লৌহজং
চোর সন্দেহে অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১০
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে জুলহাস হাওলাদার (৩৫) নামক এক অটোরিকশা চালককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের পদ্মা সেতুর রেলওয়ের ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের নিচে এই ঘটনায় পদ্মা সেতুর রেললিঙ্ক প্রকল্পের ১০ প্রহরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত জুলহাস হাওলাদার লৌহজং উপজেলার কুমারভোগে পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা ছিল।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, সেলিম, রাব্বি, তপু, আল-আমিন, আরিফ, আব্দুল মান্নান, ইসরাফিল। বাকি তিনজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে লৌহজং থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, জুলহাসকে পদ্মা সেতুর রেললিঙ্ক প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরা চুরির অভিযোগে রড দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত ১৫/১৮ জনের একটি নিরাপত্তাকর্মীর দল জুলহাসকে চুরির অভিযোগে হাত-পা বেঁধে রড দিয়ে এলোপাতারি মারধোর করে। পরে নিরাপত্তাকর্মীর সিফট ম্যানেজার মো. সেলিম জুলহাসের বাসায় খবর দিলে ছুটে আসে স্বজনরা। এসে দেখে হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে জুলহাস। এ অবস্থা দেখে জুলহাসকে চন্দ্রেরবাড়ি বাজারে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং তাঁরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে জুলহাসকে ইয়াসমিন দেলোয়ার হাসপাতালে নিলে সেখানেও চিকিৎসক পায়নি তারা। পরে শ্রীনগর সরকারি হাসপাতাল ষোলঘরে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জুলহাসকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা সকলেই পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সে সাথে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রেখেছে। এ সব তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান ও লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন।
আরও পড়ুন: দেবিদ্বারে কিশোরীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৪
মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা কর্মীরা চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে অটোরিকশা চালক জুলহাসকে। এই ঘটনায় পদ্মা সেতুর রেললিঙ্ক প্রকল্পের ১০জন প্রহরীকে আটক করা হয়েছে। আরও ২/৩ জন এর সাথে যুক্ত আছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। গ্রেপ্তার হওয়ারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা চোর সন্দেহে জুলহাসকে পিটিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি আসলে এখানে চুরির কোন বিষয় আছে কিনা নাকি অন্য কোন বিষয় আছে। আমরা প্রত্যেকটা বিষয় খতিয়ে দেখছি।জিজ্ঞেসাবাদ অব্যাহত আছে। আমরা আশা করছি যে কারণেই এই হত্যাকান্ড ঘটুক না কেন আমরা সেটা বের করতে পারবো এবং যারা সত্যিকার দোষী তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহতের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, ভোর রাত সাড়ে ৪টায় অটোরিকশা নিয়ে বের হয় জুলহাস। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার মোবাইল থেকে ফোন আসে আমার বড় ভাসুরের কাছে। ফোনে বলা হয় জুলহাসের অবস্থা অনেক খারাপ তারে নিয়ে যান। খবর শুনে আমরা গিয়ে দেখি রক্ত মাখা অবস্থায় জুলহাস মাটিতে পড়ে আছে। আমরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় লৌহজংয়ে কুমারভোগ পুর্নবাসন কেন্দ্রসহ মাওয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা সেতুর চারপাশে সারাক্ষণ সেনাবাহিনী থাকে তাহলে কিভাবে এটা হলো। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন।
আরও পড়ুন: পাবনায় বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা, নদী থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় মোবাইল চুরির অভিযোগে দরবার শরীফে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
লৌহজংয়ে কোনো উপসর্গ ছাড়াই নারীর করোনা পজেটিভ
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কোভিড-১৯ রোগের কোনো উপসর্গ (জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট) ছাড়াই এক নারীর করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।