড়া মঙ্গলবার সারাদেশে দলের সকল বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শাখা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল
শুক্রবার রাতে ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৫১ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমানে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে জ্যৈষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু উপস্থিত ছিলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি: বিপাকে ভোলার লক্ষাধিক জেলে
মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় ইলিশ সংকট, তার ওপর হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার লক্ষাধিক জেলে।
শুক্রবার রাতে তেলের দাম বৃদ্ধি ঘোষণার পর শনিবার থেকেই অনেক জেলেই মাছ ধরতে যায়নি।
সদরের তুলাতুলি মাছঘাট এলাকায় দেখা গেছে, অনেক জেলে নদী থেকে নৌকা, ট্রলার ও জাল তুলে নিয়েছে। অনেকে আবার ঘাটে অলস সময় পার করছেন। এতে করে মাছের আড়ৎগুলোতে অনেকটা জেলে শূন্য ছিল।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ
জেলেরা জানান, এমনিতেই নদীতে দিন রাত জাল ফেলেও তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যায় না। দুই-চারটি পাওয়া গেলে তা দিয়ে খরচের টাকাও উঠে না। তার ওপর এখন তেলের দাম বৃদ্ধিতে তাদের খরচ আরও বেড়ে গেল। তাই তারা নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
জেলে আমিনুল জানান, শুক্রবার বিকালে ৮৫০ টাকার ১০ লিটার ডিজেল কিনে নদীতে গেছেন। ফিরে এসে মাত্র ৫০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। পরদিন সকালে তেলের জন্য গেলে প্রতি লিটার তেল ১১৫ টাকা চাচ্ছে দেখে কন্টেইনার নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এই পরিস্থিতি কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
জেলেরা জানান, তেল ও খাবারসহ কয়েক হাজার টাকার মালামাল নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হয়। গুটি কয়েক ইলিশ পাওয়া গেলেও তা দিয়ে খরচের টাকাও ওঠে না।
আড়তদার মো. ইউনুছ জানান, তার আড়তে ১২টি জেলে ট্রলার মাছ বিক্রি করে। নদীতে মাছ কম থাকায় আগে থেকেই অর্ধেক ট্রলার নদীতে যায় না। এর মধ্যে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে একটি ট্রলারও নদীতে যায়নি।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: গণপরিবহন বন্ধে দেশজুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
ভোলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার। এর মধ্যে সাগরে মাছ শিকারে যায় ৬৪ হাজার জেলে। তবে নিবন্ধিন ছাড়াও আরও প্রায় কয়েক হাজার জেলে রয়েছে।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে জেলেদের ওপর প্রভাব পড়বেই। কারণ তেলের ওপর নির্ভর করেই জেলেদের নদীতে যেতে হয়। তবে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে মাছের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: গণপরিবহন বন্ধে দেশজুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর শনিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অধিকাংশ বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের বাস স্টপেজে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে এবং যারা বাসে চড়তে পেরেছে তাদের কাছ থেকে বাসের কর্মীরা অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খুলনায় দীর্ঘ রুটের অধিকাংশ যাত্রীকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফিরতে দেখা গেছে। বাসের কর্মীরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়ার পরিমাণ আসল ভাড়া থেকে অনেক বেশি।
জেলার পরিবহন মালিকরা জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সীমিত বাস চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ বাসস্ট্যান্ডের কয়েকজন যাত্রীর।
সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষারত রিপা বেগম বলেন, সরকারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তার জানা নেই। একজন বাসচালক ঝিনাইদহ-খুলনা রুটে বিদ্যমান ১৮০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা আদায় করায় তিনি অবাক হয়ে যান।
সুন্দরবন পরিবহনের লাইনম্যান সুজিত জানান, সরকারের ঘোষণার পর গতকাল রাত থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন তারা।
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের মহাব্যবস্থাপক গোলাম সামদানী সাকিব জানান, তারা এসি ও নন-এসি বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে নিচ্ছেন।
কিছু যাত্রীর অভিযোগ, এই করোনা মহামারিতে সরকারের জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনৈতিক।
দিনাজপুরে শনিবার সিএনজিচালিত কোচের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বাসের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগের দামে গাড়ির জ্বালানি পেতে শুক্রবার রাত ১২টার আগে জেলার পেট্রোল পাম্পগুলোতে মানুষ ভিড় করেছে। কিন্তু নবাবগঞ্জ ও চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েকটি জ্বালানি কেন্দ্র পুরনো দামে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে, মোটরসাইকেল চালকরা রাস্তা ব্যারিকেড করায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে তারা পুরানো দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
দিনাজপুর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী জানান, বিআরটিএ ও জেলা পরিবহন কমিটির সিদ্ধান্তের পর তারা বাস ভাড়া বাড়াবেন।
রাঙ্গামাটিতে সরকারের জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম বাস মালিক সমিতি।
এদিকে, জেলায় কয়েকটি সিএনজিচালিত গণপরিবহন চলাচল করছে এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। বহু মানুষ ও শিক্ষার্থী পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছে।
রাঙামাটি জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু বলেন, পরিবহন ভাড়ার বিষয়ে সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত দূর-দূরান্তের সব বাস চলাচল করবে না।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
বাগেরহাটে শুক্রবার রাত থেকেই জ্বালানি স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন মানুষ।
জ্বালানির ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণার পর অতিরিক্ত জ্বালানি বিক্রি করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি স্টেশনগুলোতে সাময়িক জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে।
শুক্রবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি বাড়িয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ থেকে ৮০ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলস্বরূপ, বাসের ভাড়া অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রায় ২৭ শতাংশ এবং লঞ্চের ভাড়া ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: বাড়ছে গণপরিবহন ও লঞ্চের ভাড়া
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা: বিএনপি
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আরও বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ‘গতরাতে (শুক্রবার রাত) জ্বালানি তেলের মূল্য একধাপে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ছাড়া কিছুই নয়।’
শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে গত ৩১ জুলাই পুলিশের গুলিতে ভোলা জেলা শাখার ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানানো হয়।
শনিবার সড়কে গণপরিবহনের কমতির বিষয়টি উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে এবং সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কারণ যাতায়াতের ভাড়া বাড়বে; এছাড়া চাল, ডাল, লবণ ও ভোজ্য তেলসহ সকল প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দেশে এর প্রভাব পড়বে।’
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে জনগণকে সরকার ভুল তথ্য দিয়েছে। কিন্তু রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তারা (সরকার) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে।
তিনি বলেন, ঋণ মঞ্জুর করার জন্য আইএমএফ কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যেখানে বিভিন্ন পণ্য ও খাতে সরকারের ভর্তুকি উঠিয়ে নেয়ার কথাও আছে। তাই সরকার এখন এসব করছে (লোন পাওয়ার জন্য)।
এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে তা অসহনীয় মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষকে মারাত্মক ভোগান্তিতে ফেলেছে। কাঁচামরিচের দাম এখন ৩০০ টাকা। এধরনের নিপীড়নে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সরকার ‘অতিকায় দানব’ এ পরিণত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই অত্যাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা দেশপ্রেমিকদের এখন একমাত্র দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: আর কান্না নয়, জেগে উঠুন: কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল
লোডশেডিংয়ের পেছনে সরকারের ‘মেগা’ দুর্নীতি, লুটপাট: বিএনপি
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: রাজধানীতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
সরকার জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে শনিবার রাজধানীতে তীব্র পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এদিন সকালে অধিকাংশ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
শুক্রবার রাতে সরকার ডিজেল, অকটেন ও পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ৪২.৫ শতাংশ, ৫১.৭ শতাংশ ও ৫১ শতাংশ বাড়িয়েছে।
বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রোল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের এই ঘোষণার পর পরিবহন মালিকরা রাজধানীতে গণপরিবহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
গুলশান-১ এ অবস্থিত একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত মাসুমা নাসরিন রিমি নামের এক নারী মিরপুর-১২ এর পূরবী বাসস্ট্যান্ডের সামনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে পারেননি। অবশেষে তিনি অন্য যাত্রীদের সঙ্গে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকায় যান।
রিমি বলেন, ‘আমি যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছিলাম, তা মহাখালী ওয়্যারলেস গেট পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বেশিদূর যেতে পারেনি। অবশেষে, রিকশা নিয়ে কিছুদূর এবং হেঁটে কিছুদূর গিয়ে অফিসে পৌঁছলাম।’
বৈশাখী পরিবহনের কর্মচারী হাফিজুর রহমান জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা মহাখালী-গুলশান-১ সড়ক অবরোধ করে।
হাফিজুর বলেন, ‘জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, তবে আমরা যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারি না। কারণ আমরা এখনও এই বিষয়ে কোনও নির্দেশনা পাইনি, যা অগ্রহণযোগ্য। আমরা যাত্রীদের সঙ্গে বিতণ্ডা এড়াতে আমাদের বাস চালাচ্ছি না।’
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ
শনিবার সরকারি ছুটির দিন হলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণত এই দিনে তাদের অফিস খোলা রাখে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্টপেজে প্রাইভেট সার্ভিসধারীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
অনেক অফিসগামীকে বাস না পেয়ে নিজ নিজ অফিসের দিকে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে রবিবার কাজের দিন হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়বে।
চট্টগ্রামে গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
দেশে সকল প্রকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বাসসহ গণপরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতি।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে বিষয়টি জানান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন।
তিনি বলেন,‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা চট্টগ্রামের সকল বাস চালকদের অনুরোধ করেছি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এরপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাবো।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ হওয়ায় শনিবার থেকে নগরে বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাস মালিকদের সংগঠন। এর ফলে বাসসহ সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে চট্টগ্রামের মানুষ।
আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি: চট্টগ্রামে বাস চলাচল বন্ধ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: বাড়ছে গণপরিবহন ও লঞ্চের ভাড়া
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। শনিবার (৬ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে পরিবর্তিত মূল্য কার্যকর হবে।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা দাম হবে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, অকটেনের দাম হবে প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম হবে ১৩০ টাকা।
পড়ুন: সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ২০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বিল বাঁচানো সম্ভব: নসরুল হামিদ
কয়লার প্রথম চালান রামপালে, অক্টোবরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু